মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে মো: সালামত (৬২) এসেছেন ভ্যান গাড়িতে বেধে তার গরুর বাছুর নিয়ে চিকিৎসার জন্য। তার গরুর বাছুরের তাপমাত্রা অনেক বেশি ও চামড়ার নিচে ফুলে গুটির মতো দেখা দিয়েছে। সে জানালেন তার বাড়ির আশে পাশের প্রায় সকল কৃষকের গরুর এ রোগ দেখা দিয়েছে। কয়েকটি গরু মারাও গেছে।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরুর শরীরে লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কৃষকের গরুর মাঝে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের সকল গ্রামেই লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে গরু। গরুর এ রোগ উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতি মধ্যে গত দুই মাসে মারা গেছে প্রায় শতাধিক গরু। পল্লী পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসা ও অর্থ অপচয়ের শিকার হলেও মিলছে না কোনো সমাধান।
প্রতিদিনই রোগে আক্রান্ত হওয়া গরু নিয়ে কৃষক ও খামারিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অনেকে গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে বর্তমানে গরুর শরীরে লাম্পি স্কিন রোগ এর প্রার্দূভাব কিছুটা কমে এসেছে। কৃষকদেরকে আক্রান্ত গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর প্রথমেই জ্বর হয়, পরে চামড়ার নিচে ফুলে গুটির মতো হয়। একপর্যায়ে সেই গুটি গলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষত থেকেই গরু মারা যায়।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি এলাকা গিয়ে দেখা যায়, গরুর চামড়ার নিচে ছোট ছোট গুটি। রোদ ও গরমে গরু হাসফাঁস করছে। আক্রান্ত গরু খাবার খাচ্ছে খুব কম। গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ কৃষকের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অনেককে কবিরাজ ও পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছে। আক্রান্ত গরুর মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে চিকিৎসকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। নিম্নমানের ওষুধ দিয়ে খামারিদের সঙ্গে করছে প্রতারণা। অনেক ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার শিকার হতে হচ্ছে।
উপজেলার হরগজ পূর্বনগর গ্রামের খালেকুজ্জামান জানায়, তার গ্রামের প্রায় প্রতিটি কৃষকের গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। এ রোগে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ টি গরু মারা গেছে হরগজে। তার নিজের গরুও এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গত এক মাস ধরে তার গরুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গরুর চিকিৎসার জন্য প্রায় ১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে তবু গরু পুরোপুরি সুস্থ্য হয় নি।
উপজেলার রৌহা গ্রামের গরুর ব্যবসায়ী মো: শহিদুর ইসলাম বলেন, তার গ্রামের কালুর একটি গরু মারা গেছে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে। ছোট গরু বা বাছুর আক্রান্ত হচ্ছে বেশি এ রোগে। উপজেলা জুরে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। বর্তমানে এ রোগের কারনে গরুর দাম কমে গেছে।
বড় পয়লা গ্রামের বিশা মিয়া জানায়, তার নিজের একটি গরু আক্রান্ত হয়েছে। তার প্রতিবেশি মতিয়ার রহমান এর ৬টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষ করে গরুর বাছুর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইমরান হোসেন বলেন, এ রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা নেই। উপজেলায় বেশ কয়েকটি গরু মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। গরু মারা যাওয়ার কারন হচ্ছে আক্রান্ত গরুগুলোকে পল্লী চিকিৎসকরা ভূল চিকিৎসা দিচ্ছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আক্রান্ত গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য ( ০)