• বিশেষ প্রতিবেদন

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনামূল্যে ধানের চারা দিবে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৯:০৬:২১

ছবিঃ সিএনআই

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ: বন্যা পরবর্তী খাদ্য সংকট মোকাবিলার করার লক্ষ্যে ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে নাবী আমন ধানের চারা বিতরণের উদ্যোগে “লেইট আমন” প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি)শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে বাকৃবিতে দুই দিনে আড়াই একর জমিতে ৮০০ কেজি বীজ বপন করা হয়েছে।

রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) বীজ বপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান।

অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, গত ২৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের গবেষণা মাঠের এক একর জমিতে ও ৩১ আগস্ট খামার ব্যবস্থাপনা শাখার দেড় একর জমিতে ধানের বীজ বপন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দেশের আকস্মিক বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে রোপা আমন ধানের চারা এবং বীজতলা। কিছুদিন পর বন্যার পানি নেমে গেলেও চারা তৈরি করতে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। এতে আমন ধান লাগানোর সময় পার হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। আবার বন্যার কারণে চারা তৈরি করতে না পারলে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিবে। তাই খাদ্য সংকটের কথা মাথায় রেখে আমাদের শিক্ষার্থীরা বন্যা পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ধানের চারা দিয়ে সহায়তা করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বাকৃবির এই অধ্যাপক আরো বলেন, বর্তমান বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোতে সচরাচর বন্যা না হওয়ায় কৃষকেরা বন্যা সহনশীল ধানের জাতগুলো চাষ করেন না। শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ধানের চারা দিয়ে সহায়তা করলে ফলন কিছুটা কম হলেও ক্ষতির মাত্রা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। বিনা-১৭ ধানটি স্বল্প মেয়াদী হওয়ায় কৃষকদের আগত রবি মৌসুম পর্যন্ত বিনা চাষাবাদে জমি ফেলে রাখতে হবে না।

তিনি যোগ করেন, চারার দেয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি উপকরণ, সার, কীটনাশক বিতরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা আমরা তৈরি করছি তালিকা অনুযায়ী তাদের সাহায্য করা হবে। এছাড়া পরবর্তীতে কৃষকদের মাঝে শাক সবজির বীজ বিতরণের পরিকল্পনাও রয়েছে।  

শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে সফল করতে বাকৃবি এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বীজ কোম্পানি ও কৃষি উদ্যোক্তারা একত্র হয়ে 'অ্যাগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বিডি' গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানা যায়।

লেট আমন প্রকল্পে বাকৃবিতে ৫ একর, নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ১ একর, চট্রগ্রামের হাট হাজারীতে ৪ একর এবং লক্ষীপুরে ২ একরসহ মোট ১২ একর জমিতে বীজ বপন করে ১০০০ কৃষককে বিনামূল্যে চারা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ১২ একর জমিতে উৎপাদিত চারা দিয়ে সর্বনিম্ন ৭৬০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করা যাবে।

১৮ থেকে ২০ দিন পর ধানের চারা গজাবে বলে আশাবাদী শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষার্থীরা বন্যা কবলিত এলাকার কৃষকদের কাছে বিনামূল্যে সেইসব চারা পৌঁছে দিবেন।

অ্যাগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বিডি সংগঠনটির সূত্রে জানা যায়, বায়ার বাংলাদেশ দুই লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা সমমূল্যের ৫০০ কেজি ধানী গোল্ড হাইব্রিড জাতের বীজ এবং বাকৃবির ৯৬-৯৭ সেশনের শিক্ষার্থীদের সংগঠন 'কৃষিবিদ ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটি'-এর পক্ষ থেকে লেট আমন প্রকল্পে দুই লক্ষ টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছে।

এছাড়া প্রকল্প সফল করতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ময়মনসিংহ শাখা এক টন, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) চাপাইনবাবাগঞ্জ শাখা থেকে ১৫০ কেজি বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

লেট আমন প্রকল্পে কাজ করা শিক্ষার্থী বকুল আলী বলেন, কৃষির সাথে, বাকৃবির ৫ একর, নোবিপ্রবিতে ১ একর, চট্রগ্রামের হাট হাজারিতে ৪ একর ও লক্ষীপুরে ২ একরসহ মোট ১২ একর জমিতে নাবি আমন ধানের চারা উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা। উৎপাদিত চারা গুলো আমরা বন্যাকবলিত সহস্রাধিক কৃষকদের মাঝে বিতরণ করব। যারা আমাদের অর্থনৈতিকভাবে ও শ্রম দিয়ে সাহায্য করেছেন তাদের অ্যাগ্রি স্টুডেন্ট'স অ্যালায়েন্স বিডি’র পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।

প্রকল্পে কাজ করা আরেক শিক্ষার্থী জান্নাতুল ইসলাম জ্যোতি বলেন, একজন কৃষিবিদের প্রধান দায়িত্ব বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখা ও কৃষকদের পাশে থাকা। যেহেতু আমন মৌসুমের বীজ বপনের সময় প্রায় শেষের দিকে এবং বন্যাকবলিত এলাকাসমূহে এই মুহূর্তে বীজ বপন সম্ভব নয় এজন্যই লেইট আমন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে যা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পাশাপাশি কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখবে।আমি একজন ভবিষ্যৎ কৃষিবিদ হিসেবে আমার দায়িত্ববোধ ও মানবিকতা থেকে সহায়সম্বলহীন  কৃষকের পাশে দাড়াতেই এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়েছি।

নেত্রকোনার মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুখলেছুর রহমান বলেন, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে আমরা চারাগুলো বিতরণ করবো। আশা করছি আমরা প্রায় ১০০০ কৃষককে চারা বিতরণের মাধ্যমে সহায়তা করতে পারব। প্রতি কৃষককে আমরা প্রায় এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করার জন্য চারা বিতরণ করব।

মুখলেছুর রহমান আরো বলেন, বাকৃবির শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ এবং বিভিন্ন রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর গবেষকরা বিনা ১৭ এবং হাইব্রিড জাত ধানী গোল্ডের চারা তৈরি করে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন্। কৃষকরা এই বীজের চারাগুলো বপন করলে শতভাগ ফলন না পেলেও ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ফলন পাবে বলে আমরা আশাবাদী। যেমন বিনা ১৭ জাতটি মাত্র ১২০ দিনের মধ্যে ফলন দেয় এবং এটি গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতকাল যে কোনো সময় ফলন দিতে পারে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo