রংপুর ব্যুরোঃ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। পাকিস্তানি শোষণ-শাসন ও পরাধীনতার শিকল ভেঙে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের ৫৩ বছর পূর্ণতা পেল।যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে।মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করছে জাতি।ফুলে ফুলে ভরে উঠছে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ।
একাত্তরের চেতনা ও চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রেখে নূতন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে এবার বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে।ফুলেল শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধাহতদের পাশাপাশি ছাত্র-জনতার গণ- অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণ করছে দেশবাসী।রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিজয় দিবসের বিভিন্ন কমসুচির আয়োজন করছেন।
বিভাগীয় নগরী রংপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে।ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়।এরপর রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এ সময় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সুসজ্জিত দল শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে।
শ্রদ্ধা নিবেদন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলাম,বিভাগীয় প্রশাসন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম,প্রশাসন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল এবং পুলিশ সুপার শরীফ আহমেদ,জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। এর পরপরই জেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর,সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর সকাল ৯টায় রংপুর সার্কিট হাউসে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে উদ্বোধন করা হয় দিনব্যাপী বিজয় মেলার।পরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অতিথি ছিলেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের স্বজন ও অতিথিরা বলেন, মহান বিজয় দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। একাত্তরের রণাঙ্গনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস লড়াই-সংগ্রাম করে। চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের সঙ্গে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি।মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সব শহীদ, সম্ভ্রম হারানো মা-বোন ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যাদের আত্মত্যাগে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের অভ্যুদয় ঘটেছে।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে সমুন্নত রেখে স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রস্তুত থাকতে তারুণ্যের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এদিকে বিজয় দিবসে রংপুরে বিজয় র্যালি ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে রংপুর জেলা ও মহানগর।এতে দলটির সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের পাশাপাশি নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও বিজয় র্যালি করেন।
এদিকে মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাতে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষজন।
রোববার ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ জাসদ, বাসসসহ সাংবাদিক সংগঠন প্রেসক্লাব,রিপোর্টার্স ক্লাব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানুষজন।
দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল দুপুরে বিশেষ মোনাজাত। হাসপাতাল, জেলখানা ও সরকারি শিশু পরিবারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা।
এ ছাড়াও জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিজয় দিবসের পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
মন্তব্য ( ০)