• বিশেষ প্রতিবেদন

ভারী বর্ষণে টেকনাফের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত, তলিয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার লবণ 

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২০ জুন, ২০২৪ ১৩:২৯:৫৪

ছবিঃ সিএনআই

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ  কক্সবাজারের টেকনাফে ভারী বর্ষণে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কম হলেও ১০ হাজার পরিবার বন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

মঙ্গলবার (১৯ জুন) রাত ৯ টার পর থেকে কক্সবাজার জেলায় ভারী থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কক্সবাজার শহরে অবস্থিত কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপ-সহকারি পরিচালক তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা ১২ টা থেকে বুধবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজারে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।

টেকনাফে শুধুমাত্র ৬ ঘন্টায় ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড এর তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, বুধবার সকাল ৬ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত এই ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৮ গ্রাম, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২ গ্রাম, টেকনাফ পৌরসভার ৭ গ্রাম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৬ গ্রাম, সাবরাং ইউনিয়নের ৭ গ্রাম, বাহারছড়া ইউনিয়নের ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। এতে কমপক্ষে ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশংকা করছেন তারা। ভারী বর্ষণে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে শুধু ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। 

কয়েকদিন আগে লবণ মাঠ থেকে উঠে আসা চাষী ও ব্যবসায়ীদের গর্তে জমা রাখা এসব লবণ মুহুর্তে পানির সাথে তলিয়ে যায়। 

রঙ্গিখালীর লবণ চাষী বেলাল উদ্দিন, তালোয়ারী ও উম্মত আলী বলেন, মাঠের সাথে বিশাল গর্ত করে রাখা  লবণের স্তুপ পানির সাথে মিশে যায়। এতে লাখ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

লবণ ব্যবসায়ী সরওয়ার কামাল, লুৎফুর রহমান ও হোসাইন মো: আনিম জানান, হঠাৎ ভারী বর্ষণে কোটি কোটি টাকার লবণ ভেসে গেছে। এখনো চাষীদের অনেক হিসাব বাকি আছে। স্বপ্ন গুলো চোখের সামনে চলে যায়। এ ক্ষতি কখনো পুরণ হবেনা। 

হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ১২ গ্রামের ৪ হাজার বেশি পরিবার পানি বন্দি রয়েছে। এসব গ্রাম হলো- জালিয়াপাড়া, সাইটপাড়া, ফুলের ডেইল, আলী আকবর পাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, আলীখালী, চৌধুরী পাড়া, পূর্ব পানখালী, মৌলভীবাজার লামার পাড়া, ওয়াব্রাং, সুলিশপাড়া, পূর্ব সিকদার পাড়া। এসব গ্রামের চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি। 

টেকনাফ পৌরসভার কলেজপাড়া, শীলবুনিয়া পাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকে পাড়া প্লাবিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, এই ৭ গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি। পানিতে ডুবে আছে টেকনাফ কলেজ সহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। পৌরসভার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু ঘরবাড়িসহ চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া উক্ত এলাকায় মাছের ঘের সহ লবণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, সদরের ৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এগুলো হল, মহেশখালীয়াপাড়া, তুলাতুলি, লেঙ্গুরবিল, খোনকারপাড়া, মাঠপাড়া, রাজারছড়া।

হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানিয়েছেন, লম্বাবিল, উলুবনিয়া, আমতলি, মিনাবাজার, উনচিপ্রাং, কানজরপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, রইক্ষ্যং গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে সাড়ে ৩ শত পরিবার সব চেয়ে বেশি প্লাবিত রয়েছে। এর মধ্যে উনচিপ্রাং এলাকার ১টি রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বসতবাড়িতে ১ ফুট পানি উঠে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘ভারী বর্ষণে ফলে কিছু গ্রামে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। পাশাপাশি অতিভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের অন্যত্রে সরে যেতে বলা হচ্ছে। এজন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo