ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ পারিবারিক কলহের জের ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে স্বামীকে হত্যা করে নয় টুকরা করে সেফটি ট্যাঙ্কিতে লুকিয়ে রাখার চারদিন পর লাশ উদ্ধার করেছে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা পুলিশ। এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নিহতের প্রথম স্ত্রীর ছেলে লুৎফুর রহমান রুবেল বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনা বেগম, তার মেয়ে লাকীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২ অক্টোবর) আদালতের মাধ্যমে মোমেনা ও তার মেয়ে লাকীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে ঘটনার সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসাইন ও বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন জানান, শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিলেন অরুন মিয়া।
নিহতের বাবার নাম সুরুজ বেপারী। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদ গ্রামের মধ্যপাড়ার অরুণ মিয়ার প্রথম স্ত্রী মৃত্যুর পর ৩৫ বছর আগে দ্বিতীয় বিবাহ করেন একই গ্রামের মোমেনা বেগমকে। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে অরুন মিয়া তার প্রথম স্ত্রীর সস্তান রুবেলের কাছে ঢাকায় চলে যান। এদিকে অরুন মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে কর্মরত অবস্থায় মারা যান দেশে এনে তার লাশ দাফন করা হয়। তার বিদেশ যাওয়ার সময় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেনা থাকায় পরবর্তীতে অরুন মিয়া তার জমি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করেন। গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে অরুণ মিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান লুৎফুর রহমান রুবেল থানায় একটি নিখোঁজ ডাইরী করেন। গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে অরুণ মিয়ার পার্শ্ববর্তী বাড়ির সৌদি প্রবাসী মনির মিয়া সেফটি ট্যাঙ্কি থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো কিছু দেখতে পায়। খবর পেয়ে পুলিশ সেফটি ট্যাঙ্কির পানি সেচে নয় টুকরো পলিথিনে মোড়ানো অংশ উদ্ধার করে। এটা অরুণ মিয়ার লাশ বলে তার ছেলে শনাক্ত করে।
প্রতিবেশী কুদ্দুস মিয়া বলেন, গত শুক্রবার অরুণ মিয়া মসজিদে গিয়া নামাজ পড়েছে। তারপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। তার বউ আমাদের বলেছে শুক্রবার সকালে সে ঢাকা গেছে। তখনই আমাদের মনে সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আমরা মনিরের বাড়ির সেফটি ট্যাঙ্কে দুর্গন্ধ পাই। খবর পেয়ে পুলিশ ৯ টুকরো পলিথিনে মোড়ানো উদ্ধার করে। এইগুলো খুলে লাশ শনাক্ত করে তার ছেলে।
অরুণ মিয়ার প্রথম স্ত্রীর সন্তান লুৎফুর রহমান রুবেল জানান, আমার ছোট মা বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমার আপন মা মারা গেছে ৩৫ বছর আগে। আমার বাবা ২০১৭ সাল থেকে টানা আমার কাছে ছিল। কয়েক মাস আগে আমার প্রতিবেশী চাচারা বিষয়টি মিটমাট করে দিলে ছোট মায়ের সাথে বাবা থাকা শুরু করে। গত কয়েক দিন যাবত ফোনে বাবার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাচ্ছি না। গত রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বাবাকে খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। প্রবাসী মনির মিয়ার বাড়ির সেফটি ট্যাঙ্কিতে নয় টুকরো ইট দিয়ে মোড়ানো পলিথিন ব্যাগ উদ্ধার করে। পরে এগুলি খুললে আমার বাবার লাশ শনাক্ত করি।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত সুজন কুমার পাল জানান, পারিবারিক কলহের জেরে তার দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনা তাকে মাথায় আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। মোমেনা চাপাতি (টাকশাল) দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে নয়টি পলিথিনে বেঁধে পার্শ্ববর্তী সৌদি প্রবাসী মনির মিয়ার সেফটি ট্যাঙ্কিতে ফেলে দেয়। আমাদের ধারণা মোমেনা ছাড়াও এই হত্যাকান্ডে আরো কেউ জড়িত থাকতে পারে। এই ঘটনায় অরুণ মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর ও মেয়ে লাকিকে গ্রেফতার করে বুধবার আদালতের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
মন্তব্য ( ০)