
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাতে ঢাকা আসা তাদের টার্গেট করে রাজধানীতে ছিনতাইয়ে সক্রিয় একটি চক্রটি। তারা গাবতলী ও কল্যাণপুরসহ আশপাশে গাড়ি থেকে নামা ব্যক্তিদের গন্তব্য পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নেন। পরে শেরেবাংলা নগর এলাকায় কিছু নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে গাড়ি বন্ধ করে দেন। যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে সময়ক্ষেপণ করে, এর মধ্যে চক্রের অস্ত্রধারীরা এসে ছিনতাই করে। তারা জিম্মি করে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়েও নেয়।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে টেকনিক্যাল বাসস্ট্যান্ড থেকে চক্রের প্রধান সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক জাকির হোসেনসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ডিএমপির ডিবি তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রাকিব খাঁন।
তিনি বলেন, প্রথমে চালককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন– নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাবু। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি ছুরি, ২টি ছিনতাইকৃত মোবাইল এবং একটি সিএনজি উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবির ডিসি মোহাম্মদ রাকিব খাঁন বলেন, গত ১৬ আগস্ট শেরেবাংলা নগর থানার একটি ছিনতাই মামলা তদন্তে নেমে ‘সিএনজি স্টার্ট বন্ধ’ করে ছিনতাই চক্রের সন্ধান পায়। তারা মূলত দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ছিনতাই করে। একটি গ্রুপ সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক এবং অপর গ্রুপ অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব লুটে নেয়।
এ ধরনের অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানায় পর পর তিনটি মামলা করেছে ভুক্তভোগীরা। থানা ছিনতাই চক্রের কোনো সন্ধান করতে পারে না। বিষয়টি ডিবি-তেজগাঁও ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জানা যায়, ছিনতাইয়ের সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত, যারা দীর্ঘদিন ধরে এ অপরাধ করে আসছে। ডিবি ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রথমে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত সিএনজি এবং চালককে শনাক্ত করে। তাকে গ্রেপ্তারের পর ছিনতাইয়ের ঘটনা বেরিয়ে আসে।
১৬ আগস্টের মামলার এজাহারে বলা হয়, রাজশাহী থেকে ঢাকার টেকনিক্যাল বাসস্ট্যান্ডে আগত একজন যাত্রী সিএনজিতে করে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবনের সামনে পৌঁছানোর পর চালক সিএনজি বন্ধ করে দিয়ে গাড়ি নষ্টের কথা বলে সময়ক্ষেপণ করেন। এ সময় পূর্ব থেকে ওঁৎপেতে থাকা তিনজন ছিনতাইকারী সিএনজি চালকের সহযোগিতায় সর্বস্ব লুট করে। ছিনতাইকারীরা অতিরিক্ত টাকার জন্য যাত্রীকে মারধর ও চাপ প্রয়োগ করলে তিনি পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে আরও টাকা এনে দিতে বাধ্য হন। পরে ছিনতাইকারীরা তাকে আগারগাঁও এলাকায় ফাঁকা জায়গায় নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
যাত্রী ছদ্মবেশে ডিবির অভিযান
চালকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, চক্রের সদস্যরা আগারগাঁও পুরাতন বাণিজ্য মেলা এলাকায় শিকারের অপেক্ষা রয়েছে। পরে ডিবির দলটি যাত্রীবেশে সিএনজিতে উঠে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখানে পৌঁছে চালক গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করলে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা অস্ত্র নিয়ে সিএনজির কাছে আসে। ডিবি দল তৎক্ষণাৎ অভিযান চালিয়ে নজরুল ও মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় হাফিজুল। পরে আশুলিয়ায় তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠায় বলে জানানো হয়।
মন্তব্য (০)