
লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের অধীনে দরপত্র প্রক্রিয়াধীন থাকা দুটি সড়কের কাজ নিয়ে স্থানীয় দু,পক্ষ ঠিকাদার মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এক পক্ষের অভিযোগ দরপত্র প্রক্রিয়াধীন দুটি সড়ক দখল নিয়ে কাজ শুরু করেছে অপরপক্ষ ।
যথাযথ কতৃপক্ষের অনুমতি ও কার্য়াদেশ ছাড়াই রাস্তার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। অন্য পক্ষ বলছে ফ্যাসীবাদের দোসর সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদের কাছের লোকজন চলমান কাজে বাঁধা প্রদান ও চাঁদা দাবী করছেন। অভিযোগকারী দুটি পক্ষই মূল ঠিকাদার নন।
জানা যায়,উপজেলার চন্দ্রপুর ও চলবলা ইউনিয়নের দুটি সড়ক উন্নয়নের কাজ পান বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লি: ও মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স লি। NOA (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠান দুটি পারফরম্যান্স সিকিউরিটি জমাও দিয়েছে। তবে এখনো চুক্তিপত্র সম্পাদন হয়নি, কার্যাদেশও দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, কার্যাদেশ ছাড়া কোনো কাজ শুরু করার সুযোগ নেই। লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস সুত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ”বুড়িরহাট – চন্দ্রপুর” সড়কের ৩ হাজার ৯৩ মিটার সড়ক উন্নয়ন কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯১ লাখ ১৬ হাজার ৫১৯ টাকা । চলবলা ইউনিয়নের দুহুলী -জোরগাছ জিসি সড়ক ৫ হাজার ২৫০ মিটার সড়ক উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৮৭ হাজার ৬০৭ টাকা। গত ২৬ জুন চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সড়কটির কাজের দরপত্র অনুষ্ঠিত হয়। যাচাই বাছাই শেষে ‘মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি বাস্তবায়নের জন্য মনোনীত করে গত ২৮ জুলাই ‘নোটিফিকেশন অফ অ্যাওয়ার্ড(নোহা ) প্রদান করেন এলজিইডি।
এদিকে অপর সড়কটির জন্য ঠিকাদার হিসেবে বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে মনোনীত করে গত ২২ জুলাই নোহা প্রদান করা হয়। এর প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড ও বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লিমিটেড কাজ দুটির বিপরীতে ‘পারফরমেন্স সিকিউরিটি’জমা করে। এরপর এলজিইডির সাথে চুক্তি সম্পাদন স্বাপেক্ষে নির্মান কাজ শুরুর কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির।
তবে এরই মাঝে প্রকৌশল দপ্তরের অনুমতি ও উপস্থিতি ছাড়াই স্থানীয় ঠিকাদারদের এক পক্ষের কাজ শুরু করার অভিযোগ আনেন বরেন্দ্র কনস্ট্রাশন লিমিটেডের সাথে চুক্তি অনুযায়ী কাজটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলে দাবী করা বর্ণা ট্রেডার্সের মালিক শাহ আযম ও ‘মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক এলাহী বকস।তাঁরা গত ১৭ আগস্ট লালমনিরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশল বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন । অভিযোগে উল্লেখ করেন,কাজটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নানাভাবে যোগাযোগ হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় গত ৭ আগস্ট থেকে রাস্তাটি দখল করে বক্সকাটিং শুরু করেন বিএনপিপন্থী ঠিকাদার মেসার্স এপি এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মিজানুর রহমান। তবে এপি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, মূল ঠিকাদারী প্রতিষ্টানদ্বয়ের মৌখিক নির্দেশনায় কাজ বাস্তবায়ন করছেন বলে আজ বুধবার লালমনিরহাট নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন তিনি। ওই চিঠিতে তিনি ফ্যাসিবাদের দোসর কারান্তরীন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদের ঘনিষ্ঠজন এলাহী বকস ও শাহালম ( নয়ন) কাজে বাধা প্রদান ও ভয়ভীতি প্রর্দশন করে চাঁদা দাবী করছেন বলে জানান।
অপরদিকে আওয়ামীপন্থী স্থানীয় ঠিকাদার এলাহী বকস অভিযোগে দাবি করেছেন, কে বা কার নৈতৃত্বে আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুল ইসলাম গত ১৫ আগস্ট থেকে জোরপূর্বক সড়কে বক্সকাটিং শুরু করেছে। তবে কাজে জড়িত থাকার বিষয়ে অস্বীকার করেছেন হামিদুল ইসলাম।
তবে ওই দুইজনের লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর গত ১৭ আগস্ট কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) বরাবরে একটি চিঠি দেন। চিঠি পেয়ে মঙ্গলবার কালীগঞ্জের ইউএনও জাকিয়া সুলতানা সরেজমিন রাস্তা দুটি পরিদর্শন শেষে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার আলম জানান, মুল ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের সাথে এখনো চুক্তি সম্পাদন হয়নি। মুল ঠিকাদার ছাড়া অন্য কারো কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।
বিএনপি ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে লালমনিরহাট জেলা বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার আফজাল হোসেন বলেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ঠ করতে পতিত আওয়ামী সরকারের দোসররা এমন অসত্য অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবী করে বলেন, প্রকৌশল বিভাগ দুই পক্ষের নিকট থেকে অবৈধ সুযোগ সুবিধা নিয়ে থাকে। আর শিকার হন তাঁরা।
মন্তব্য (০)