• বিশেষ প্রতিবেদন

উন্মুক্ত হচ্ছে রাণীনগরের রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখি পল্লী

  • বিশেষ প্রতিবেদন

ছবিঃ সিএনআই

নওগাঁ প্রতিনিধি: আগামী মঙ্গলবার সবার জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে নওগাঁর রাণীনগরের রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখি পল্লী। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হাতিরপুল এলাকাসহ শতবছরের ঐতিহ্য রক্তদহ বিল ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র, পাখি পল্লী ও মৎস্য অভয়াশ্রম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীনের নিজস্ব পরিকল্পনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যান্ত্রিক এই জীবনে গ্রামীণ প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু সুস্থ্য বিনোদন যোগাতে গড়ে তোলা এই পর্যটন কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

এছাড়া রক্তদহ বিল ও তার সংযোগখাল রতনডারাসহ আশেপাশের এলাকাকে মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার মধ্যে সরকারি ভাবে এটিই প্রথম পর্যটন এলাকা, পাখি পল্লী ও মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে উদ্বোধন করা হচ্ছে। বর্তমানে পুরো এলাকাজুড়েই চলছে শেষ সময়ের সাজানো- গোছানো আর শিল্পীর হাতের হরেক রঙের কারুকার্য আঁকানোর কাজ। সময় পেলেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুরো টিম নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন প্রতিটি কাজ। নিজেও কিছু কিছু অংকন করে স্মৃতির ছাপ রাখছেন।

আগামী মঙ্গলবার (২৮জানুয়ারী) বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল প্রধান অতিথি হিসেবে পর্যটন এলাকা, পাখি পল্লী ও মৎস্য অভয়াশ্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন। উদ্বোধনী উপলক্ষে এদিন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষ থেকে এক ভিন্নধর্মী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান ইউএনও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, শতবছরের ঐতিহ্য রক্তদহ বিল থেকে সবুজ মাঠের বুক চিরে একটি খাল রতনডারা বেরিয়ে এসেছে। খালের দুই পাড় দিয়ে রয়েছে সবুজ গাছ। রতনডারা ব্রিজের সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে নামফলক যুক্ত একটি নান্দনিক গেইট। গেইটের মুখেই শোভা পাচ্ছে শিল্পীর আঁকা পুরো খালের রঙ্গিন ছবি। নিচেই পর্যটকদের বরণ করে নিতে ইট, সিমেন্ট আর বালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি বিশাল আকৃতির মাছ। আর সেই বিশাল মাছের শরীরে হরেক রঙে লেখা শোভা পাচ্ছে মৎস্য অভয়াশ্রম। রতনডারা খালের পশ্চিম পাড় দিয়ে গাছের ফাঁকে ফাঁকে নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের বসার জন্য চমৎকার অনেকগুলো সিট। এছাড়া পর্যটকরা যেন নিরাপদে সহজেই চলাচল করতে পারেন সেই জন্য পুরো রাস্তায় ইট বিছানো হয়েছে। এছাড়া সুন্দর সময়কে যেন পর্যটকরা ছবি তোলার মাধ্যমে স্মৃতির পাতায় রেখে দিতে পারেন তার জন্য তৈরি করা হয়েছে নানা রকমের স্থাপনা। এযেন সত্যিই শিল্পীর আঁকা অসাধারণ সুন্দর সবুজ মাঠ আর খালের মিলনমেলার একটি ক্যানভাস।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন বলেন রাণীনগর উপজেলা একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। কিন্তু এখন পর্যন্ত উপজেলায় পর্যটনমুখি কোন খাত গড়ে তোলা হয়নি। উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্য হচ্ছে রক্তদহ বিল। যে বিলে সারা বছরই হরেক রকমের পাখির যাওয়া-আসা রয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে পাখিরা এখানে আবাসস্থল গড়ে তুলতে পারে না। এছাড়া রাণীনগর-কালীগঞ্জ সড়কটি নতুন করে নির্মাণ হওয়ায় হাতিরপুল এলাকাটি পর্যটকদের আকর্ষন করে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে রক্তদহ বিলের এই অঞ্চলটি যখন পানিতে টই টুম্বর হয়ে যায় তখন এলাকাটি আরো আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে। এসময় নৌকা নিয়ে ভ্রমণের জন্য হাজারো পর্যটকরা এখানে ভীড় করে। আর হরেক রকমের পাখিদের কলকাকলীতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো রক্তদহ বিল এলাকা।

তাই হাতিরপুল ব্রিজ থেকে রতনডারা খালের পাশ দিয়ে রক্তদহ বিলের মধ্যে চলাচলকারী মেঠো সড়কটি আধুনিকায়ন, সড়কের দুই পাশে পর্যটকদের জন্য বসার ব্রেঞ্চ নির্মাণসহ আরো নানা রকমের সৌখিন ও আকর্ষনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা এবং সারা বছর রক্তদহ বিলে আশ্রয় নেয়া হরেক রকমের পাখিদের অভয়ারন্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাখি পল্লী হিসেবে এলাকাটিকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করি। পাখিরা যেন নিরাপদে বসবাস ও প্রজনন করতে পারে সেই জন্যে সড়ক ও বিলের পাশ দিয়ে থাকা গাছগুলোতে পাখির বাসা হিসেবে মাটির হাড়িও স্থাপন করাসহ পুরো প্রকল্পের কথা জেলা প্রশাসক স্যারকে জানালে স্যারের সার্বিক সহযোগিতায় “রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখি পল্লী” শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করি। শেষ পর্যন্ত সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারায় এবং উপজেলাবাসীর জন্য নতুন কিছু রেখে যেতে পারায় আমি অনেক খুশি ও আনন্দিত। সরকারের পাশাপাশি এলাকাটির সৌন্দর্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে ধরে রাখার দায়িত্ব স্থানীয়সহ পুরো উপজেলাবাসীর। আমি আশাবাদি এক সময় এলাকাটির নাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়বে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন সরকারি ভাবে জেলার মধ্যে প্রথম রাণীনগর উপজেলায় পর্যটন এলাকা, পাখি পল্লী ও মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। একটি পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের আগমনের কারণে ওই এলাকায় নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। পাল্টে যায় অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। ফলে ওই এলাকাটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে আরো শক্তিশালী হয়। তাই এই এলাকায় বেশি সংখ্যক পর্যটকদের আগমন ঘটাতে চাইলে স্থানীয়দের ভদ্র, নম্র ও অতিথি পরায়ন হতে হবে। ওই এলাকায় কোন প্রকারের অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটানো উচিত হবে না। পর্যটন এলাকায় কোন পর্যটক এসে যেন কোন খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখিন না হয় সেই বিষয়ে স্থানীয়সহ পুরো উপজেলাবাসীদের সচেতন থাকতে হবে। তবেই দ্রুত এই পর্যটন এলাকাটির প্রতি পর্যটকদের যেমন আকর্ষন বৃদ্ধি হবে তেমনি ভাবে এর নামটিও ছড়িয়ে পড়বে পুরো দেশের পর্যটকদের কাছে। তবেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শতভাগ সফলতা পাওয়া যাবে। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও কিন্তু এই এলাকাটির সৌন্দর্য বর্ধন করা সম্ভব। তাই এলাকাটির সকল কিছু রক্ষণাবেক্ষণ করার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে স্থানীয়দের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

মন্তব্য (০)





image

উত্তরাঞ্চলে পেট্রল পাম্প বন্ধে যানবাহন চালকদের দুর্ভোগ

রংপুর ব্যুরোঃ  রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের সব&n...

image

নড়াইলে ৩ দিন ব্যাপী ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি মেলার...

নড়াইল প্রতিনিধিঃ "কৃষিই সমৃদ্ধি " এ পতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে নড়া...

image

নড়াইলে ৩ দিন ব্যাপী ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি মেলার...

নড়াইল প্রতিনিধিঃ "কৃষিই সমৃদ্ধি " এ পতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে নড়া...

image

শুধু কাগজ আর বাঁশ দিয়ে তৈরী শিক্ষার্থীর আদলে সরস্বতী দেবী...

পাবনা প্রতিনিধিঃ শহরের গলি দিয়ে হাতে টানা রিকশায় চড়ে যাচ্ছেন একজন মেয়ে। একহাত...

image

টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের বর্জ্য ১০ ঘণ্টায় পরিষ্কার

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ ১০ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের ময়লা পরিষ্...

  • company_logo