• বিশেষ প্রতিবেদন

নারায়ণগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী পুণ্য স্নানোৎসব

  • বিশেষ প্রতিবেদন

ছবিঃ সিএনআই

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী পুণ্য স্নানোৎসব। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) রাত ২টা থেকে শুরু হয়ে ৫ এপ্রিল রাত ১২টা ৫১ পর্যন্ত দুই দিনব্যাপী এই উৎসব চলবে। স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠেছে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখো পূণ্যার্থী।

এবার দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিয়মিত লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, আম্রপল্লব নিয়ে পূণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নিয়েছেন। লগ্ন শুরুর পরপরই পূণ্যার্থীর ঢল নেমেছে লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। পাপমোচনের বাসনায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পূণ্যার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠেছে লাঙ্গলবন্দ।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, মহাভারতের বর্ণনামতে পরশুরাম মুনি পাপমুক্তির জন্য ব্রহ্মপুত্র নদে যে স্থানের জলে স্নান করেছিলেন, তা লাঙ্গলবন্দে অবস্থিত। সেই থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান খুবই পুণ্যের। স্নানোৎসব উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।

লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস কর্মকার জানান" পুলিশ,আনসার সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় দেড় হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করতেছেন।এখানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত,নেপাল ও ভুটান সহ দেশ বিদেশের প্রায় ১০ লক্ষাধিক পূণ্যার্থীরা অংশ নেবেন।সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।ইতিমধ্যে স্নানোৎসব এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা। স্নান এলাকায় ১৯ টি স্নান ঘাটলায় কাপড় পাল্টানো, চিকিৎসা সেবায় ভ্রাম্যমান কেন্দ্র, শৌচাগার, বিশুদ্ধ পানি সরবারাহের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও স্নান এলাকায় টহলে থাকবেন সেনাবাহিনী,র‍্যাব, নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড।

 

জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আগত পূর্ণার্থীদের সুবিধার্থে ১৬০ টি শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে। স্নান এলাকায় নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। সিসিটিভির পাশাপাশি পর্যবেক্ষণের জন্য আছে ড্রোন।

কথিত আছে, তৃতা যোগে অতীতে জমদগ্নি মহামুনির রেনুকা নামে এক রাজবংশীয় পরমাসুন্দরী স্ত্রী ছিল। তাদের ছিল পাঁচ পুত্র। সর্বকনিষ্ঠের নাম ছিল পরশুরাম। ঘটনাক্রমে মার্তিকাবর্ত দেশের রাজাকে সস্ত্রীক জলবিহার করতে দেখে আশ্রমবাসিনী রেণুকা কামস্পৃহ হয়ে পড়েন এবং নিজের পূর্ব-রাজকীয় জীবন সম্পর্কে স্মৃতিবিষ্ট হন। মুনি স্ত্রীর এই আসক্তি দেখে ক্রোধান্বিত হয়ে পাঁচ পুত্রকে তাদের মাতাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু কোন পুত্রই মাতৃহত্যার মতো নিষ্ঠুর কাজ করতে রাজি হলো না। তখন মুনি তার প্রিয় পুত্র পরশুরামকে আদেশ দিলে পরশুরাম এক কুঠারের আঘাতে মাকে হত্যা করেন। মাকে হত্যা করে পরশুরাম পরম পাপী হিসেবে চিহ্নিত হন। পাপের শাস্তি হিসেবে কুঠারটি তার হাতে আটকে থাকে। শত চেষ্টা করেও তা থেকে তিনি মুক্ত হতে পারলেন না। তখন পিতা তাকে বিভিন্ন তীর্থস্থানে গিয়ে পাপমুক্ত হতে বলেন। মাতৃহত্যার ভয়াবহ পাপের অনুশোচনা নিয়ে তিনি তীর্থ থেকে তীর্থে ঘুরে বেড়ান। দেবতা ব্রহ্মপুত্র তখন হিমালয়ের বুকে হ্রদরূপে লুকিয়ে ছিলেন। দৈবক্রমে পরশুরাম ব্রহ্মপুত্রের মাহাত্ম্যের কথা জানতে পারেন। তিনি খুঁজে পেলেন হিমালয়ে লুক্কায়িত ব্রহ্মপুত্র হ্রদ এবং প্রার্থনা জানালেন যেন এর পবিত্র জলে তার পাপ মুক্ত হয়। তিনি হ্রদের জলে ঝাঁপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতে আটকে থাকা কুঠারখানা খসে পড়ে। এভাবে তিনি মাতৃহত্যার প্রায়শ্চিত্ত থেকে মুক্ত হলেন। ব্রহ্মপুত্রের এই অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন পাপহরণকারী জল যাতে সাধারণ মানুষের উপকারে আসে এ উদ্দেশ্যে পরশুরাম সেই জলধারাকে সমতল ভূমিতে নিয়ে আসার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন। তিনি কুঠারখানা লাঙলের ফলকে বেঁধে সেই ফলক দিয়ে নালা সৃষ্টি করে ব্রহ্মপুত্রের পবিত্র জলধারাকে সমতল ভূমিতে নিয়ে আসেন। দীর্ঘ সময় ও পথ পরিক্রমায় পাহাড়-পর্বত পেরিয়ে তিনি ব্রহ্মপুত্রের জলধারাকে বিভিন্ন জনপদ ঘুরিয়ে অবশেষে বর্তমান লাঙ্গলবন্দে এসে ক্লান্ত হয়ে থেমে যান এবং লাঙল চষা বন্ধ করে দেন। তার লাঙলের ফলকে তৈরি পথ ধরে ব্রহ্মপুত্র প্রবাহিত হতে থাকে। সেই থেকে এ স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ এবং তা হয়ে ওঠে হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষের পুণ্যস্থান।

মন্তব্য (০)





image

পহেলা বৈশাখে লোকজ শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটলো নতুন প...

নওগাঁ প্রতিনিধি: পহেলা বৈশাখ মানেই বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব। বৈশাখ বলতে আমরা গ্...

image

পাবনায় হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা শুরু

পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার চাটমোহরের পৌর শহরের অদূরের গ্রামে বোঁথড়। এ গ্রামে প্...

image

বৈশাখী মেলাকে ঘিরে ব্যস্ত জাম গ্রামের কাগজের রঙ্গিন ফুল ত...

নওগাঁ প্রতিনিধি: আসছে বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বৈশাখ মানেই বিভিন্ন...

image

পঞ্চগড় সীমান্ত থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির নীলগাই উদ্ধার

পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড় সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির এক...

image

দুটি কারণে নওগাঁয় প্রতিবছরই কমছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ

নওগাঁ প্রতিনিধি: সূর্যমুখী ফুলের হাসিতে ফুটে উঠেছে নওগাঁর মাঠগুলো। বর্তমানে স...

  • company_logo