
নওগাঁ প্রতিনিধি: ঈদ মানেই আনন্দ আর ঘোরাঘুরি। এবার ঈদুল ফিতরে সরকারি দীর্ঘ ছুটিতে যান্ত্রিক জীবনের কিছুটা সময় পরিবার নিয়ে গ্রামে নিজেদের ভালোলাগার স্থানে কাটানোর কোন বিকল্প ছিলো না। আর এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা ও তার আশেপাশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষরা। উপজেলার রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়ক সংলগ্ন শতবর্ষী রক্তদহ বিলের খালের হাতিরপুল এলাকায় প্রকৃতির সঙ্গে গড়ে তোলা পাখি পল্লী ও পর্যটন এলাকায় ছিলো লাখ দর্শনার্থীদের ভীড়।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে বিশুদ্ধ পরিবেশে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য ঈদের দিন বিকেল থেকেই এই পাখি পল্লীতে ছিলো হাজার হাজার দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। আর এই পাখি পল্লীকে ঘিরে সড়কের পাশ দিয়ে গড়ে ওঠা মৌসুমী দোকান ও আশেপাশের দোকানগুলোতে ঈদের কয়েক দিনে কয়েক লাখ টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে জানিয়ে স্থানীয় দোকানীরা। যদি আগামীতে এই পাখি পল্লীকে আরো আধুনিকায়ন, দর্শনার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবারের ব্যবস্থা, শৌচাগার, সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন সুবিধা যোগ করা যায় তাহলে দ্রুতই এই পাখি পল্লীকে ঘিরে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যাওয়া আশা করছেন স্থানীয়রা।
এবার ঈদে পাখি পল্লীর আর একটি বিশেষ আকর্ষন ছিলো স্থানীয় আধুনিক কৃষক নুরুল ইসলাম নয়নের নানা সাজে সজ্জিতকরণ সূর্যমুখি ফুলের ক্ষেত। সূর্যমুখি ক্ষেতে নয়ন দর্শনার্থীদের ছবি তোলার জন্য বসার ব্রেঞ্চ, বিভিন্ন দৃশ্য স্থাপন করাসহ কিছু ফুলকে রঙ্গে করেছিলেন রঙ্গিন। প্রতিজন দর্শনার্থীর টিকিট ছিলো ১০টাকা করে। এতে করে ঈদের কয়েকদিন সূর্যমুখি ফুলের ক্ষেত থেকে প্রায় লাখ টাকা আয় করেছেন বলে তিনি জানান। আগামীতে দর্শনার্থীদের জন্য তিনি এই সূর্যমুখি ফুলের ক্ষেতকে আরো আকর্ষনীয় করবেন বলে জানিয়েছেন চাষী নয়ন।
পাখি পল্লীতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পার্শ্ববতি আত্রাই উপজেলার মকবুল হোসেন জানান তিনি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রাণীনগরের রক্তদহ বিলের এই পাখি পল্লী ও পর্যটন এলাকার কথা জেনেছেন। তাই সুযোগ পেয়ে এবার ঈদে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন পাখি পল্লীতে। খালের পাশের গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে দর্শনার্থীদের বসার জন্য তৈরি করা হয়েছে চমৎকার ব্রেঞ্চ। যান্ত্রিক জীবনের কিছুটা সময় প্রকৃতির সঙ্গে কাটানোর জন্য এই পাখি পল্লী বিনোদন কেন্দ্রটির কোন জুড়ি নেই। তবে আরো কিছু সুবিধা পল্লীতে যুক্ত করলে এটি দর্শনার্থীদের আরো বেশি আকর্ষন করবে।
উপজেলার আবাদপুকুর এলাকার বাসিন্দা রুবেল হোসেন জানান বিগত সময়ে পরিবার নিয়ে একটু ঘোরাঘুরির জন্য উপজেলায় কোন বিনোদন কেন্দ্র ছিল না। ঐতিহ্যবাহী হাতিরপুল এলাকার রতনডারা খালের পরিত্যক্ত জায়গায় অসাধারণ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে একজন দর্শনার্থী তার পরিবার নিয়ে কিছুটা সময় প্রকৃতির সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পাবেন। এই পাখি পল্লীকে আরো আধুনিকায়ন ও আকর্ষনীয় করতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও এই বিনোদন কেন্দ্রের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। এখানে আসা দর্শনার্থীদের প্রতি স্থানীয়দের সুলভ ও শোভনীয় আচরন করে দর্শনার্থীদের আর্কষিত করার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাকিবুল হাসান বলেন উপজেলাতে কোন বিনোদন কেন্দ্র ছিলো না। বর্তমান জেলা প্রশাসক স্যারের সার্বিক সহযোগিতায় ও দিক নির্দেশনা মোতাবেক এই বিনোদন কেন্দ্রের সূচনা করা হয়েছে মাত্র। ধারাবাহিক ভাবে এই পাখি পল্লী ও পর্যটন এলাকাকে আরো কিভাবে দর্শনার্থী বান্ধব করা যায় সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন দপ্তর এবং উপজেলাবাসীর সমন্বয়ে দ্রুতই একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। এক সময় এই বিনোদন কেন্দ্রটি উপজেলার সীমা ছাড়িয়ে দেশের প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীদের কাছে একটি আর্কষনীয় বিনোদন স্পটে রূপান্তরিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আর এমন কাজে তিনি স্থানীয়সহ উপজেলার সকল শ্রেণির সুধীজনদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মন্তব্য (০)