
দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ দেশের প্রথম খনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া (কঠিন শীলা) পাথর খনিতে জমেছে২টি সাইজের প্রায় ১১লাখ মেট্রিক টন পাথরের স্তুপ। যার বাজার মূল্য দাড়িয়েছে সাড়ে ৩শত কোটি টাকা। রেলপথে ৪০-৬০ সাইজ এবং নদী শাসনে বোল্ডার সাইজ পাথর ব্যবহার থেমে আছে সরকারের নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্তের অভাবে। রাষ্ট্রের সার্থেই জাতীয় ওই নিজস্ব খনিজ সম্পদ ব্যবহারের তাগিদ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রুত ব্যবস্হা নেওয়া হলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশী ওই পাথর বিক্রির প্রত্যাশা পুরন হবে বলে আশা করছেন তারা।
খনিতে উত্তোলিত ৬টি সাইজের পাথরের মধ্যে রেলপথে ব্যবহার উপযোগী ৪০-৬০ মিলিমিটার সাইজের পাথর উত্তোলিত হয় ৫১ শতাংশ এবং অন্যান্য সাইজের পাথর উত্তোলিত হয় ৪৯ শতাংশ। প্রত্যাশা এবং চাহিদা মতে বাংলাদেশ রেলওয়ে রেলপথে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাসনে পাথর না কেনায় বাড়ছে মজুদের পরিমান। খনির ইয়াড জুড়ে জমেছে পাহাড় সমান পাথরের স্তুপ।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের উপ মহা ব্যবস্হাপক ( মার্কেটিং এন্ড সেলস) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, খনিতে দৈনিক উত্তোলিত হয় ৬টি নির্ধারিত সাইজের সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন করে পাথর। দেশের উন্নয়ন কাজে সেই পাথর বিক্রি করে থাকেন তারা। সাইজ অনুযায়ী পৃথক দামে দেশের বাজারে বিক্রি এবং ব্যবহার করা হয়ে থাকে মধ্যপাড়ার পাথর। আগে উত্তোলনের সাথে চাহিদা এবং উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের ফলে খনিতে বিক্রির পরিমান ছিল সন্তোষজনক।
৬ সাইজ পাথরের মধ্যে রেলপথে ৪০ থেকে ৬০ মিলিমিটার পাথর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভারতীয় কোম্পানীকে রেলপথ সম্প্রসারন এবং মেরামতের ঠিকা দেওয়ার সময় লাইন অব কন্ট্রাক্ট ( LOC) অনুযায়ী ৭৫ শতাংশ পাথর ভারত থেকে সরবরাহের শর্ত জুড়ে দেওয়ায় ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়ার পরিবর্তে ওই সাইজের পাথর আনতো ভারত থেকে। বাংলাদেশী মধ্যপাড়ার পরিবর্তে ভারতীয় পাথর ব্যবহার করতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে মধ্যপাড়া খনিতে ৪০ থেকে ৬০ মিলিমিটার পাথরের স্তুপ জমতে শুরু করে। ওই সাইজের সাড়ে ৭লাখ মেট্রিক টন পাথর এখন অবিক্রিত অবস্হায় পড়ে রয়েছে খনির ইয়াডে। ভারতের সাথে রেলপথে চুক্তির আগে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেললাইনে ব্যবহার করতো মধ্যপাড়ার পাথর।
এছাড়াও নদীতে তীরের ভাঙ্গন রোধে ( নদী শাসনে) পানি উন্নয়ন বোর্ড কিনতো মধ্যপাড়া খনিতে উত্তোলিত টেকসই বোল্ডার সাইজের ২৫০ মিলিমিটারের উর্ধে বড় পাথর। বর্তমানে পাথরের পরিবর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবহার করছে বালু সিমেন্টের হাতে তৈরি কম টেকসই বোল্ডার। সরকারি নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্তের অভাবে ফাঁকফোকর গোলে পাথরের পরিবর্তে সিমেন্টের তৈরি হালকা বোল্ডার ব্যবহার করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
অন্যদিকে জিরো থেকে ৫ মিলিমিটার সাইজের মধ্যপাড়ার পাথর সড়ক বিমান বন্দরের রানওয়েতে ব্যবহার হচ্ছে। ৫ থেকে ২০ মিলিমিটার সাইজের পাথর ভবন অবকাঠামো তৈরিতে ব্যবহার বেড়েছে। চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। ২০ থেকে ৪০ মিলিমিটার সাইজের পাথর ব্যবহার হচ্ছে মজবুদ টেকসই সড়ক নির্মান কাজে।
তিনি আরো জানান, রেলওয়ের পুর্ব এবং পশ্চিমাঞ্চলে রেলপথে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারের জন্য ক্রিডেটে পাথর বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের আরেক উপ মহা ব্যবস্হাপক সৈয়দ রাফিজুল ইসলাম জানান, ভারতের সাথে রেল লাইন সম্প্রসারন মেরামতের চুক্তি স্হগিতের পর রেলওয়ের পুর্বাঞ্চল দেড়লাখ মেট্রিক টন পাথরের অর্ডার দিয়ে ৬০ শতাংশ কিনেছে। উত্তোলনের তুলনায় বিক্রি কমে যাওয়ায় এবং রেলপথে দেশের খনির পাখর ব্যবহার না করায় ইয়াডে মজুদ বেড়িছিল। আশা করা হচ্ছে মজুদ ৪০ মিলিমিটার সাইজের সব পাথর তারা সরবরাহ নিতে পারবে রেলওয়ে বিভাগ।
এছাড়াএ আড়াই সাড়ে ৩লাখ মেট্রিক টন বোল্ডার পাথর নেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড । উত্তর দক্ষিনবঙ্গের নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ( নদী শাসনে) বোল্ডার পাথর ব্যবহারের তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, নির্মান কাজে মধ্যপাড়া খনির পাথর ব্যবহার করা হয়েছে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে, পদ্মাসেতুর লিং প্রকল্পে, হাতির ঝিল প্রকল্পে, যমুনা ইকোপার্কে এবং হাটিকামুল ইন্টারসেকশনসহ উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পে।
মন্তব্য (০)