মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার সদর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের কৃষক মো: রফিক (৩৮) নিজেদের ৯০ শতাংশ জমিতে এ বছর রোপা আমন রোপন করেছেন। ঠিক মতো সার ও সেচ দেওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তার আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু হটাৎ করে আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পরেছে সে। বাজারের কিটনাশকের দোকান থেকে স্প্রে কিনে দেওয়ার পরেও ফলন নিয়ে তার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
শুধু সে নয় সাটুরিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে কৃষকদের আমন ক্ষেতে দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমন যার কারণে আমনের বাম্পার ফলনে সম্ভাবনার পরেও কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কৃষকদের অভিযোগ ফসলের ক্ষেতে পোকার আক্রমনে তারা দিশেহারা হয়ে পরলেও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তারা কোন ধরনের সহযোগীতা পাচ্ছে না।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় ফসলের মাঠের যতদূর চোখ যায় ফসলের মাঠ জুরে সবুজের সমারোহ। তবে কৃষকের মনে আনন্দ দোলা দিচ্ছে না, কৃষকের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। চলতি বছর আমন মৌসুমে শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হলেও এখন সময়মতো বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলায় আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে পোকার আক্রমনে ও কৃষি অফিস খোঁজ খবর না নেওয়ায় অনেকটা বিপাকে রয়েছে কৃষকরা।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে সাটুরিয়া উপজেলায় ৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমিতে। গত বছর সাটুরিয়া উপজেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর কিন্তু আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে। সাটুরিয়ায় উপজেলায় এ বছরই সব চেয়ে বেশি আমন চাষ হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন আমনের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধানের গাছ ভালো রাখতে আর ধানের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা দিন রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকরা এখন ক্ষেতের পোকামাকড় দমন করতে ওষুধ স্প্রে করা, জমির পানি দেয়াসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধান গাছের পাতা। এর সাথে আনন্দে কৃষকের মন না দুলে চিন্তায় পরেছে কপালে ভাঁজ। আমনের ক্ষেতে পোকা ও রোগ বালাই এ কারনে চিন্তায় রয়েছে কৃষক।
উপজেলার রাধানগর গ্রামের কৃষক মো: মকবুল হোসেন (৪০) জানায়, নিজের ও বর্গা নিয়ে ৮৭ শতাংশ জমিতে আমন রোপন করেছে সে। পোকার আক্রমনে বাজার থেকে ৩শ টাকা দামের স্প্রে কিনে ফসলের জমিতে স্প্রে করছে কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছু। আর এখন পর্যন্ত কৃষি অফিস থেকে কেউ এসে তাদের খোঁজ নেয় নি।
উপজেলার পাড়াগ্রাম এলাকার কৃষক সিরাজ মিয়া (৫০) জানায়, নিজের ৪০ শতাংশ জমিতে এ বছর আমন রোপন করেছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তার আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তার জমির আশে পাশের সকল জমিতে রোপন করা আমনে পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। কি করবেন তা নিয়ে রয়েছেন চিন্তুায়। কৃষি অফিসের কেউ তাদের পরামর্শ বা সহযোগী করতে আসেনি এখনো।
সাটুরিয়ার ৯টি ইউনিয়নের কৃষকদের অভিযোগ সমস্যায় সময় খোঁজ নেয় না কৃষি অফিস।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর উপজেলায় সব চেয়ে বেশি আমনের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকালে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার উপজেলায় রোপা আমনের বাম্পার ফলন হবে। আমনের আবাদে কয়েকটি ধাপে পোকার আক্রমন বা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কৃষি অফিস কৃষকদের মাঠে গিয়ে পরামর্শ ও খোঁজ নিচ্ছে না অভিযোগের বিষয়ে জান্তে চাইলে তিনি বলেন, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাসে ৪ দিন উপজেলা অফিসে এনে ট্রেনিং করানো হচ্ছে কৃষকদের মাঠে গিয়ে পরামর্শ দেবার জন্য। কৃষকদের কাছে কৃষি অফিসের কেউ না গেলে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে কৃষি অফিস রয়েছে সেখানে অথবা কিটনাশকের দোকানে গিয়ে কৃষকদের যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
মন্তব্য ( ০)