পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনার চাটমোহরে ১৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৩টি বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই। ৪৩টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ৪৩ জন সহকারী শিক্ষক। সহকারী শিক্ষকের ৮৩ টি পদও শূণ্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। এ অবস্থা চলতে থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাটমোহরে পুরাতন ৯০ টি এবং নব্য সরকারী ৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ১১৬ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ১০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে মামলা জনিত জটিলতা থাকায় শূণ্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না। ২৩টি বিদ্যালয়ে কোন প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ৪৩ সহকারী শিক্ষক। অপরদিকে সহকারী শিক্ষকের শূণ্য পদ রয়েছে ৮৩ টি।
উপজেলার রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম জানান, প্রাক প্রাথমিকসহ ছয়টি শ্রেণীতে পাঠ দান করি আমরা। প্রতিদিন ৩৫ টি ক্লাস থাকে। সর্বশেষ নিয়োগের সময় বিদ্যালয়টিতে চারটি পদ শূণ্য থাকলেও মাত্র একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অল্প কিছুদিন পর অন্য চাকুরী হওয়ায় তিনি ও চলে যান। ছয়টি পদ থাকলেও বর্তমানে এ স্কুলে কর্মরত আছেন দুইজন শিক্ষক। পাঠদান চরম ভাবে ব্যহত হওয়ায় কয়েকদিন আগে একজন শিক্ষককে এ স্কুলে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছে। সাড়ে সাত বছর যাবত এ স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বপালনকালে দেখছি অর্ধেক পদ সব সময়ই ফাঁকা থাকছে।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক রকিবুল ইসলাম জানান, ছয় পদের বিপরীতে এত দিন দুই জন শিক্ষক কর্মরত থাকায় (প্রধান শিক্ষকসহ) প্রতিদিন প্রায় পনেরোটির অধিক ক্লাস নিতে হতো একজন শিক্ষককে। প্রধান শিক্ষক অফিসিয়াল কাজে কোথাও গেলে একা স্কুলের ছয়টি শ্রেণীর সবগুলো ক্লাস চালাতে হয়। অতি সম্প্রতি ডেপুটেশনে একজন শিক্ষক পাওয়ার পরও অর্ধেক পদ ফাঁকা রয়ে গেছে। এতে ক্লাস চালিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে খুবই কষ্টকর হয়ে পরেছে।
হান্ডিয়াল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলম জানান, নিয়মিত প্রধান শিক্ষক অথবা চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষককে অনেক সময়ই অফিসিয়াল কাজে উপজেলা সদরে গমন করতে হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণ গহনকালীন সময়েও অনেক শিক্ষকের পক্ষে স্কুলে পাঠদান করানো সম্ভব হয়না। অনেক স্কুলেই শিক্ষক সংকট থাকায় ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদান চরম ভাবে ব্যহত হচ্ছে।
অভিভাবকেরা জানান, দীর্ঘদিন যাবত অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ শূণ্য থাকায় ছাত্র ছাত্রীদের পাঠগ্রহন ব্যহত হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে অনেকে তাদের সন্তানকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি না করে স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার মাহবুবুর রহমান জানান, কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। কর্তব্যরত শিক্ষকরা কষ্ট করে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালনকারী সহকারী শিক্ষকরা আর স্বপদে ফিরবেন না। তাদের পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে বহাল রাখা হবে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করছি আগামি জুন মাসের দিকে এ সংকট আর থাকবে না।
মন্তব্য ( ০)