মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় শেখরীনগর গ্রামের মৃত আওলাদ হোসেনের বড় পুত্র আলমগীর হোসেন (২৪) ২০২০ সালে স্থানীয় একটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। ভালোই চলছিল তার জীবন। কয়েক বছর আগে থেকে শুরু হয় পাগলামী, মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এদিক ওদিক চলে যায়, যাকে পায় তাকেই আঘাত করে, বাদ যায়নি প্রতিবেশিরাও। তার নানা রকম তাণ্ডবে পরিবারের মানুষজন নিরুপায় হয়ে নিরাপত্তার জন্য তাকে শিকলে বেঁধে রেখেছে। পরিবারের এমন অবস্থা নুন আন্তে পান্তা ফুরায়, তাই করাতে পারছে না তার চিকিৎসা। বিনা চিকিৎসায় শিকলে বাধাঁ অবস্থায় চলছে আলমগীরের জীবন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির একটি ঘরের বারান্দার ভাঙ্গা টিনের কোঠার মধ্যে সিমেন্টের একটি খুঁটিতে মোটা লোহার শিকলে তালা লাগিয়ে দুই পায়ে শিকল পেচিয়ে দুইটি তালা লাগানো চৌকিতে বসা রয়েছে আলমগীর। শুয়ে, বসে ঘরের মধ্যেই গত দুই বছর ধরে কাটছে তার দিন রাত। ঘরের মধ্যে খাবার দিয়ে আসে বৃদ্ধা মা রুবিয়া খাতুন কখনো মা খাওয়িয়ে দেয় কখনো নিজেই খেয়ে নেয়। দুই বছর ধরে এ অবস্থাতেই কাটে তার প্রতিদিনের খাওয়া দাওয়া ও প্রাত্যহিক কাজকর্ম।
শেখরীনগর গ্রামের মো: নজরুল ইসলাম বলেন, আলমগীর এমনি ভালোই ছিল, লেখাপড়ায় ও ভাল ছিল ইন্টার পাস ও করেছে। গত দুই বছর ধরে বাহিরে বের হলে মানুষকে মারতে যায় বকাবকি করে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে। অর্থের অভাবে তাকে কোন চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার।
আলমগীরের প্রতিবেশী সাহেরা খাতুন বলেন, আগে ভাল ছিল লেখাপড়াও করতো। গত দুই বছর ধরে শিকল দিয়ে বেধে রাখতে হচ্ছে। আলমগীরের বাবা মারা গেছে, ওর পরিবার যে ওকে চিকিৎসা করাবে সে সামর্থ টুকু নেই। ওর ভাইয়ে দিনমজুরের কাজ করে যা উপার্জন করে তা দিয়ে সংসার চলে।
আলমগীরের ছোট ভাই আ: আওয়াল বলেন, তার ভাই পড়াশুনা করতো এসএইচসি পাস করেছে। তার পর থেকে হটাৎ করে মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। গত প্রায় দুই বছর ধরে এক ঘরের ভিতর শিকল দিয়ে দুপা বেধে রাখতে হচ্ছে। বাহিরে বের করলে মানুষকে মারতে যায়। তাদের সামর্থ নেই যে আলমগীরকে চিকিৎসা করিয়ে ভাল করে তুলবে।
আলমগীরের মা রুবিয়া খাতুন বলেন, কখন কার ওপর ঝাপিয়ে পড়বে এমন আশঙ্কায় বুকে পাথর বেধেই আলমগীরকে এভাবেই ২ বছর ধরে শেকলে বেঁধে রাখতে হয়েছে। তার পরিবার ঠিকমতো খেতেই পায় না, ছেলের চিকিৎসা করাবে কি করে। আলমগীরকে একটি ঘরে শিকল বেধে আলাদা রাখা হয়েছে। শিকল পরা অবস্থায় সে খাবার খায়, গোসল করে, টয়লেটও করাতে হয়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও তার পায়ে শিকল থাকে। সন্তানের সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য দানশীল মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা চান অসহায় এই মাতা।
শিকলে বাধা অবস্থায় আলমগীর জানায়, দিন রাত সব সময় তাকে শিকল দিয়ে বেধে রাখে। দুই পায়ে দুইটি তালা ও ঘরের খুটির সাথে আরেকটি তালা মোট তিনটি তালা দিয়ে তাকে বেধে রাখা হয়েছে শিকল দিয়ে। চিকিৎসা করিয়ে তাকে ভাল করবে পরিবার তা পারবে না। তারও ইচ্ছা করে ভাল হয়ে বন্ধুদের সাথে চলতে সমাজে সকলের সাথে মিশতে।
সাটুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) মো: আ: লতিফ বলেন, পরিবারটি দরিদ্র ও অসহায়।
আলমগীরের বাবাও ঋণে জর্জরিত হয়ে মারা গেছে। ওদের পরিবারের যে অবস্থা তাতে চিকিৎসা করানোর সামর্থ ওদের নেই। আলমগীরের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দিতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু ওর পরিবার প্রতিবন্ধী কার্ড করে না দিতে পারার ভাতার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় নি।
মন্তব্য (০)