
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার মুখোমুখি নেপাল। শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশের পর এবার জেন-জি ঝড়ে টালমাটাল হিমালয় কন্যা। মাত্র দুইদিনের বিক্ষোভে ধসে গেছে পুরো দেশের শাসন ব্যবস্থা। মন্ত্রী-এমপিদের বাসভবন, সরকারি বিভিন্ন স্থাপনাসহ সংসদ ভবন এলাকায় আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ংকর রূপ ধারণ করে যে, পদত্যাগ করতে বাধ্য হন নেপালের কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। সরকারের প্রায় সব মন্ত্রীই হয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, নয়তো আত্মগোপনে আছেন।
এই মুহূর্তে কোনো কার্যকর সরকার নেই নেপালে। অরাজকতা চলছে পুরো দেশজুড়ে। কারফিউ জারি করেও হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও নতুন সরকার গঠনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগও নিয়েছে সেনাবাহিনী।
চলমান এ অস্থির পরিস্থিতিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ পৌঁছে গেছে ইতোমধ্যে। এছাড়া, বিক্ষোভের সুযোগে জেল ভেঙে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সাড়ে ১২ হাজারেরও বেশি কয়েদি। ফলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নেপাল পুলিশের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র ও ডিআইজি বিনোদ ঘিমিরের বরাতে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে আল জাজিরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে ক্রমাগত আহতদের ভিড় বাড়ছে। কোথাও ৫০০, আবার কোথাও এক হাজারেরও বেশি আহতের কথা বলা হচ্ছে। ফলে সঠিক সংখ্যা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনা ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সংসদ ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সেনা পাহারা বসানো হয়েছে। সহিংসতার সময় কয়েকজন মন্ত্রীকে হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হলেও একাধিক স্থানে গুলিবর্ষণ ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের দাবি উঠছে এসব ঘটনায়।
আবার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় সীমান্তেও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্ত পারাপার কঠোরভাবে তদারকি করা হচ্ছে। নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
জানা গেছে, অস্থিরতার সুযোগে কারাগারগুলোতেও বড় ধরনের ভাঙচুর হয়েছে। পুলিশের হিসাবে, দেশজুড়ে ১৩ হাজার ৫৭২ জন বন্দি পালিয়ে গেছে। এছাড়া তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে থাকা আরও ৫৬০ জনকে হারিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে মাত্র হাজারখানেক লোককেই আবার ধরতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রাজধানীসহ দেশজুড়ে সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও বন্দিদের পালানো- সবকিছু মিলিয়ে নেপালের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বড় ধরনের চাপে পড়েছে। সরকার বলছে, এ সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন সংলাপ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জনগণের আস্থা পুনর্গঠন।
মূলত, সরকার ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার পর যে বিক্ষোভ দেখিয়েছে নেপালের জেন-জি, তা সাধারণ অন্য কোনও আন্দোলনের মতো নয়। তরুণ নেপালিরা যে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন তা কেবল ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং এক্স-এর জন্য ছিল না। এই সংকটের শিকড় আরও গভীরে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শাসন ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও সামাজিক বৈষম্যই প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে এ আন্দোলনের পেছনে।
মন্তব্য (০)