
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের শ্রীপুরে ব্রীজ থেকে নদীতে ঝাপ দেওয়ার ২৭ ঘন্টা পর কলেজ ছাত্রী লামিয়ার মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরি দল।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর একটার দিকে ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরী দল ওই ছাত্রীর মরদেহ সুতিয়া নদী থেকে উদ্ধার করেছে। এর আগে গতকাল বেলা দশটার দিকে ত্রিমোহনি ব্রীজ থেকে সুতিয়া নদীতে ঝাপ দিয়ে নিখোঁজ হয় কলেজ ছাত্রী লামিয়া।
নিহত লামিয়া(১৭) উপজেলার নান্দিয়াসাংগুন গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে। সে ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার ক্যাপটেন গিয়াস উদ্দিন কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্রী ছিলো ।
স্বজন ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, লামিয়া মৃত্যুর পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা স্টোরি দেন, তিনি লেখেন "এই পৃথিবীর প্রতি হাজারটা অভিযোগ রেখে গেলাম, এই পৃথিবীর প্রতি আকাশ পরিমাণ অভিমান রেখে গেলাম। এই পৃথিবী আমাকে দেয়নি ভালো থাকতে। এই পৃথিবীর মানুষ, আপন মানুষ, নিষ্ঠুর চেহারা, নিষ্ঠুর ব্যবহার, নিষ্ঠুর চলাচল যা আমাকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার শক্তিটুকু দেয়নি। যাদের ভেবেছি আপন, তারাই মারে ছুরি। তাদের প্রতি নেই কোন অভিমান, নেই কোন অভিযোগ। ভালো থাকুক তারা, চাই শুধু এতটুকু। আমার থেকে যাঁরা শান্তি কেড়ে নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে যেন শান্তি কেড়ে না নেয়। যারা পারেনি আমাকে সহ্য করতে তাদের জীবনে অলৌকিক কিছু না ঘটুক । নিষ্ঠুর পৃথিবীকে বিদায়। যে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার নেই কোন অধিকার, নেই কোন আশা। পৃথিবী তুমাকে বলে যাই তুমি দিলে না তুমার বুকে থাই (ঠাঁই)। চাইলেই পারতে আমাকে একটু বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে। তা করোনি, তুমি করলে কি দোষি। করলে অসহায়, যা আমাকে বাঁচতে দেয়নি আর"। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন পোস্ট করে ব্রিজ থেকে সুতিয়া নদীতে ঝাপ দিয়ে নিখোঁজ হন কলেজ ছাত্রী লামিয়া আক্তার।
নিহতের ছোট বোন সাদিয়া জানান, লামিয়ার সাথে সাজিন নামের একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। তাদের বিয়ের কথা চলায় আপু হাসি খুশি ছিলো। মঙ্গলবার ছোট ভাইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিলো। পরে তার কিহলো। রাতে হোয়াটসঅ্যাপ ষ্টোরিতে আবেগ ঘন পোষ্ট দেয়। বুধবার সকালে ঘরেই ছিলো।পরে সাড়ে নয়টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়। কিছু সময় পর তাকে খোঁজে পাচ্ছিলামনা। পরে শুনতে পায় পাশের সুতিয়া নদীতে ব্রীজ থেকে এক মেয়ে ঝাপ দিয়েছে। দ্রুত ব্রীজের উপর গিয়ে আপুর জুতা জুরা দেখতে পাই। পরক্ষনেই বুঝতে পারি সে নদীতে ঝাপ দিয়েছে।
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার হাউজ ইন্সপেক্টর এ টি এম মাহমুদুল হাসান জানান, বুধবার দুপুর এগারোটার দিকে জাতীয় জরুরী পরিসেবা ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। টঙ্গী থেকে ডুবুরী দল বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রীর সন্ধান করতে পারেনি। নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় উদ্ধার কাজ বাধাগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে আজ সকাল থেকে অভিযান শুরু করে নিহত ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক জানান, খবর পেয়েই ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। গতকাল ডুবুরী দল প্রায় পাঁচ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ছাত্রীকে উদ্ধার করতে পারেনি। আজ আবার অভিযান পরিচালনা করে দুপুরে ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরি দল । স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মন্তব্য (০)