
পাবনা প্রতিনিধি : বর্তমান সরকারের সময়েই পাবনার সাড়ে ৩শ কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার হতে যাচ্ছে। তাদের বৃত্তি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অবিলম্বে সরকারী পরিপত্র বাতিল করে বেসরকারি শিক্ষার্থীদেরও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগের দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার (১২ আগষ্ট) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন পাবনা জেলা শাখার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন পাবনা জেলা শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান লিখিত বক্তব্য দেন। শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১৫ জুলাই নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এর দুদিন পর জারিকৃত পরিপত্রের মাধ্যমে জানা গেছে যে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষায় যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী অবদান বাধা কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার পরিপত্রটি বৈষম্যমূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা এবং ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত বৃত্তি পরীক্ষায় স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, বৃত্তি শুধু একটি আর্থিক অনুদান নয়-এটি একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস, সামাজিক স্বাকৃতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির অনুপ্রেরণা। যখন একটি শিশু দেখবে তার বন্ধুরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে, কিন্তু সে নিতে পারছে না শুধুমাত্র তার বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির ধবণ ভিন্ন বলে, তখন তা তার মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি শিশুদের মধ্যেই একটি বৈষম্যমূলক মনোভাব গড়ে তোলে, বা জাতীয় শিক্ষানীতির সাম্যের নীতির পরিপন্থী।। বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের উপর যে মানষিক চাপ ও যন্ত্রণায় সম্মুখীন হয় তার সকল দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা মানে কেবল স্বাক্ষরতা নয়। ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত ভিত গড়ে দেওয়া। সেই ভিত গড়ার প্রথম ধাপেই যদি বৈষম্য শুরু হয়, তাহলে আমরা কিভাবে সমতার সমাজ গড়বো?
তিনি জুলাই বিপ্লবের কথা তুলে ধরে বলেন, জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান বৈষম্য বিরোধী সরকার। বর্তমান সরকারের সময়ে কিন্ডারগার্টেনের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আবার সেই বৈষম্যের শিকার হোক এটা অপ্রত্যাশিত। পরিপত্রটি বাতিল করে ২০২৫ এ অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা সহ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য গৃহীত অন্যান্য যেকোনো কার্যক্রমে প্রাথমিক শিক্ষায় অংশীজন হিসেবে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সমঅধিকার যেন অক্ষুন্ন থাকে তার প্রতি সদয় দৃষ্টি দানের জোর দাবি জানাচ্ছি।
দাবি আদায়ের হুঁশিয়ারী দিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২০ আগষ্টের মধ্যে আমাদের দাবি সমূহ বাস্তবায়িত না হয় তাহলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ঘেরাও, পরবর্তীতে বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও, মার্চ ফর ঢাকা সহ কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন পাবনা জেলা শাখার উপদেষ্টা ও প্রাক্তন সভাপতি ওলিউর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি হেনা গোস্বামী, সহ-সভাপতি মু. ইকরামুল হক, সাধারন সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পলাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জাহিদুল ইসলাম, যুগ্ম-সাংগঠনিক সম্পাদক নাইমুর রহমান, অর্থ-সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলামসহ পাবনা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
মন্তব্য (০)