
নিউজ ডেস্কঃ বিশ্বব্যাপী দর্শকদের তরুণ প্রতিভাবান শিল্পীদের মাধ্যমে রাশিয়ার সমৃদ্ধ সঙ্গীত ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক কূটনীতির অংশ এবং রাশিয়ান ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো কনসার্ট “রাইজিং স্টারস”।
চাইকোভস্কি কনজারভেটরির সহযোগিতায় শুক্রবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় রাশিয়ার বিখ্যাত সংগীত প্রতিষ্ঠান চাইকোভস্কি মস্কো স্টেট কনজারভেটরির উদীয়মান শিল্পীদের এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় যৌথভাবে এই আয়োজন করে ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউস ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন চাইকোভস্কি কনজারভেটরির ৩ জন প্রতিভাবান তরুণ শিল্পী যথাক্রমে পিয়ানিস্ট স্তানিস্লাভ চেরনুখিন, সোপ্রানো কারিনা খোভালুগ এবং ব্যারিটোন মিখাইল লগিনভ। তাঁদের পরিবেশনায় ছিল রাখমানিনভ-এর 'এতিউদ-টাবলো', পুচিনি, চাইকোভস্কি ও রিমস্কি-কোরসাকভ-এর জনপ্রিয় অপেরা আরিয়া, রাশিয়ান ধ্রুপদী সঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক সঙ্গীতের এক দুর্দান্ত সংমিশ্রণ। শিল্পীদের পুরো পরিবেশনা মুগ্ধ করে মিলনায়তনে থাকা ছোট বড় সব বয়সী শ্রোতাদের।
পরিবেশনায় শিল্পী চেরনুখিন প্রদর্শন করেন তার অসাধারণ কারিগরি দক্ষতা ও সঙ্গীতের গভীরতা। খোভালুগের কণ্ঠস্বর ছিল পরিষ্কার ও আবেগপূর্ণ, আর লগিনভের ব্যারিটোন কণ্ঠে ছিল দৃঢ় নাটকীয়তা, বিশেষত 'আরিয়া অফ ওনেগিন' ও 'ভিক্টরি ডে'-তে। তাঁদের যৌথ পরিবেশনায় ‘স্মুগল্যাঙ্কা’ ও ‘ইভনিং অ্যাট দ্য রেইড’-এর মতো জনপ্রিয় রাশিয়ান গানগুলো দর্শকদের দাঁড়িয়ে করতালিতে বাধ্য করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকাস্থ রাশিয়ান হাউসের পরিচালক মি. পাভেল দভইচেনকভ। তিনি শ্রোতাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে এ সাংস্কৃতিক উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি এই অনুষ্ঠানের সফল আয়োজনের পেছনে থাকা সকল অংশীদারকে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, “এই কনসার্ট কেবল অসাধারণ প্রতিভার প্রদর্শন নয় বরং রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনের এক জীবন্ত উদাহরণ। আমরা আমাদের অংশীদার এবং ঢাকার অসাধারণ দর্শকদের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ান ফেডারেশনের দূতাবাসের মিনিস্টার-কাউন্সেলর মিস একাতেরিনা সেমেনোভা। তিনি তাঁর বক্তব্যে সাংস্কৃতিক কূটনীতি এবং মানুষে-মানুষে সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সঙ্গীত এমন একটি সর্বজনীন ভাষা যা মানুষকে একত্রিত করে। আজ রাতের পারফর্মেন্স আমাদের দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধনের শক্তি প্রমাণ করে।”
সহ-আয়োজক হিসেবে শিল্পকলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ওয়ারেস হোসেন তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সহযোগিতার গুরুত্ব এবং একাডেমির সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা রাশিয়ান হাউস ইন ঢাকার সঙ্গে এই অসাধারণ পারফর্মেন্স আয়োজনে অংশ নিতে পেরে গর্বিত। এটি আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক সমৃদ্ধ করার ও শিল্প উৎকর্ষতায় সহায়তা করার যৌথ প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।”
আয়োজকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নিবেদিত ব্যবস্থাপনা দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানানো হয়। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি প্রাণবন্ত ও উচ্ছ্বসিত শ্রোতাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়, যাঁদের উপস্থিতি ও উষ্ণ সাড়া এই সন্ধ্যাকে একটি সত্যিকারের সঙ্গীত, সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বের উৎসবে পরিণত করেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বাংলাদেশের সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বেসরকারী প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, এনজিও কর্মী, সঙ্গীতপ্রেমী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। এছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশে বসবাসরত রাশিয়ান নাগরিক ও তাঁদের পরিবার এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত রোসআটম প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ। যা এই সন্ধ্যার অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র ও বাংলাদেশ-রাশিয়া সংস্কৃতিক সম্পর্কের শক্তিশালী বন্ধনকে প্রতিফলিত করে।
মন্তব্য (০)