
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ র্দীঘ প্রায় ৩০/৩৫ বছর আগে দাবি উঠে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার বন্ধন সৃষ্টির সাথে রাজধানী ঢাকার সাথে কুড়িগ্রামের দুরত্ব কমে আনাসহ উত্তরাঞ্চলের ভাগ্যে উন্নয়নের ছোয়ায় আলোকিত করতে।
অবশেষে সেই কাঙ্খিত বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতুর উপর ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতুর মাধ্যমে। সেই কাঙ্খিত সেতুর দরজা খোলার অপেক্ষায় কোটি মানুষ। সেতুর দরজা খোলার পর পরেই উত্তরাঞ্চলে উন্নয়নের আলো জ¦লতে শুরু করবে বলেও মন্তব্য করেন সচেতন মহল। সেতুর দরজা খোলার আগেই সেতু এলাকায় প্রতিদিন বাড়ছে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষের ভিড়।
এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর উপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতু ও সেতু কেন্দ্রীক নদী শাসন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪শত ৪০ কোটি, ২১ লাখ ৩৭ হাজার ২৩২ টাকা। এরমধ্যে সৌদি সরকারের ৮৮% এবং বাংলাদেশ সরকারের ১২% টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কাজের দায়িত্ব পায় চীনা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড’। তথ্য মতাবেক এখন পর্যন্ত ৪শত ২০ কোটি টাকার উপরে বিল প্রদান করা হয়েছে। সেতু নির্মানের মাধ্যমে বন্ধনের পাশাপাশি চিলমারী থেকে ঢাকার দুরত্ব কমে গেল প্রায় ৮০ কিঃমিঃ পথ এতে সময়ও বাঁচবে প্রায় ৩ ঘন্টা এছাড়াও কমে আসবে বিভিন্ন পন্যের দামও।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পাশাপাশি হলেও এক নদী যেন হাজার ক্রোশ দুরত্বে নিয়ে গিয়েছিল। বর্ষায় ছিল উত্তাল তিস্তা আর খড়ার সময় ছিল বালি উত্তাপ। উত্তাপ আর উত্তালে পাশাপাশি দুই উপজেলার বন্ধন ছিল ছিন্ন, এছাড়াও কুড়িগ্রাম ও চিলমারী মানুষকে বহু পথ ঘুরে রাজধানীসহ বানিজ্যিক শহর গুলোতে যেতে হতো। এছাড়াও যানবাহন ভাড়া বৃদ্ধির কারনে পণ্যের দামও দিগুন হয়ে যেত। এটি থেকে বাঁচতে দুই জেলার বন্ধন সৃষ্টি ও উত্তরের উন্নয়নের জন্য তিস্তা নদীর উপর সেতুর দাবি উঠে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে। সেই সময় শুরু থেকে দাবির নায়ক হিসাবে এগিয়ে এসছিলেন সুন্দরগঞ্জ হরিপুরের শরিয়াতুল্লাহ মাষ্টার, এগিয়ে দিকনির্দেনা দিয়েছিলেন প্রকৌশলী শহিদুর রহমান এবং বিভিন্ন জনের সাথে চিলমারী একমাত্র ব্যাক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আহাদ আলী সেই দাবির সাথে একমত প্রকাশ করে শুরু করেন বিভিন্ন কার্যক্রম। অবশেষে সরকারের চোখ পড়ে এই অঞ্চলের মানুষের দিকে। দুই জেলার বন্ধন সৃষ্টিসহ উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সেতু নির্মানের জন্য এগিয়ে আসেন সৌদি সরকার। বাজেটের ৮৮% অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন আর এটি বাস্তবয়ন করেন এলজিইডি দপ্তর।
এলজিইডি সূত্রে জানায়, ‘দেশে এলজিইডির সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই তিস্তা সেতু। শিক্ষক গোলাম মাহবুব বলেন, এটি শুধু একটি সেতু নয়, বরং এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এছাড়াও উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় হবে।
কৃষিবিদ মোঃ নুর আলম বলেন, কৃষি পণ্য দ্রুত বাজারজাত করা সম্ভব হবে, যা কৃষকদের লাভবান বানাবে সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, বিশেষ করে চিলমারী ও সুন্দরগঞ্জ অঞ্চলে নতুন বানিজ্যিক বাজারের সুযোগ তৈরি হবে।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ¦ মাহফুজুর রহমান বলেন, সেতুটি চালু হলে দুই অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সামাজিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সেতু আন্দোলনের চিলমারীর যোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা আহাদ আলী বলেন, সেতুর আশেপাশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটবে, সর্বোপরি, হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুটি এই অঞ্চলের মানুষের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে এবং উত্তরবঙ্গের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করি।
১৯৯০ সাল থেকে এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছিলেন বলে জানান সুন্দরগঞ্জের তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শরিয়তুল্লাহ মাষ্টার।
তিনি বলেন, ‘অবশেষে এলাকাবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখন এই দুই জেলার মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের শেষ নাই।
এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী গাইবান্ধা উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, দেশে এলজিইডিতে সবচেয়ে বড় প্রকল্প, সেতুটি নির্মানের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের সাথে ঢাকার দুরত্ব কমে আসবে এবং উন্নয়নের ছোয়া লাগবে এলাকায়। এদিকে একের পর এক তারিখ ঘোষনা হলেও এখন পর্যন্ত উদ্বোধন না হওয়ায় বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ বাড়ছে।
অনেকে ধৈর্য্যরে বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে বলেও সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য পোষ্ট করে যাচ্ছেন। তবে সর্বশেষ এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে চলতি মাসের ২৫ তারিখ এটি উদ্বোধন হবে।
মন্তব্য (০)