
নিউজ ডেস্ক : কর্মস্থলে অনিয়মে জড়ালে বা সরকারি দায়িত্ব পালনে অবহেলা-অনীহা দেখালে এসি ল্যান্ডদের (সহকারী কমিশনার-ভূমি) বিরুদ্ধে শাস্তি হিসাবে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন নিয়ম রেখে ভূমি মন্ত্রণালয়াধীন ভূমি প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) পদায়ন নীতিমালা, ২০২৫ প্রণয়ন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ নীতিমালার পরিপত্র জারি করা হয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশাসন ক্যাডারের পদ। উপজেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের দায়িত্ব পালন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। ভূমি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সহকারী কমিশনার পদের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এসি ল্যান্ড নিয়োগ দিয়ে থাকে। ভূমি মন্ত্রণালয় নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাদের পদায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এতদিন ২০১৯ সালের ৬ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারি করা একটি পরিপত্রের মাধ্যমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়ন করা হচ্ছিল। একই সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন পদায়ন নীতিমালা-২০২২-এ সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়নের বিষয়েও একটি অংশ আছে। মূলত বিভাগীয় কমিশনাররা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়ন করে থাকেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাঠপ্রশাসন অনুবিভাগ) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এসি ল্যান্ডদের পদায়নে আলাদা করে কোনো নীতিমালা ছিল না। তাদের সুষ্ঠু পদায়নের জন্য নতুন নীতিমালাটি জারি করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কর্মকাল সাধারণত ২ বছর হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে প্রথম পদায়নে জেলা সদর ও রাজস্ব সার্কেলের বাইরে এই নীতিমালায় উল্লেখ করা ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণির উপজেলায় করা যাবে।
স্বামী বা স্ত্রী সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে ন্যস্ত হলে ওই কর্মকর্তার স্ত্রী বা স্বামী প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োজিত থাকলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে একই বিভাগে এবং সম্ভব হলে একই জেলায় পদায়ন করা যাবে। নতুন নীতিমালায় নিজ জেলা এবং স্বামী বা স্ত্রীর জেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়ন করা যাবে না। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, স্বামী বা স্ত্রী সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে ন্যস্ত হলে ওই কর্মকর্তার স্ত্রী বা স্বামী প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োজিত থাকলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে একই বিভাগে এবং সম্ভব হলে একই জেলায় পদায়ন করা যাবে।
জনসম্পৃক্ততা বিবেচনা করে সব মহানগরীর রাজস্ব সার্কেল বা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল বা অর্থনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ-এমন অঞ্চল বা সব উপজেলা সদর বা পৌর এলাকাভুক্ত উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে নীতিমালায় জানানো হয়েছে।
এছাড়া উপজেলা বা সার্কেলের ভূমিসংক্রান্ত কাজের পরিমাণ, ব্যাপকতা, বহুমাত্রিকতা, জনসম্পৃক্ততা, ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি হুকুমদখল, সায়রাত মহালসহ রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কাজ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়ন/নিয়োগ/বদলির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে।
ইউনিয়ন সংখ্যা, জনসংখ্যার অনুপাত, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অবস্থান ইত্যাদির অনুপাতে উপজেলার পদ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করা হবে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম, প্রাকৃতিক বা ভৌগোলিক কারণে অন্য উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন, দূরবর্তী উপজেলার জনগণের সেবাপ্রাপ্তির বিষয় বিবেচনা করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে একক দায়িত্ব দেওয়া অর্থাৎ নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
কর্মস্থলে বিভিন্ন রকম অনিয়ম বা অনৈতিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা বা সরকারি দায়িত্ব পালনে অনীহা বা শৈথিল্য প্রদর্শন ইত্যাদি ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক হিসাবে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে এক বছর দায়িত্ব পালনের পর দক্ষতা, সততা, জনসেবার মানসিকতা ইত্যাদি যাচাই করে এই নীতিমালায় উল্লিখত ‘ক’ শ্রেণির উপজেলা বা রাজস্ব সার্কেলে পদায়ন করা যাবে।
এসি ল্যান্ডের নীতিমালায় বলা হয়েছে, কর্মস্থলে বিভিন্ন রকম অনিয়ম বা অনৈতিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা বা সরকারি দায়িত্ব পালনে অনীহা বা শৈথিল্য প্রদর্শন ইত্যাদি ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক হিসাবে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে ন্যস্ত করা কর্মকর্তাদের সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নীতিমালায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে পদায়নের ক্ষেত্রে দেশের জেলা ও উপজেলাগুলোকে অবকাঠামোগত অবস্থা, চিকিৎসা ও শিক্ষা সংক্রান্ত সুবিধাদি, যোগাযোগব্যবস্থা, রাজধানী/বিভাগ/জেলা শহর থেকে দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় তিনটি শ্রেণিতে (ক, খ ও গ) বিন্যস্ত করা হয়েছে।
কোনো সহকারী কমিশনার (ভূমি) ‘গ’ শ্রেণির জেলা/উপজেলায় কর্মরত থাকলে পরবর্তী সময়ে তিনি ‘ক’ ও ‘খ’ শ্রেণির জেলা/উপজেলায় পদায়ন পাবেন। ‘খ’ শ্রেণির জেলা/উপজেলায় কর্মরত থাকলে পরবর্তী সময়ে তিনি ‘ক’ ও ‘গ’ শ্রেণির জেলা/উপজেলায় পদায়ন পাবেন। অন্যদিকে ‘ক’ শ্রেণির জেলা/উপজেলায় কর্মরত থাকলে পরবর্তী সময়ে তিনি ‘ক’ ও ‘খ’ শ্রেণির জেলা/উপজেলায় পদায়ন পাবেন বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে।
মন্তব্য (০)