
নিউজ ডেস্ক : জোরেশোরে শুরু হয়েছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে– গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার এমন ঘোষণার পর প্রস্তুতিতে আরও গতি এসেছে।
গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত ভোট ঘিরে কতটুকু প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে আগামীতে নিজ নিজ দপ্তরের কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে পর্যালোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব আখতার আহমেদ সমকালকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন অনেক বড় কাজ। এজন্য অনেকের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার পর সেই সমন্বয়ের কাজটা শুরু হয়েছে। সবাইকে দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠকে উপস্থিত প্রত্যেক সচিব নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কাজ এবং প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছেন। যেমন নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে কয়েকটি আইন সংশোধনের বিষয়ে জানানো হয়েছে।
গতকাল রাতে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম সমকালকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করতে চান প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচন ঘিরে কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে পুলিশের জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনা রয়েছে। ভোট প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এসব নির্দেশনার বাস্তবায়ন চিত্র ও সামনে কী কী করা হবে তা আজ (বুধবার) আলোচনা হয়েছে। আমরা পুলিশের প্রস্তুতি ও কর্মপরিকল্পনার বিষয় তুলে ধরেছি। অন্যরাও যার যার বিষয়গুলো আলোকপাত করেন।’
বাহারুল আলম বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে একজন পুলিশ সদস্যকে বডিঅন ক্যামেরা দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। আমরা এটির সম্ভাবতা যাচাই করছি। এত বড় প্রযুক্তিগত কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। ভোট প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারাদেশে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যের প্রশিক্ষণ ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। এটি চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণের কারিকুলাম, ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে তিন ধাপে এ প্রশিক্ষণ চলবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের অভিযান চলছে। অস্ত্র উদ্ধার তো অভিযানের অংশ। নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করতে সাত মাস যথেষ্ট সময় বলে মনে করি। আমাদের হাতে সাত মাস রয়েছে।’
এদিকে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, পুলিশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নির্বাচনী আইন ও বিধানে পাশাপাশি প্রায়োগিক বিষয় হাতেকলমে শেখানো হবে। পুলিশ সদস্যদের মোটিভেশন দেওয়া হবে।’
এদিকে বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই দেশের সব পুলিশ সুপার (এসপি) ও অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) লটারির মাধ্যমে বদলি করা হবে। প্রার্থীরা প্রায়ই নিজের পছন্দের এসপি, ডিসি বা ওসি নিজ নির্বাচনী এলাকায় চেয়ে থাকেন। এ পরিস্থিতি এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে লটারি করে এসপি ও ওসিদের বদলি করা হবে। এতে কোনো পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকবে না।’
তিনি আরও জানান, ওসিদের বদলি বিভাগভিত্তিক লটারির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। অন্যদিকে ডিসি ও ইউএনওর বদলির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তাদেরও লটারির পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এ বদলির কার্যক্রম তপশিল ঘোষণার আগেই সম্পন্ন হবে। কারণ, তপশিল ঘোষণার পর বদলি ও নিয়োগের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যায়। নির্বাচন কমিশন চাইলে পরবর্তী সময়ে এসব বদলিতে পরিবর্তন আনতে পারবে।
ভোটকেন্দ্রে বডি ক্যামেরা
নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একটি করে বডি ক্যামেরা সরবরাহের পরিকল্পনার কথাও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্রে একটি করে বডি ক্যামেরা দেওয়া হবে। ক্যামেরাগুলো সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা পুলিশের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্যের কাছে থাকবে। তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা যাতে ভোটকেন্দ্রেই অবস্থান করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। কেন্দ্রে থাকবেন পুলিশ, আনসারসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
৮ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবে নিরাপত্তায়
নির্বাচনে পুলিশ, সেনাবাহিনী, আনসারসহ দেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে প্রতিটি বাহিনীর সদস্যদের নিজ নিজ স্থানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। যারা নির্বাচনে দায়িত্বে থাকবেন, তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
পুলিশের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ
নির্বাচনের সময় পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রশ্ন উঠলেও এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ সবার সহযোগিতা চাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো বাহিনীর সদস্য নির্বাচন চলাকালে অনিয়মে জড়িত হন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য (০)