মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদীর কচুরিপানার মধ্যে মাটি ভর্তি প্লাস্টিকের ড্রামের সাথে রশি দিয়ে বাঁধা প্রবাসীর গলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ক্লুলেস হত্যার রহস্য উম্মোচন করলো পুলিশ। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তার স্ত্রী ও আপন ছোট ভাইসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহমেদ (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত)। গ্রেফতারকৃতরা হলো, হত্যার শিকার হওয়া প্রবাসীর আপন ছোট ভাই ছোট ভাই মোঃ ঝন্টু (২৪) নিহতের স্ত্রী কাঞ্চন ওরফে মনিরা (২৩) ও মাসুদ (২২)।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো.বশির আহমেদ বলেন, সিংগাইরের তালেবপুর ইউনিয়নের কাংশা গ্রামের মো: রোকমান মোল্লার পুত্র সিংগাপুর প্রবাসী উজ্জল মিয়া (৩০) বাড়ীতে আসার ৯ দিন পর গত ১২ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বাড়ী হতে নিখোঁজ হয়। নিখোজেঁর ১৮ দিন পর গত ৩০ অক্টোবর দুপুরে সিংগাইর থানা পুলিশ সিংগাইর থানাধীন তালেবপুর ইউনিয়নের কাংশা ব্রীজের পশ্চিম পাশে ধলেশ্বরী নদীর দক্ষিণ পাশে মোহাম্মদ আলীর আবাদি জমি সংলগ্ন নদীতে পানিশূন্য কচুরিপানার মধ্যে মাটিভর্তি প্লাস্টিকের ড্রামের সাথে লাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় গলিত লাশ উদ্ধার করে।
মৃতদেহের মুখে স্কচটেপ পেঁচানো ও হাত পা চিকন লাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় সম্পূর্ণ পঁচা ও গলা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে একজোড়া প্লাস্টিকের জুতা, মোবাইল ফোন ও লুঙ্গির ছেড়া অংশ দেখে ভিকটিমের স্ত্রী মোসাঃ কাঞ্চন উক্ত মৃতদেহটি উজ্জল মিয়ার বলে শনাক্ত করে। উক্ত ঘটনায় নিহতের পিতা মোঃ রোকমান মোল্লা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, মামলা রুজু হওয়ার পর উক্ত ক্লু লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার এবং বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ করে বুধবার সিংগাইর থানাধীন তালেবপুর ইউনিয়নের উত্তর কাংশা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে এই ক্লুলেস হত্যা মামলার হত্যাকান্ডের সাথ জড়িত নিহতের আপন ছোট ভাই, নিহতের স্ত্রী ও প্রতিবেশি মাসুদকে গ্রেফতার পূর্বক তাদের দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি হালকা গোলাপী রংয়ের ওড়না, একটি হালকা বেগুনী রংয়ের প্রিন্টের সুতি ওড়না, একগোছা নাইলনের চিকন রশি, একটি চায়র কাপ, নগদ বাংলাদেশী ৮,৫০০ টাকা, সিংগাপুরের টাকায় ১১৪ ডলার, একটি হাসুয়া, একটি গামছা উদ্ধার উদ্ধার পূর্বক জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করেন।
উল্লেখিত আসামীদের গ্রেফতার পরবর্তীতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, আসামী মোঃ ঝন্টু ও কাঞ্চনা ওরফে মনিরা সম্পর্কে দেবর ভাবী। আসামী ঝন্টু ও তার আপন বড় ভাই উজ্জল মিয়া উভয়েই সিংগাপুর প্রবাসে থাকা কালে আসামী ঝন্টু মোবাইল ফোনে তার ভাবী আসামী কাঞ্চন ওরফে মনিরার সাথে কথা বার্তা বলার একপর্যায়ে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে।
পরকিয়া সম্পর্কের জের ধরে ঝন্টু তার ভাইকে সিংগাপুরে রেখে বাড়ীতে চলে এসে তার ভাবী কাঞ্চন ওরফে মনিরার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকে। ঘটনার ৯ দিন পূর্বে আসামী ঝন্টুর ভাই সিংগাপুর হতে বাড়ীতে আসলে ঝন্টু ও কাঞ্চন ওরফে মনিরা দ্বয়ের অবৈধ পরকিয়ায় বিঘ্ন ঘটতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে উল্লেখিত আসামীরা পরষ্পর যোগসাজশে উজ্জল মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার দিন দিবাগত রাতে আসামী কাঞ্চন ওরফে মনিরা কফির সাথে তার স্বামীকে ঘুমের ঔষধ সেবন করিয়ে অচেতন করে। অতঃপর, আসামী ঝন্টু তার বন্ধু আসামী মাসুদকে ইমুতে কল করে বাড়ীতে ডাকে।
মাসুদ আসার পর তিনজনে মিলে ডউজ্জল মিয়াকে অচেতন অবস্থায় গলায় গামছা প্যাচাইয়া শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। তৎপরবর্তীতে আসামীরা লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে উজ্জল মিয়ার মৃতদেহ বাঁশের সাথে বেঁধে ঘটনাস্থল ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। অতঃপর, আসামী মাসুদ তার বাড়ী হতে নীল রংয়ের প্লাস্টিকের ড্রাম ও ধারালো হাসুয়া নিয়ে নদীর পাড়ে এসে ড্রামে কাদা মাটি ভরে ড্রামের সাথে রশি দিয়ে উজ্জল মিয়ার মৃতদেহ বেঁধে লাশ নৌকায় উঠিয়ে নদীর দক্ষিণ পাশে নিয়ে হাসুয়া দিয়ে লাশের বুক চিড়ে লাশ নদীর পানিতে ডুবিয়ে গুম করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য ( ০)