• বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ

আমের বাগানে নেই আশানুরুপ মুকুল, চিন্তিত আম চাষিরা

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • লিড নিউজ
  • ১৩ মার্চ, ২০২৪ ১৯:৩২:২০

ছবিঃ সিএনআই

কড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে আম বাগান গুলোতে মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত। তবে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতবারের চেয়ে এবারে আমের গাছে মুকুল অর্ধেকের চেয়ে কম এসেছে বলে জানান চাষিরা। তাপমাত্রা ধীরগতির বৃদ্ধি প্রকৃতিতে নানা পরিবর্তনে মুকুল আসার সময়ও প্রায় শেষ। কোন ধরণের আশা নেই মুকুল আসা নিয়ে। কারণ ফাল্গুন মাস শেষের দিকে। এমাসেই গজাবে গাছে নতুন পাতা। গাছে মুকুল না আসার কারণে আম চাষিরা অনেক চিন্তিত। সেই সাথে ব্যাপক হতাশায় ভুগছে মৌসুমী আম চাষিরা। আম চাষিরা মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে মুকুল গুলোকে রক্ষা করা গেলে যে পরিমাণ মুকুল আছে তাতে আমের ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আগাম জাতের কিছু আমের গুটি ফুটলেও অধিকাংশ গাছে মুকুলের সমরাহে ছেয়ে আছে। আমের ভাল ফলন পাওয়ার আশায় বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত আম চাষিরা। তবে হঠাৎ করে মাঘের শেষে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে বাগানের মুকুলের ক্ষতির আশংকা করছেন বাগানীরা। আকাশের মেঘাচ্ছন্ন ভাব আবহওয়ার এ বৈরি রূপ পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণের আশংকা বাগানীদের কাটছে না। যদিও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত না হয়ে আমের গুটি ফোটার আগে বালাইনাশক ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ কৃষিবিদদের। মুকুল রক্ষার জন্য তারা বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। তবে হোপার পোকা, ছত্রাকের আক্রমণ ও প্রতিকুল আবহাওয়ার শঙ্কায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কিছু কিছু আম গাছে মুকুলে ভরে গেলেও অনেক গাছে মুকুলের দেখা নেই। মুকুল যুক্ত গাছ গুলো বসন্তের নানা ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছেন। আর এ মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। মনকে করে তুলছে আরো প্রাণবন্ত। তবে গাছে গাছে এখন শুধু দৃশ্যমান সোনালী মুকুলের আভা। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম দেখা গেছে কিছু কিছু গাছ। মৌমাছিরাও আসতে শুরু করেছে মধু আহরণে। শীতের জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কুহুতানে মাতাল করতে আবারও ফিরে আসছে বাংলার বুক মাতিয়ে রাখতে ঋতুরাজ বসন্ত। তারপরও বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে সফলতার স্বপ্ন। দেশি আমের পাশাপাশি আ¤্রপালি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি জাতের আম অন্যতম। ইতোমধ্যে এসব গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে।

আমের বাগান ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগুলোর মধ্যে খালি জায়গা, পুকুর পাড়, রাস্তার ধারে ও বাড়ির আঙ্গিনার গাছগুলোতেও শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল। মুকুলে মুকুলে ছেঁয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাাণ। 

উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের পশ্চিম কালুডাঙ্গা এলাকার আব্দুল মান্নান মিয়া সাত বছর আগে শুরু করেন আমের বাগান। গত বছর আমের বাম্পার ফলন হলেও এবারে দেখা নেই তেমন মুকুলের। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে থেকে বাগানে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে। কিছু কিছু গাছে মুকুলের দেখা মিলছেনা। তিনি প্রায় ৭ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ করেছেন। তারপরও তিনি বাণিজ্যিক ভাবে আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। পাশাপাশি শুরু করেছেন লেবু সহ বিভিন্ন প্রকারের ফল ফলাদির চাষ। এবারে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। এ অবস্থা থাকলে আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বাগান পরিচর্যাকারি দেলোয়ার হোসেন ও আছমা বেগম বলেন, বছরের শুরু থেকে আম বাগানের পরিচর্যা ও দেখাশুনা করে আসছি। গত বছরের তুলনায় এবারে আমের মুকুল কিছুটা কম হলেও ভালো ফলনের আশা করছেন তারা।

উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের পোদ্দার পাড়া এলাকার আম চাষি রুহুল আমীন জানান, আমরা কয়েকজন মিলে একটি আমের বাগান লিজ নিয়েছি। আমাদের বাগানে আম গাছ রয়েছে প্রায় ৩'শ ৫০টি। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি গাছে মুকুল এসেছে। বাকি গাছ গুলোতে মুকুল না আসায় আমরা অনেক চিন্তিত। সব গাছ গুলোতে মুকুল আসলে আমরা অনেক লাভবান হতে পারতাম। তারপরও যে পরিমাণ মুকুল আছে আবহাওয়া অনুকুল থাকলে কোন প্রকার রোগবালাই না থাকলে অনেক লাভের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, প্রতি বছর আমের উৎপাদন বেড়েই চলেছে। এখানে উৎপাদিত আমের চাহিদা দেশে বেশ ভালো। এখানকার চাষিরা সীমিত আকারে আমের চাষ করেছেন। তবে বাণিজ্যিক ভাবে আম চাষ করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে চাষিদের। তিনি আরো জানান, আবহাওয়া এখন পর্যন্ত ভালো রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে এ বছর উপজেলায় আম উৎপাদন অনেক ভালো হবে। বিভিন্নরকম সমস্যার কারণে কিছু কিছু গাছে আমের মুকুল আসছেনা। যে সকল গাছে মুকুল এসেছে সে গুলোর পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo