কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলে পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। বাম্পার ফলনে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন কৃষকেরা। চরাঞ্চলে পেঁয়াজ তুলতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন নারী-পুরুষ শ্রমিকেরা। তিস্তার চর জুড়ে পেঁয়াজ উঠানো প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি মৌসুমে তিস্তা নদীর বালুচরে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। যেদিকে চোখ যায়, শুধুই পেঁয়াজের চাষ। দাম বেশি পাওয়ার আশায় কৃষকরা ঝুঁকছেন পেঁয়াজ চাষে। গত বছর দ্বিতীয় দফায় বন্যায় চরাঞ্চলের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার পেঁয়াজ চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন এসব এলাকার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৫'শ ৬৫ হেক্টর। যা অতিক্রম করে চাষাবাদ হয়েছে ৫'শ ৭০ হেক্টর। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ও পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত ছিল।
জানা যায়, উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত।
কৃষকেরা জানান, গত বছর তিস্তা নদীতে দ্বিতীয় দফা বন্যায় ভারত থেকে পানির সঙ্গে কাদাপানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।
গোড়াই পিয়ার, রামনিয়াশা, হোকডাঙ্গা, টিটমা, নাগড়াকুড়া, দড়িকিশোরপুর, মধ্য গোড়াই, কদমতলা, অজুর্ন, বিরহিম, অন্তোষ অভিরাম, সাদুয়া দামারহাট, কর্পূরা, খারিজা লাটশালা সহ অসংখ্য চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেসে উঠা তিস্তার চরাঞ্চল জুড়ে পেঁয়াজ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। পেঁয়াজের বাজারমূল্য স্থিতিশীল থাকায় চরাঞ্চলের প্রায় সব কৃষকই কম-বেশি পেঁয়াজ চাষাবাদ করেছেন। এ দিক থেকে এখন পর্যন্ত বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় চাষিরা খোশ আমেজে রয়েছেন। কয়েক বছর থেকে পেঁয়াজের সঙ্কট এবং দাম বেশি থাকায় চরাঞ্চলের কৃষকরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
তিস্তার চরাঞ্চলের চর গোড়াইপিয়ার এলাকার পেঁয়াজ চাষি আব্দুল কাদের জানান, এবারে ৫ একর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার বিনামূল্যে পেয়েছি। এছাড়া উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল আমাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ নিয়মিত দিয়েছেন। ফলে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মোট খরচ হয়েছিল প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ পেয়েছি প্রায় ৩'শ মণ। বেশি অর্ধেক পেঁয়াজ ১৬'শ টাকা মণ দরে বিক্রি করে পেয়েছি প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। এখন ঘরে পেঁয়াজ আছে প্রায় ৫০ মণ। যা খরচের দ্বিগুণ লাভ হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া তিস্তার বিভিন্ন চরাঞ্চলের পেঁয়াজ চাষিদের মধ্যে রুহুল আমীন, চাঁদ মিয়া, সফিকুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম ও সুরুজ্জামাল সহ আরও অনেকে জানান, প্রতি বছর কম-বেশি চরাঞ্চলের জমিতে পেঁয়াজ চাষাবাদ করে থাকেন। বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার মূল্য ভাল দেখে তাদের ভালো লাগছে। তারা আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারে পেঁয়াজের ফলন ও দাম অনেক ভালো। ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষক দিনদিন পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি অনেকটা কমে যাবে বলে জানান তারা।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, এবারে তিস্তার চরাঞ্চলে পেঁয়াজের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। পেঁয়াজ চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত ছিল। এবারে পেঁয়াজের বাজারদর ভালো থাকায় অনেক লাভবান হয়েছেন পেঁয়াজ চাষিরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, উপজেলায় ১টি পৌরসভা সহ ১৩টি ইউনিয়নে বাছাই করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মাঝে প্রণোদনার আওতায় বীজ ও সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পেঁয়াজের বীজতলা তৈরির জন্য কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।পেঁয়াজের সংকটকালীন সময়ে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকেরা পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসতে পারছেন। বর্তমান বাজারে স্থানীয় ভাবে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা পূরনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। বাজারদর ভালো থাকায় পেঁয়াজ চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
মন্তব্য ( ০)