রংপুর ব্যুরো : রংপুরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।প্রতিদিনই হাসপাতালে জটলা বাড়ছে নতুন রোগীর। শয্যা কম, রোগী বেশি-ফলে প্রতিটি শয্যায় দুই বা তিনজন করেও জায়গা হচ্ছে না। রমেক হাসপাতালসহ রংপুরের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সৃষ্টি হয়েছে নজিরবিহীন চাপ।
হাসপাতালের করিডোরজুড়ে সকাল থেকেই রোগী আর স্বজনদের দীর্ঘশ্বাস, উদ্বেগ আর অপেক্ষা। কখনো ইনসেটিভ কেয়ার বেডের সামনে স্বজনদের কান্না, কখনো বা চিকিৎসার জন্য দৌড়। রমেক হাসপাতালের ভেতরেই তৈরি হয়েছে ‘অস্থায়ী ওয়ার্ড’,যেখানে বেড নেই-কিন্তু রোগী আছে। অনেকেই মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, অনেকে স্ট্রেচারেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায়।এ অবস্থাকে “বিরল চাপ” বলে উল্লেখ করেছেন রমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
রংপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েক সপ্তাহ ধরেই ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। জেলার বাইরে থেকে আসা রোগীর সংখ্যাই এখন বেশি। অনেকেই জানান, ঢাকা ও আশপাশের হাসপাতালে বেড না পাওয়ায় তারা রংপুরে চলে আসছেন।
রোগীদের স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালের ভিড় এতটাই যে চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগছে।তা-ও চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।
রংপুরের এক রোগীর স্বজন রাহেলা বেগম জানান,আসলে ডাক্তাররা খুব চেষ্টা করছেন। কিন্তু এত মানুষ-তারা কীভাবে সামলাবে? বেড তো নেই। আমার ভাইকে করিডোরেই স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।”
ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে প্লেটলেট কমে যাওয়া, পানিশূন্যতা, পেটে ব্যথা, রক্তপাত-এসবকে উপেক্ষা না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বাড়তি নজরদারি, মশা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ পরিষ্কার রাখা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া ডেঙ্গু মোকাবিলা কঠিন।
রংপুরে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়তি চিকিৎসক, নার্স এবং বেড সংযোজনের উদ্যোগ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু রোগীর চাপ স্বাভাবিকভাবে না কমলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
দিন দিন পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় রংপুরবাসীর উদ্বেগ বাড়ছে।হাসপাতালের বাইরে ফার্মেসিগুলোতেও জ্বর–জটিলতা নিয়ে মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রবও বাড়ছে বলে অভিযোগ।ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন-এখনই সচেতন না হলে আসন্ন সপ্তাহগুলো আরও কঠিন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে দেরি করলে জটিলতা বাড়ার ঝুঁকি থাকে কয়েকগুণ। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। যে কোনো জ্বরেই পরীক্ষা ও চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আবদুল মোকাদ্দেম বলেন,ঢাকা থেকে আসা রোগীর সংখ্যা খুব বেশি।রাজধানীতে ডেঙ্গুর তীব্রতা বেশি থাকায় অনেকে চিকিৎসার জন্য রংপুরে চলে আসছেন।ফলে স্থানীয় রোগীর সঙ্গে বাইরের রোগীরা যোগ হওয়ায় চাপ স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে। প্রতিটি শয্যায় একাধিক রোগী নিতে হচ্ছে-যা কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়।
তিনি জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সরা সবাই নিরলসভাবে কাজ করছেন।
হাসপাতালের সবাই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন।এত রোগীর চাপ সামলানো কঠিন, কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি যাতে কেউ চিকিৎসা বঞ্চিত না হয়।
ডা. মো. আবদুল মোকাদ্দেম আরও বলেন,ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে দেরি করলে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই কোনো জ্বরকেই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। শুরু থেকেই জ্বরকে গুরুত্ব দিতে হবে। হাসপাতালে চাপ বেশি, কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
মন্তব্য (০)