• সমগ্র বাংলা

৫ আগষ্ট স্বৈরাচার পতন হলেও আমরা নিরাপত্তাহীনতায় জীবনযাপন করছি: শহীদ জাহিদের বাবা

  • সমগ্র বাংলা

ছবিঃ সিএনআই

পাবনা প্রতিনিধিঃ ‎বাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরব কিনা এটার নিশ্চয়তা পাইনা। স্কুল শেষ করে বাড়িতে পৌঁছাতে পারব কিনা এটার ও নিরাপত্তা নেই। ছেলেমেয়েরা বাড়ির বাহিরে বের হলেও শঙ্কিত থাকতে হয় বলে জানিয়েছেন পাবনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ জাহিদুল ইসলামের পিতা দুলাল উদ্দিন মাষ্টার।

‎মঙ্গলবার (৩ আগষ্ট) ভাঁড়ারা ইউনিয়নের চর বলরামপুর এলাকার শহীদ জাহিদুল ইসলামের বাড়িতে গেলে তিনি এসব কথা জানান।

‎দুলাল মাষ্টার বলেন, ৫ তারিখে স্বৈরাচার পতন হলেও বর্তমানে আমরা খুবই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করছি। এসব খুনি ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে ৯ মাস হলো কোন আত্মীয় স্বজন বাড়িতে যেতে পারি না। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। রাতেও আমরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

‎তিনি আফসোস করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন ও আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না। তারা আমাদের খোঁজখবর পর্যন্ত নিচ্ছে না। কোন কাজে পুলিশকে ফোন দিলেও বলে যে দেখতেছি। এরপর আর কোন খবর থাকেনা। আমরা খুবই নিরবিলি প্রকৃতির লোক। চাইছিলাম কোন কেস কাচারী করব না। রাজনৈতিক নেতারা আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। এখন তারা আমাদের খোঁজখবর ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। যেটা খুবই দু:খজনক। এক বছর হয়ই নাই অথচ বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে ইয়ারকি টিটকারি করে। আসলে সামনে তো আমরাই অপরাধী হয়ে যাবো বলে মনে হচ্ছে।

‎পুলিশ তাদের কোন কথা শুনছে না বলে অভিযোগ করে বলেন, হত্যা মামলার আসামি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এখনো বীরদর্পে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছে। এ বিষয়ে পাবনা সদর থানার ওসিকে জানালেও ওনি কোন সহযোগীতা করেননি। পুলিশ আসামীদের থেকে নিয়মিত টাকা খাচ্ছে। আসলে পুলিশ টাকা কামিয়ে লাভবান হচ্ছে। আমাদের কোন খোঁজখবর নেওয়া হয় না। কোন কাজের জন্য ফোন দিলে ওসি বলে যে দেখতেছি। এরপর আর কোন খবর নাই। মাঝেমধ্যে মনে কষ্টইপাই যে এতো মানুষ জীবন দিলো তাদের কোন মুল্যায়ন নাই। ভবিষ্যত অন্ধকার।

‎দুলাল উদ্দিন মাষ্টার আফসোস করে বলেন, গর্বিত একজন শহীদের মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। এর চেয়ে আর নিকৃষ্ট কাজ কি হতে পারে?। তাহলে আমরা শহীদ পরিবার কি রাষ্ট্রের কাছে বুঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি। আসামীরা খুবই খারাপ প্রকৃতির লোক, তারা যেকোন সময় আমাদের যে কোন ক্ষতি করতে পারে। পুলিশ তো কোন আসামি ধরতেই পারেনি। কয়েকটি আসামি ধরলেও পাবলিক ধরে দিছে, এখানে পুলিশের কোন পদক্ষেপ নেই। কোথায় মাটি কাটবে বালু কাটবে এগুলো নিয়ে পুলিশ মহাব্যস্ত। মামলার কোন কাজের খবর নেই। রাস্তাঘাট শেষ করে দিলো বালু খোররা। এগুলো নিয়ে কাজ করলে মামলার কাজ করবে কিভাবে। পাবনার অনেক রানিং চেয়ারম্যান আছেন তারা পর্যন্ত মামলা থেকে এমপি প্রিন্সের নাম কাটানোর জন্য সুপারিশ নিয়ে আসতেছে। আসলে মামলা যাদের নামে হয়েছে তারা তো প্রকৃতই দোষী। এদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।

‎তিনি আরও বলেন, শহীদদের জন্য জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বিশাল বই বের করা হয়েছে। বইতে প্রত্যেক শহীদের জীবনী ও ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও তারা অনলাইন করেছে সেখানে নাম লিখে সার্চ দিলেই আমাদের কলিজার টুকরো সন্তানদের দেখতে পাই। আসলে এগুলো তো রাষ্ট্রের করা দরকার ছিল। জামায়াতে ইসলামী যেহেতু সবচেয়ে সুন্দর ও মহৎ কাজ করেছে এজন্য আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

‎জাহিদুল ইসলামে মা আপিয়া খাতুন বলেন, দিন চলতেছে খুবই কঠিনের মধ্যে দিয়ে। তিনটি ছেলের একটি চলে গেছে তাদের জন্য খুবই ভয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেক রকম হুমকি ধামকি আসতেছে। আসামি তো ধরাই পরতেছে না। যাই বা ধরা পরছিল পুলিশ টাকা খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে। আসল আসামীদের ধরার কোন চিন্তাই নাই। প্রশাসন টাকা খায়ে ঠান্ডা হয়ে আছে। বেদনা নিয়েই বুকে চেপে দিন কাটাতে হচ্ছে।  শহীদের রক্ত বেঁচে কোটি কোটি টাকা কামাই করতেছে। সাঈদকে তো ধরতেই পারল না। প্রধান খুনিরা দেশেই ঘাপটি মেরে আছে। এদের ধরে কঠিন বিচার করলেই শান্তি পেতাম। প্রকাশ্যে অনেক আসামীই ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।  হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। আসরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগতেছি।

‎শহীদ জাহিদুল ইসলামের ভাই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভাইয়ের আন্দোলনের স্মৃতি এখনো মনে পড়লে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। ভাইকে যেন শহীদি মৃত্যুর জন্য জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। আসলে আমার ভাই শহরের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হটসএ্যাপ গ্রুপ খুলে সবাইকে একত্র করতেন। আন্দোলনের জন্য আলাদা গ্রুপে ছিল।  সেখানে সব কর্মসূচি দেওয়া হতো। সে বলত আন্দোলনে সবার আগে থাকতে হয়। পিছনে থাকলে শহীদ হওয়া যায় না। যাইহোক এসব খুনিরা এখনো গ্রেফতার না হওয়াতে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। রাস্তাঘাটে ঠিকমতো বের হতে পারি না।

‎শহীদ জাহিদের পিতা দুলাল উদ্দিন মাষ্টার তিনি পশ্চিম চর বলরামপুর স্কুলের সহকারী শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন।, ছোট ভাই নাহিদুল ইসলাম সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে চর বলরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। বোন দিলারা পারভীন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাশ করে বর্তমানে হেলথে চাকুরীরত রয়েছেন।

‎বাড়িতে জাহিদের নামে দোতালা ফাউন্ডেশন দিয়ে পাঠাগার বানানো হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ফাউন্ডেশন করে গরীব মানুষের জন্য সহযোগিতা করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

‎পরিবার থেকে জানানো হয় যে জুলাই ফাউন্ডেশন ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।এছাড়াও ডিসি অফিস থেকে দুই লাখ টাকা সঞ্চয় পত্র দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দুই লাখ দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আড়াই লাখ টাকা দিয়েছে। এছাড়াও শিবিরও অনুদান দিয়েছে। পলিটেকনিক্যালের আইডিবি ভবন থেকে ১ লাখ টাকা দিয়েছে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ ১০ দিছে। শেকড় পাবনা ফাউন্ডেশন দিছে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ক্রেষ্ট, স্বারক গ্রন্থ, শহীদদের জীবনী গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে।

‎এ ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থী হলেন- সদর উপজেলার চর বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিনের ছেলে ও পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (১৮) এবং হাজিরহাট বেতেপাড়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে ও শহরের সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মাহবুব হাসান নিলয় (১৪)।

‎এ ঘটনায় গত শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে নিহত পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামের বাবা মো. দুলাল উদ্দিন মাস্টার বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় মামলা করেছেন।

‎মামলায় পাবনা-৫ (সদর) আসনের সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সসহ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দসহ ১০৩ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ১২৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও একটি বিস্ফোরক মামলা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ার হুকুম দেওয়ার অভিযোগে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন গ্রেপ্তার আছেন। আর বিস্ফোরক মামলায় ১১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

‎পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) এ এফ এম মনিরুজ্জামান মন্ডল বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে কোন শহীদ পরিবার অভিযোগ দেইনি যে তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। আমরা সব সময় তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন গ্রেপ্তার আছেন। আর বিস্ফোরক মামলায় ১১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। দুটি মামলাই তদন্তাধীন রয়েছে। খুব দ্রতই চার্জশীট গঠন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

মন্তব্য (০)





image

সোনারগাঁয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিএনপির বিজয় র‍্যালীতে ...

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গত ...

image

মা‌নিকগ‌ঞ্জে বিএন‌পির বিশাল বিজয় মিছিল ও আলোচনা সভা

মা‌নিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মা‌নিকগ‌ঞ্জের সাটু‌রিয়ায় জুলাই গণঅভ...

image

জামালপুরে দেশীয় অস্ত্র ও ভারতীয় মদ উদ্ধার, ৭ মাদক ব্যবসায়...

জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের...

image

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ময়মনসিংহে জামায়াতের গণম...

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ...

image

রুবেলের সমাধিতে শ্রদ্ধা জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে নী...

  • company_logo