
নিউজ ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরে প্রতিষ্ঠান, প্রক্রিয়া সব নষ্ট করে গেছে। এতো বছরের পাথর সরাতে সময় লাগবে। কাকে দিয়ে কাজ করাবো এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এর মধ্যেও আর্থিক খাত মোটামুটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ খাত আইসিইউতে ছিলো, সেখান থেকে আরও আগেই বেরিয়ে এসেছে। এখন কেবিন থেকে বাড়ি ফিরেছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও অর্থ-সচিব নাজমা মোবারক। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার ও যোদ্ধা, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক, পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে এই অনুষ্ঠান শুরুর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধনের উদ্যোগের ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। সালেহউদ্দিন এই উদ্যোগে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাইতে যেসব ছাত্র নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা বেঁচে থাকবে এমন অবস্থা ছিল না। জীবন বাজি রেখেই এই আন্দোলন করেছেন। কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। এখন সবচেয়ে বড় কর্তব্য বৈষম্যহীন দেশ গড়া।
তিনি বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে সবার জন্য সমান সুযোগ ছিল না। দুর্নীতি ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। গুটি কয়েক লোক আর্থিক খাত ধ্বংস করে দিয়েছে। যে ব্যাংকের মালিক, সে এমপি, হোটেলের মালিক, টেলিভিশনের মালিক ছিল। সবই ছিল একচ্ছত্র। এটা থেকে এখন মুক্ত, তবে আসল মুক্ত হবো যখন এটা পুনরায় হবে না। সবাই যেন সমান সুযোগ পায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি ঠিকভাবে ব্যাংক খাত তদারকি করতে পারে তাহলে আর অনিয়ম হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যতটা সম্ভব এই সরকার উদ্যোগ নেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদে তিনি আলোচনা করবেন।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত বছর এইদিন মার্চ টু ঢাকার মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সব সময় ছাত্ররা দেশের জন্য ভূমিকা রেখেছে। মাঝখানে ছাত্রদের মধ্যে একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। তারা চিন্তা করতো যা হচ্ছে হোক।
তিনি বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে যখন জনতা এগিয়ে এসেছে কোনো সরকার টিকতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। এজন্য ভবিষ্যতে এ থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে। সেটা রাজনীতিবিদ হোক অথবা বুদ্ধিজীবী।
গভর্নর বলেন, আর্থিক খাতকে আমরা শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়ার চেষ্টা করছি। অনেক সংস্থারমূলক কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার পরিবর্তন হবে। সেখানে স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরে শক্তিশালী করতে হবে। এই কাজ সঠিকভাবে করতে পারলে সফল হওয়া যাবে। স্বায়ত্তশাসনের জন্য অর্থ উপদেষ্টা যতটুকু করার করবেন। শহীদের ত্যাগ আর্থিক খাতে ব্যর্থ হতে দিবো না। তিনি বলেন, আমানতকারীদের স্বার্থ দেখতে হবে। তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারলেই দেশের স্বার্থ রক্ষা হবে।
অর্থ সচিব নাজমা মোবারক বলেন, আমাদের মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল তার জন্য গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছে। তাই এটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলা। শহীদ ও আহতদের ঋণ শোধ করা সম্ভব না। তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্মান দেওয়া। আর্থিক খাত সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের আকাঙ্খা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।
মন্তব্য (০)