
সাতকানিয়া(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মোহাম্মদ ইউনুস (৫০) নামে এক প্রবাসীকে অপহরণ করে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবির ১২ ঘন্টা পর তাকে জীবিত উদ্ধার করেছে সাতকানিয়া থানা পুলিশের একটি টিম।
রবিবার (১৮ মে) দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের উত্তর ঢেমশা মাইজ পাড়া থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। পরে থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর অপহৃত প্রবাসীকে উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ। অভিযানের এক পর্যায়ে একইদিন রাত ১২ টার দিকে আমিলাইষ এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
অপহরণের শিকার প্রবাসী মোহাম্মদ ইউনুস উপজেলার আমিলাইষ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হিলিমিলি গ্রামের আজগর আলী মিয়াজীর বাড়ির আলী আহমদের পুত্র। তিনি ঢেমশা ইউনিয়নের উত্তর ঢেমশা মাইজ পাড়ায় তার মালিকানাধীন একটি সেমিপাকা বাড়ির ভাড়া উত্তোলনের জন্য গেলে সেখান থেকে অপহরণের শিকার হন।
প্রবাসী মোহাম্মদ ইউনুস অপহরণের কয়েক ঘন্টা পরপরই তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার (৪৪) বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখপূর্বক ১০ থেকে ১২ জনকে বিবাদী করে সাতকানিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, ইউনুস আহমদের পুত্র মো. সাকিল (২৪), নূর মোহাম্মদের পুত্র মো. আকিব, (২৩), মৃত সিদ্দিক আহমদের পুত্র মো. ইমন ও নুরুল ইসলামের পুত্র মো. এনাম। তারা প্রত্যেকে ঢেমশা ও আমিলাইষ ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা।
অভিযোগ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, অপহরণের শিকার প্রবাসী মোহাম্মদ ইউনুস রবিবার সকাল ১০ টায় তার নিজ গ্রাম আমিলাইষ ইউনিয়ন থেকে ঢেমশা ইউনিয়নে তার মালিকানাধীন একটি সেমিপাকা বাড়ির ভাড়া উত্তলনের জন্য যান। সেখান থেকে দুপুর ১২ টার দিকে অভিযুক্ত মো. সাকিল, মো. আকিব, মো. ইমন ও ১০ থেকে ১২ জন যুবক তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে দুপুর ২ টার দিকে অপহরণকারীরা প্রবাসী মোহাম্মদ ইউনুসের মুঠোফোন থেকে তার মেয়ে তাসমিয়া তাহসিন তামান্নার (২৫) ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিয়ে জানায়, ইউনুসকে অপহরণ করা হয়েছে এবং এনু মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে ৪ নম্বর বিবাদী মো. এনামের হাতে দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণের দিলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। অন্যথায়, ইউনুসের অশ্লীল ভিডিও ও ছবি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে দুপুর ৩ টার দিকে অপহরণকারীরা পুনরায় ইউনুসের মুঠোফোন থেকে তার ছেলে যায়েদ মাহমুদ তৌকির (১৭) মুঠোফোনে কল দিয়ে সর্বশেষ ১ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে অপহরণের শিকার ইউনুসের পরিবার নিরুপায় হয়ে সাতকানিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন৷ অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ইউনুসকে উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ। একপর্যায়ে রাত ১২ টার দিকে আমিলাইষ এলাকা থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
অপহরণের শিকার মোহাম্মদ ইউনুসের কন্যা তাসমিয়া তাহসিন তামান্না বলেন, আমার বাবাকে অপহরণ করার পর অপহরণকারীরা প্রথমে আমার মুঠোফোনে কল দিয়েছিল। পরে তারা ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণ না পেলে আমার বাবার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন অপহরণকারী। সর্বশেষ আমরা আইনের আশ্রয় গ্রহণ করলে পুলিশ আমার বাবাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
অপহরণের শিকার মোহাম্মদ ইউনুসের পুত্র মো. আসিফ উদ্দিন বলেন, আমি রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। আমার বাবাকে অপহরণের বিষয়টি জানতে পেরে আমি রাতেই বাড়িতে চলে আসি। অপহরণকারীরা আমার বাবার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে আমার মুঠোফোনে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করেছে। পরে আমার মা থানায় অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ আমার বাবাকে উদ্ধার করেছে। অপহরণকারীরা আমার বাবার মুঠোফোন ও নগদ অর্থ লুট করেছে। সেগুলো এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আমার বাবা মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কারীদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে, তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, এক প্রবাসীকে অপহরণের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরপরই তাকে উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশ। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনার একপর্যায়ে গভীর রাতে আমিলাইষ এলাকা থেকে তাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য (০)