
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার বদনপুরের চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র হত্যাকান্ডের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, অন্যের পরকীয়া প্রেমের বাধা দেওয়ায় রনজু’কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনার সাথে জড়িত একই এলাকার ২ জন ঘাতক আসামী হুমায়ুন কবির ও তার পরকীয়া প্রেমিকা মিজানের স্ত্রী শাহানাজ সুলতানা' কে গ্রেফতারসহ উক্ত হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কোদাল উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার বদনপুর গ্রামের আজিজুল হক এর ছেলে নিহত মাসুদ হাসান রঞ্জু(২৬) লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) সকাল ৯ টার দিকে নিজের ভুট্টা ক্ষেতে সেচ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হয়। কাজ শেষে দুপুরে বাড়িতে ফিরে না আসায় বদনপুর (ঘোলার বাগান) মাঠে নিহত রঞ্জুর
পিতা বিকাল সাড়ে ৩ টায় খাবার নিয়ে যেয়ে ডাকাডাকি করে না পেয়ে খাবার ফেরৎ নিয়ে বাড়ীতে চলে আসে। সন্ধ্যা পার হলেও রঞ্জু বাড়ীতে ফিরে না আসলে তার পিতা আজিজুল এবং তার প্রতিবেশীসহ ভুট্টা ক্ষেতের চারিদিকে তল্লাশী শুরু করে। এক পর্যায়ে নিহতের পিতা আজিজুল ভুট্টা ক্ষেতের মাঝে রঞ্জুর রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। এসময় সবাই এগিয়ে আসে দেখে ধারালো অস্ত্রদ্বারা কে বা কাহারা উপর্যুপুরি কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে গেছে।
এঘটনার পরই রঞ্জু’র পিতা আজিজুল দামুড়হুদা মডেল থানায় হাজির হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৬। তারিখ ১৭/০২/২০২৫ ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করেন।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও মুল আাসামী গ্রেতাতারের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার জনাব খন্দকার গোলাম মওলা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এবং ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় জনাব অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস, (ক্রাইম এ্যান্ড অপস) ও সহকারি পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানা, (দামুড়হুদা সার্কেল),এবং চুয়াডাঙ্গার নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একাধিক টিম এ ঘটনার মূলরহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে চিরুনী অভিযানে মাঠে নামেন। এবং এ হত্যার পারিপার্শ্বিক পর্যালোচনা করে ডিবি ও দামুড়হুদা থানা পুলিশ আজ ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আসামী হুমায়ুন কবির’কে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
আসামী হুমায়ুন কবিরকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে,সে অবিবাহিত কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। একই এলাকার মিজানুর রহমানের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকায় মিজানের স্ত্রী শাহানাজ সুলতানা'র সাথে আমার পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।
এবং শাহানাজ সুলতানা'র সাথে একপর্যায়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। একই এলাকার মাসুদ হাসান রনজু শাহানাজ'র মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতো। সে বিশেষ কায়দায় শাহানাজ ও আমার মধ্যে কখন কি কথা হয়, সে বিষয়টি ও কিভাবে যেন জেনে যেত। সে আরও জানায় রনজু আমাদের মধ্যে মোবাইল ফোনে কথা বলার বিষয়টি শাহানাজ এর স্বামীর পরিবার সহ স্থানীয় লোকজনকে জানিয়ে দেয়।
এ ঘটনার ৫/৬ দিন পূর্বে রাত ৯ টার দিকে দিকে শাহানাজ আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে বলে যে, রনজু আমাদের কথাবার্তা রেকর্ড করে রাখছে। তাকে মেরে ফেলতে হবে, আমি বলি ঠিক আছে, মেরে ফেলব। সে আরও বলে মারতে পারলে, আমার সাথে কথা বলবা, না পারলে কোন কথা বলবা না আমার সাথে। উক্ত কারণে আমি রনজু'কে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করি।
পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দুই-একদিন আগে আমি রনজু'কে বলি, আমি আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারী (রবিবার) আমার ভুট্টা ক্ষেতে পানি দেব। তখন রনজু বলে যে, আমিও আমার ভুট্টা ক্ষেতে পানি দেব। সে মোতাবেক ঘটনার ওইদিন (রবিবার) সকাল ৯ টার দিকে আমি আমার ভুট্টা ক্ষেতে পানি দিতে যাই এবং রনজু'ও তার জমিতে পানি দেওয়ার জন্য আসে।
আমার জমিতে পানি দেওয়া শেষে বেলা অনুমানিক ১২টায় রনজু তার জমিতে পানি দেওয়া শুরু করে ক্যানেল কেটে ভূট্টা ক্ষেতের মধ্যে যেতে থাকে। ঐ সময় আমি রনজু'র পিছনে পিছনে ভূট্টা ক্ষেতের ভিতরে যেয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক পিছন থেকে কোদাল দিয়ে রনজু'র মাথার বাম পার্শ্বে স্বজোরে আঘাত করলে রনজু কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
পরবর্তীতে আমি রনজু'কে দুই'টি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে কোদাল ক্যানেলের মধ্যে রেখে বাড়ীতে চলে আসি। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামী হুমায়ুন কবির ঘটনা সংক্রান্তে বিজ্ঞ আদালতে সব দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে বলে জানা গেছে ।
মন্তব্য (০)