মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিঃ শীতকালীর আগাম ফুলকপি চাষ করে বিক্রি করে ভালোই লাভবান হয়েছিল মানিকগঞ্জের কৃষকরা। কিন্ত গত কয়েক দিনে ফুলকপির দাম কমে যাওয়ায় লাভতো দুরের কথা চাষের খরচই উঠাতে পারছে না কৃষকরা। যার কারনে কপি বিক্রি করতে না নিয়ে কেটে খেতেই ফেলে রাখছে চাষীরা। কপি চাষে লাভের পরিবর্তে চরম লোকসানে পরেছে জেলার চাষীরা। অনেকে বিক্রিও করতে পারছে না শীতকালীন এ সবজি। এজন্য কেটে খেতেই ফেলে রাখছে। কিছু কপি গরুকেও খাওয়াচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছে, চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি হওয়ায় ফুলকপির দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা তাই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কপি যে জমিতে চাষ করা হয়েছিল দাম কম থাকায় কপি খেত থেকে না তুলে জমিতে ফেলে রেখেছে কৃষকরা। অনেক কৃষক পরবর্তী ফসল রোপন করতে কপি কেটে কেটে নষ্ট করে জমিতে মিশিয়ে দিচ্ছে।
শীতের শুরুতে প্রতি পিস কপি বিক্রি হয়েছে ৫০\৭০ টাকা পর্যন্ত। এখন ফুলকপির ভরা মৌসুম। উৎপাদনও বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। ক্রেতারা ও সবজি ব্যবসায়ীরা চাহিদার অতিরিক্ত কপি কিনছে না। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি পিস কপির দাম দিচ্ছেন ৫\৬ টাকা। অথচ প্রতি পিস কপি উৎপাদন করে বাজার পর্যন্ত নিয়ে যেতে কৃষকের খরচ হয়েছে ১৫ টাকা।
কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে ১২ হাজার টাকার চারা লাগে। হাল হাষে খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। এছাড়া শ্রমিকের মজুরি সার কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ ১৮ হাজার ৭০০ টাকা। জমির মালিককে বছরে ১৫\২০ হাজার টাকা দিতে হয়। এ ভাবে প্রতি বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। প্রতি পিস চারা ৩ টাকা দিয়ে কিনে দুই মাসের বেশি সময় পরিচর্যা করে খরচ পড়ে ১০ টাকার ওপরে। তার পর মাঠ থেকে তুলে বাজারে নিতে আরও খরচ ৫ টাকা। সব মিলিয়ে ১৫ টাকা খরচ করে এখন সে কপি বিক্রি করতে হচ্ছে ৫ টাকা।
সাটুরিয়া উপজেলার চামারখাই এলাকার বাবু মাস্টার জানায়, ফুলকপির ১ লক্ষ চারা রোপন করেছিলেন তিনি। ৪০ হাজার কপি বিক্রি করার পর দাম না পাওয়াতে খেতে ফেলে রেখেছেন তিনি। তার মতো তার গ্রামের সকল কপি চাষীদের অবস্থা একই।
সাটুরিয়া উপজেলার আইরমারা গ্রামে কৃষক বশির আহমেদ গত বছরগুলোয় কপি বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন। এ বছর তিনি ১৮ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে ১০ বিঘা জমির আগাম কপি বিক্রি করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা পেয়েছেন। বাকি আট বিঘা জমির কপি খেতেই নষ্ট হচ্ছে। বিক্রি করতে পারছেন না। এখন খেত পরিষ্কার করতে ওইসব কপি কেটে ফেলে রাখছেন। কিছু গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় চরম দাম কমে গেছে কপির। আগাম বিক্রি করে লাভবান হলেও বর্তমানে মারাত্নক লোকসান হয়েছে কপি চাষীদের। বিষয়টি আমরা কৃষি অধিদপ্তরে জানিয়েছি যদি সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কোন সহযোগীতা করা যায় তবে করবো।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ঢাকুলি গ্রামের আবদুর রশিদ এবার ৫০ বিঘা জমিতে ফুলকপি আবাদ করেছে। প্রতি বিঘা জমিতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার চারা লেগেছে। প্রতি পিস ফুলকপির চারা আড়াই থেকে তিন টাকা দরে কিনতে হয়েছে। জমিতে হালচাষ, কীটনাশক, সার, ভিটামিন ও দিনমজুর মিলিয়ে খরচ পড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এখন প্রতি পিস কপি বিক্রি করতে হচ্ছে ৫ টাকা।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবিআহ নূর বলেন, চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি হওয়ায় ফুলকপির দাম পাচ্ছেন না কৃষক। আমরা সবসময় তাদের একই সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সবজি চাষের পরামর্শ দিয়ে আসছি। কিন্তু প্রথমে দাম বেশি পাওয়ায় সবাই একসঙ্গে ফুলকপি চাষ করেছে। আগাম, মধ্যম ও নাবী জাতের ফুলকপি চাষ হলে এ সমস্যা তৈরি হতো না।
মন্তব্য (০)