পবিপ্রবি প্রতিনিধি: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বাংলাদেশে জলবায়ু বান্ধব এবং জলবায়ু সহনশীল চিংড়ি চাষ শীর্ষক মধ্য-মেয়াদী স্টেকহোল্ডার সম্মেলন ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় জার্নালিস্ট লিয়াকত আলী অডিটরিয়ামে উক্ত সম্মেলন এর আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে গেষ্ট অফ অনার ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম ও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড মোঃ নাজমুল আহসান ও পবিপ্রবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান। অনূষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইকোপ্রন প্রকল্পের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর বদিউজ্জামান। কনফারেন্সে আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পবিপ্রবি, খুকৃবি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালেয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের ডিন ও চেয়ারম্যানবৃন্দসহ ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দ, মৎস্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞবৃন্দ ও খুলনা এলাকার মৎস্য চাষীরা।
অনুষ্ঠানে প্রায় ১৫০ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১০০ জন খামারী এবং অতিথিসহ ৫০ জন শিক্ষক, গবেষক, বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সকলকে প্রকল্পের পক্ষ থেক প্যাড, কলম, কার্ড, টি-শার্ট ও পরিবেশ বান্ধব পাটের ব্যাগ উপহার দেয়া হয়। এছাড়াও খামারীদেরকে নগদ ৫০০.০০ (পাঁচ শত টাকা) করে যাতায়াত ভাতা হিসেবে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে জলবায়ু-বান্ধব এবং জলবায়ু-সহনশীল চিংড়ি চাষকে সংক্ষেপে ইকোপ্রন (ECOPRAWN) নামে নামকরণ করা হয়েছে। এটি পবিপ্রবি, বাকৃবি এবং ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহেগেন, ডেনমার্কের সাথে কোলাবোরেটিভ একটি ৫ বছর মেয়াদী গবেষণা প্রকল্প যা ড্যানিডা-এর অর্থায়নে পরিচালিত। প্রকল্পটি আটজন পিএইচডি শিক্ষার্থীকে ও ১৪ জন এম. এস. ছাত্রছাত্রীকে অর্থায়ন করে।
প্রকল্পের গবেষণা কার্যক্রমকে চারটি ওয়ার্ক প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়েছে, প্রতিটিতে দুইজন পিএইচডি শিক্ষার্থী রয়েছে যাদেরকে একজন বাংলাদেশী তত্ত্বাবধায়ক এবং একজন ডেনমার্কের তত্ত্বাবধায়ক গবেষণা কাজে সহযোগিতা করছে। ওয়ার্ক প্যাকেজ-১ চিংড়ি পুকুরে GHG (CO2 এবং মিথেন) নির্গমন বিশ্লেষণের সাথে সম্পর্কিত। ওয়ার্ক প্যাকেজ-2 সামুদ্রিক জল-প্ররোচিত চিংড়ি রোগের উপশম নিয়ে কাজ করে, ওয়ার্ক প্যাকেজ-৩ অর্থনৈতিক কার্যকারিতা এবং আর্থিক দক্ষতা পরিমাপের কৌশলগুলো নিয়ে কাজ করে এবং ওয়ার্ক-প্যাকেজ- ৪ চিংড়ির বাজার ব্যবস্থাপনা, বিপণন চ্যানেল, মূল্য গঠন এবং সংক্রমণ, মূল্য শৃঙ্খলের এক্টর (Actors) এবং বাংলাদেশে চিংড়ির মূল্য সংক্রমণ, এর রপ্তানী সম্ভাব্যতা ও ভোক্তাদের আচরণ বিষয়ে অন্বেষণ এবং সনাক্তকরণ নিয়ে কাজ করে।
এই গবেষণা কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে চিংড়ি চাষের উপর গবেষণা ক্ষমতা জোরদার করার পাশাপাশি চিংড়ি শিল্পকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত করার বিষয়ে নতুন নীতি প্রদান করে সরকারকে পরামর্শ দেয়া। বাংলাদেশে চিংড়ি হচ্ছে রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) এর পরে রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উত্স। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য এবং মোট কৃষি রপ্তানির প্রায় 80% অবদান রাখে এই খাত। এজন্যই এটিকে বাংলাদেশের "white gold/সাদা সোনা" বলা হয়। এক সময়ে দেশজ চিংড়ি উৎপাদনে প্রায় ৮০ ভাগ বিদেশে র্পানী করা হত, যা এখন কমে ১০ শতাংশে দাড়িয়েছে। রপ্তানী আয় কমে যাওয়ার কারনগুলোকে চিহ্নিত করে এর সমাধান বের করাও এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
এই প্রকল্পের প্রত্যাশিত ফলাফল হল ৮ জন ছাত্রছাত্রীর পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন এবং সংশ্লিষ্ট গবেষকদের দ্বারা আন্তর্জাতিক রেফারেড জার্নালে বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র (Research article) প্রকাশ করা। বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত সম্বলিত ইকোপ্রনের একটি বড় ডাটাবেস তৈরিও এই প্রকল্পের একটি ফলাফল হবে, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য গবেষণার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রকল্পটি PSTU এবং BAU উভয়ের ফ্যাকাল্টি সদস্য এবং গবেষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। প্রকল্পের অর্থায়নে এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি কোর্স, প্রশিক্ষণ এবং সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে এবং আরও হবে। এ প্রকল্পের একটি কার্যক্রম হিসেবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ সপ্তাহের জন্য ড, রিজো নাতালিয়া, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করে Life Cycle Assessment এর উপর পিএইচডি লেভেলের কোর্স পড়াতে আসবেন।
অবশ্যই, GHG নির্গমন, লবণাক্ততা অনুপ্রবেশ, প্রোবায়োটিক প্রবর্তন, IMTA অভিযোজন এবং চিংড়ি চাষের খামার অর্থনীতির উপর উক্ত গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। ইকোপ্রন প্রকল্পের 'পলিসি নোটস' বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ জলজ চাষ নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুপারিশ হিসেবে বিবেচ্য করা হবে।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে মুক্ত আলোচনায় খামারীরা তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং এর জবাব দেন বাকৃবির প্রফেসর ড. মাহফুজুল হক, প্রফেসর ড. লোকমান আলী ও প্রফেসর ড. আক্তারুজ্জামান খান।
মন্তব্য (০)