রংপুর ব্যুরো : পীর-ক্ষমতাপ্রেমিকরা বারবার ক্ষমতায় গেছে। কিন্তু জাতিকে তারা কী দিয়েছে? দিয়েছে শুধু পুরান বউ নতুন শাড়ির মতো উপহার-ধোঁকা ছাড়া আর কিছু নয়।এমন মন্তব্য করে ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।তাঁর ভাষায়, “নতুন শাড়িতে পুরান বউ উপহার দিয়ে আর মানুষকে প্রতারিত করা যাবে না। ধোঁকা দেওয়ার দিন শেষ।”
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর নগরীর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে আন্দোলনরত আট সমমনা দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 'জুলাই সনদ বাস্তবায়ন',‘নির্বাচনের আগে গণভোট’সহ পাঁচ দফা দাবিতে অনুষ্ঠিত এ মহাসমাবেশে জেলা ও উপজেলা থেকে আসা হাজারো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
৮ দলের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো- জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি।
চরমোনাই পীর তাঁর বক্তব্যে বলেন,“হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে কেবল ক্ষমতা বদলের জন্য নয়। তারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে সেই শক্তিকে উৎখাত করতে, যারা বিদেশি প্রভুত্বের কাছে জাতিকে জিম্মি করে রেখেছিল। কিন্তু আজও যদি কেউ মনে করে ওয়ান-টু করে আবার ক্ষমতায় যাবে-তাহলে জানিয়ে দিচ্ছি, সেই দিন আর নেই।”
তিনি আরও বলেন,দেশের মানুষ এখন অপেক্ষা করে আছে কবে নির্বাচনের বাক্স আসবে। “ইসলামের পক্ষে ও মানবতার পক্ষে অবস্থান নেওয়া জনগণ ভোট বাক্স ভরে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। জনগণ এবার অন্যায়, দুঃশাসন আর কালো টাকার রাজনীতিকে ‘না’ বলবে।”
চরমোনাই পীর জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, দেশ সংস্কার হবে, দুর্নীতি রোধ হবে। কিন্তু এক শ্রেণির ক্ষমতালোভীরা দেশ সংস্কারের পরিবর্তে আবার ক্ষমতার অলিতে-গলিতে ছুটছে। তারা শুধু পাগল নয়-ডাবল পাগল।” তাঁর অভিযোগ, যারা দেশের টাকা পাচার করেছে, যারা চাঁদাবাজি করে জনগণকে কাঁদিয়েছে, তাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্যই সংগ্রাম করা হয়নি।
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দেশকে ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তার সেই ত্যাগ কোনো চাঁদাবাজ-কালোটাকাওয়ালাদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। ক্ষমতালোভীদের বলছি-ক্ষমতা দেখিয়ে, দাপট দেখিয়ে বা টাকার বুলি ঝরিয়ে আর ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। জনগণ এবার তাদের দেশ থেকে উৎখাত করবে, ইনশাআল্লাহ।”
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারাও দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনের পরিবেশ ও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, “দেশের জনগণ আজ পরিবর্তন চায়-স্বচ্ছতা চায়, ন্যায়বিচার চায়। নির্বাচনের আগে গণভোটই হবে জনগণের মতামত যাচাইয়ের একমাত্র সঠিক পথ।”
জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা ৮ দলের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশ শুরু হয় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। পরে সংগঠনের স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্যের পাশাপাশি বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী,নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম।
এর আগে সমাবেশে বক্তব্য দেন রংপুর মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতি নুরুল হুদা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহানগর সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান পিয়াল, জামায়াতে ইসলামীর নগর আমির এটিএম আজম খান ও জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী।
সমাবেশ শেষে নেতারা পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের সংগ্রামকে আরও জোরদার করার ঘোষণা দেন।
মন্তব্য (০)