• সমগ্র বাংলা

ষড়যন্ত্রের জালে বিএনপির নতুন প্রার্থী — পেছনে এলডিপি ও জামায়াতের ছায়া

  • সমগ্র বাংলা

ছবিঃ সিএনআই

জামালপুর প্রতিনিধি : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশের সঙ্গে জামালপুরেও শুরু হয়েছে বিএনপির এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। প্রার্থীরা দিনরাত ছুটছেন শহর থেকে ওয়ার্ড এবং ওয়ার্ড থেকে গ্রাম পর্যায়ে। আর লবিং করছেন জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। আসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে শোভা পাচ্ছে ব্যানার-ফেস্টুন।

এর ব্যতিক্রম নয় সরিষাবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত জামালপুর-০৪ আসন। এই আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সরিষাবাড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২৪৮ মামলার আসামি হওয়া শামীম তালুকদার নিজের জমি বিক্রি করে এই উপজেলার ১০ হাজার নেতাকর্মীর মামলার খরচ বহন করেছেন টানা ১৫ বছর। এছাড়াও নানা কারণে এই আসনে বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের ভাতিজা ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তি।

অন্যদিকে, এই আসনে এমপি পদে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সম্প্রতি কাজ শুরু করেছেন ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের কন্যা সালিনা বেগম আরুণী। টানা ২৬ বছর পর চলতি বছরের ২০ আগস্ট ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন সরিষাবাড়ীতে আসেন আরুণী। এরপর তিনি নিজেকে বিএনপির এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঘোষণা দেন। তবুও এখন তিনি বেশিরভাগ সময় পার করছেন রাজধানী ঢাকায়। জেলা বিএনপির সম্মেলনের দিন জামালপুরে এবং এযাবত তিনবার সরিষাবাড়ীতে দেখা গেছে তাকে।

সরিষাবাড়ী আসনে ঘুরে ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়-বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের কন্যা সালিনা বেগম আরুণীর পেছনে রয়েছে এলডিপি, জামায়াত ও বিএনপি থেকে ছিটকে পড়া সুযোগসন্ধানীরা। যারা টানা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছিলেন দলের বাইরে। যাদের দেখা যায়নি কোনো মিছিল-মিটিং বা দলীয় কার্যক্রমে। এতে দলের ত্যাগী নেতাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ, এবং দলের ভেতরে দেখা দিয়েছে অস্বস্তি।

সরিষাবাড়ী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. সোহেল রানা বলেন-“সালিনা বেগম আরুণী দুই মাস আগে হঠাৎ বিএনপির প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ শুরু করেন। তখন তার পাশে দেখা যায় এলডিপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগের ভাড়াটে কিছু বিতর্কিত মুখ। এই নাটকের নেপথ্যে রয়েছেন সালাম তালুকদারের ভাতিজা হুমায়ুন কবির তালুকদার। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম আনোয়ারুল কবির তালুকদার এলডিপিতে যোগদানের প্রেক্ষিতে তার ছোট ভাই হুমায়ুন কবির তালুকদার এলডিপির সদস্য ফরম বিতরণের দায়িত্ব নেন এবং বিএনপিকে ভাঙার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। ২০০৬ সালে এলডিপি গঠনের সময় হুমায়ুনের নির্দেশে সরিষাবাড়ীর কিছু নেতা এলডিপিতে যোগ দিয়েছিলেন। জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে প্রথম ‘কুলা’ প্রতীকের মিছিলও হয়েছিল বাবু তালুকদারের নেতৃত্বে। সেই বাবুই এখন আবার আরুণীর গণসংযোগে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। এমনকি এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বাবু তালুকদার নিজ হাতে আরুণীকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন।”

মো. সোহেল রানা আরও বলেন- “হুমায়ুন কবির তালুকদার পতিত আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজমের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক আঁতাত করে ১৫ বছর মামলাহীন আরামদায়ক জীবনযাপন করেছেন। বিএনপির দুর্দিনে হুমায়ুন তালুকদার এক দিনের জন্যও বিএনপির কোনো কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি। এখন সেই হুমায়ুনই আরুণীকে সামনে এনে বিএনপির ভেতরে বিভাজন সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন।”

সরিষাবাড়ী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান মিলন বলেন- “সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিক হলো—সরিষাবাড়ীর সাবেক সাংসদ মুরাদ হাসান শহীদ জিয়ার পরিবার ও মরহুম সালাম তালুকদারকে নিয়ে যখন অশালীন মন্তব্য করেন, তখন পুরো সরিষাবাড়ী স্তব্ধ হয়ে গেলেও শামীম তালুকদার ছিলেন একমাত্র নেতা যিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করেছিলেন। অন্যদিকে হুমায়ুন কবির তালুকদার ঠিক সেই সময়েই ২৫ হাজার টাকার মাছ নিয়ে মুরাদ হাসানের বাসায় উপস্থিত হন। যা মুরাদ হাসান নিজেই সরিষাবাড়ী ভূমি অফিসের এক অনুষ্ঠানে গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন। এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে, কে দলের প্রতি অনুগত আর কে ক্ষমতার দাসত্বে লিপ্ত।”

সরিষাবাড়ী থানা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন- “আরুণীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হয়ে কাজ করছেন সরিষাবাড়ী জামায়াতের সাবেক পৌর আমির ও জামায়াত মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাজি সোহেলের বড় ভাই সহিদুল্লাহ শহীদ। যা অনেক ভিডিওতে দেখা গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় কিছু সুযোগসন্ধানী নেতাকর্মী।”

এসব বিষয়ে জানতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সালিনা বেগম আরুণী মোবাইল ফোনে শনিবার বেলা ১২টার দিকে চারবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

এসব বিষয়ে জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন মোবাইল ফোনে বলেন-'কেন্দ্র থেকেই নির্দেশ রয়েছে যে- দলীয় কোনো কর্মকান্ডে অন্য দলের লোকদের যাতে আনা না হয়। আমরা দেখছি যে- গত ১৭ বছর যাদের দেখা যায়নি। তারা আজ এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী হচ্ছেন এবং প্রচারনা চালাচ্ছেন।  তবে বিএনপির এসব প্রোগ্রামে যাতে অন্য দলের কাউকে যাতে আনা না হয়। সেই বিষয়ে প্রার্থীদের জানানো হবে।'

মন্তব্য (০)





  • company_logo