
রংপুর ব্যুরোঃ রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর এলাকায় দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর পশ্চিম পাশের সেতু রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ মিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক সড়ক, মহিপুর সেতু এবং আশপাশের অন্তত এক হাজার ২০০ পরিবার।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর )সকালে ভাঙনের চিত্র সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গত ৪চার দিন ধরে এ বাঁধ ভাঙন শুরু হয়েছে।সেতুর সংযোগ বাঁধের ব্লকের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ধসে পড়ছে বড় বড় অংশ। এর ফলে ৯০০ মিটার দীর্ঘ বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার জায়গার ব্লক ভেঙে গিয়ে অন্তত ৭০ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, ভাঙনের পরিমাণ ১০০ মিটারেরও বেশি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীতে পানি বাড়লেই প্রতি বছরই তিস্তার এই অংশে ভাঙন শুরু হয়। তবে এবারের ভাঙন অনেক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তারা দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।
স্থানীয় সাদেকুল,মামুন মিয়া বলছেন এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সেতুসহ বৃহৎ এলাকার যোগাযোগ ও হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।বাড়িঘর নদীর পাড়ে,এখন ভাঙনে সবকিছু নিয়ে যাবে।সেতু রক্ষা বাঁধে যদি দ্রুত কাজ না হয়, হাজারো মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের তীব্রতায় ব্লকের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে।দ্রুত মেরামতকাজ শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
রংপুরের গঙ্গাচড়া লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন, চেয়ারম্যান, আব্দল্লাহ আল হাদি, বলেন- বাঁধ ভাঙনের কারণে এলাকার শত শত পরিবার এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে গ্রামগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।
সেতুটি ঝুঁকির মুখে পড়ায় লালমনিরহাট-রংপুর-কুড়িগ্রাম-বগুড়া ও ঢাকা সাথে যানবাহনের চলাচল ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষক ও সাধারণ মানুষ বলছেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তিস্তার ভাঙনে হাজারো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। অথচ ই ভাঙনরোধে টেকসইও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। তারা দ্রুত সেতু রক্ষা বাঁধের মেরামত ও নদী প্রশিক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানান।
২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হওয়া দ্বিতীয় তিস্তা সেতুটি উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপনা। ৮৫০ মিটার দীর্ঘ এবং ৯.৬ মিটার প্রশস্ত এ সেতুতে রয়েছে ১৬টি পিলার ও ১৫টি স্প্যান। এটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকার সঙ্গে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের মহিপুরকে সড়কপথে যুক্ত করেছে।
রংপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী, মুহাম্মদ মুসা,বলেন-আমরা ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত অংশ চিহ্নিত করেছি।খুব দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু হবে।আশা করছি, সাময়িকভাবে হলেও ভাঙন ঠেকাতে পারব।
শুক্রবার পরিদশে আসেন প্রকৌশলী ড. লুৎফর রহমান, রিভার ট্রেনিং কনসালটেন্ট, এলজিইডি ঢাকা তিনি বলেন-তিস্তার স্রোত খুবই প্রবল। সেতু রক্ষার জন্য যে ব্লক বসানো হয়েছিল, সেগুলোর নিচের মাটি সরে যাওয়ায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নিলে সেতুর স্থায়িত্ব ও পাশের গ্রামগুলো বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে।তবে সেতুর ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই।
মন্তব্য (০)