
নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরের সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে দলিল লেখক ও অফিস সহকারির অনিয়ম আর দুর্নীতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত বুধবার (২০আগস্ট) একটি দলিলের চালান কপি দলিলের সঙ্গে জমা না দিয়ে গোপনে দলিল লেখক ও অফিস সহকারির যোগসাজসে পুনরায় তা ভেঙ্গে প্রায় ২০লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত করার পায়তারার বিষয়টি প্রকাশ পায়। বর্তমানে সেই বিষয়টি উপজেলাজুড়ে টক অব দ্যা সাবজেক্টে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার আবাদপুকুর বাজার এলাকার গোলাম রাব্বানী তার ৪৪শতাংশ জমির উপর নির্মাণ করা মার্কেট তিনজন ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন। যে বিক্রির প্রথম দলিলের মূল্য ৩কোটি ৬৩লাখ ৬৫হাজার টাকা, দ্বিতীয় দলিলের মূল্য ১ কোটি টাকা আর তৃতীয় দলিলের মূল্য ১ কোটি ৪৪লাখ ৩০হাজার টাকা। প্রথম দলিলে স্থাপনার মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫০লাখ টাকা, দ্বিতীয় দলিলে ৫০লাখ টাকা আর তৃতীয় দলিলে ১ কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি নিয়মানুসারে শতকরা ২ভাগ উৎসের কর ও ৬ভাগ স্থাপনা কর প্রদান করতে হয়। সেই দলিলের কর হিসাবে যে টাকা চালানের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ঘরে জমা হয় সেই চালান কপি দলিলের সঙ্গে যুক্ত করে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে দাখিল করে দলিল তিনটির কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। এই বিপুল অংকের টাকার দলিলের জমির শ্রেণির বাহানা দিয়ে পরবর্তিতে দলিল লেখক বেনাজুল ইসলাম ও অফিস সহকারি রবিউল ইসলামের যোগসাজসে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে করের বিপুল পরিমাণ অর্থ হরিলুট করার পায়তারা করা হয়।
কিন্তু পরবর্তিতে তাদের দু’জনের মাঝে সমঝোতা না হওয়ার কারণে অফিস সহকারি নিজে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের ভুলে চালান বেশি করা হয়েছে বাহানা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২১আগস্ট) দলিলের চালান ভেঙ্গে প্রায় ১৯লক্ষাধিক টাকা গ্রাহকের কাছে ফেরত দিলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এমন ঘটনায় উপজেলা জুড়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আর অফিসের সকল ব্যক্তিদের অনিয়ম আর দুর্নীতি নিয়ে তোলপারের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া চরম দুর্নীতিবাজ অফিস সহকারি রবিউল ইসলামের বিগত সময়ে বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে চাকরী হারানো, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে জেলার আত্রাই উপজেলা থেকে রাণীনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে যোগদানের পর থেকে প্রতিটি দলিলে লাগামহীন অনিয়ম আর দুর্নীতির নানা বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। এছাড়া প্রতিনিয়তই রাণীনগর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে জমি ক্রয় কিংবা বিক্রয় করতে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতারা দলিল লেখকদের গড়ে তোলা প্রতারণার ফাঁদে পরে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও অনিয়ম আর দুর্নীতির এই আখড়া নিয়ে সরকারের কোন দৃশ্যমান ভ’মিকা না থাকায় হতাশ উপজেলাবাসী।
দলিল লেখক বেনাজুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান দলিলে স্থাপনা উল্লেখ করে বর্গফুট হিসেবে গোলাম রাব্বানীর মাকের্ট বিক্রি হয়েছে। দলিলে করের চালান করার সময় চালানকারী ভ’ল হিসেব করে উপজেলার সোনালী ব্যাংক টিটিডিসি পিএলসি শাখায় দলিলের করের চালান করে। পরবর্তিতে বিষয়টি জানতে পারার পর সেই চালান ভেঙ্গে গ্রাহকদের কাছে ১৯লক্ষাধিক টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। চালান করে দলিল লেখার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার পরের দিন চালান ভাঙ্গা কতটুকু বৈধ সেই বিষয়ে তিনি বলেন যেহেতু ভুল হয়েছিলো তাই সেই চালান পুনরায় ভাঙ্গা হয়েছে। তবে এমন কাজ কতটুকু বৈধ সেই বিষয়ে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের সহকারি রবিউল ইসলামের কাছে দলিল করা বিষয়ে তথ্য নিতে গেলে প্রথমে নানা বাহানার সৃষ্টি করেন। এরপর অনেক বির্তকের পর তিনি জানান রাণীনগর উপজেলায় বিগত সময়ে এতো বিপুল পরিমাণ টাকার দলিল কখনোই হয়নি। তাই এই দলিল হওয়ার সময় তিনি তার পূর্বের অফিস আত্রাই উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের পরামর্শ গ্রহণ করেন। তার পরামর্শ অনুসারেই ওই দলিলের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
এরপর এই বিপুল টাকার দলিলের চালান ভাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান ওই বিক্রিত জমির শ্রেণি বিষয়ে ভুল করে কর প্রদানের চালান করা হয়। বিষয়টি জানার পর তিনি গোপনে নিজে চালানটি ব্যাংকে গিয়ে ভেঙ্গে গ্রাহকের প্রাপ্য অর্থ ফেরত দিয়ে তিনি বাকি টাকা সরকারের রাজস্ব ঘরে জমা দিয়েছেন। বিষয়টি সাব-রেজিস্ট্রারকে না জানিয়ে তিনি নিজে ব্যাংকে গিয়ে গোপনে চালান ভাঙ্গার বিষয়টি কতটুকু যৌক্তিক সেই বিষয়ে কোন উত্তর তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুক্তি আরা মুঠোফোনে জানান এই বিষয়টি তিনি জানার পর জেলা রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি অবগত করেছেন। জেলা রেজিস্ট্রারের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী বৃহস্পতিবার তিনি অফিসে গিয়ে করণীয় বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মন্তব্য (০)