• সমগ্র বাংলা

অবশেষে নতুন বই পেল সেই শিশুরা

  • সমগ্র বাংলা
  • ০৩ জানুয়ারী, ২০১৯ ০০:২২:৪৬

স্কুলে পুরাতন পোশাক পরে এসেই অবশেষে নতুন বই পেল একদিন আগে কেঁদে বাড়ি ফেরা সিলেটের সেই শিশুরা। মঙ্গলবার পুরাতন পোশাক পরে নতুন বই নিতে আসায় সিলেট নগরীর উমরশাহ তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে বই না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। প্রবল সমালোচনার মুখে বুধবার তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বই। পুরাতন পোশাক পরে আসায় নতুন বই না পাওয়া ওই শিক্ষার্থীদের নিয়ে মঙ্গলবার সিএনআই অনলাইনে 'নতুন পোশাক না থাকায় শিশুদের নতুন বই দিল না স্কুল!' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত স্কুল শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা ও খাদিজাকে সহায়তার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রকাশিত খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হলে অবশেষে বুধবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মুনতাকিন, সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রোমান মিয়া ও দিপীকা রায় স্কুল পরিদর্শন করেন। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই শিশুদের ডেকে নিয়ে তাদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়। সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, তিনি ছুটিতে থাকায় অন্যদের স্কুলে পাঠিয়েছেন। পুরনো পোশাক পরে স্কুলে আসায় নতুন বই না পাওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই যেন নতুন বই পায়, তা আগেই সংশ্লিষ্টদের বলে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মুনতাকিন বলেন, সব শিক্ষার্থী বই পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। বই না পাওয়া শিশু খাদিজার মা খায়রুন বলেন, সকালে স্কুল থেকে ডেকে নিয়ে তার মেয়েকে নতুন বই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের নতুন ড্রেস দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। গোলাম মোস্তফার মা ফরিদা তার ছেলেকে বই দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। তারা স্কুল সংলগ্ন তেররতন বস্তিতে বসবাস করেন। সরজমিনে জানা যায়, খাদিজা ও গোলাম মোস্তফা সম্পর্কে মামা-ভাগনী। খাদিজার বাবা ছোট মিয়ার এক হাত নেই বলে তিনি স্বাভাবিক কাজ করতে পারেন না। অন্যদিকে মোস্তফার বাবা বদরুল ইসলাম পক্ষাঘাতগ্রস্ত। ফলে তাদের মায়েরা বাসা বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। খাদিজার মা খায়রুন জানান, তিনি নগরীর উপশহরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোয়ার্টারে দুই কর্মকর্তার বাসায় কাজ করেন। গোলাম মোস্তফার মা ফরিদাও এক ব্যাংক কর্মকর্তার বাসায় কাজ করেন। খাদিজা জানায়, সে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম হয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেছিল। তবে এবারে সে স্কুলের মেধাতালিকায় ১৫ নম্বরে স্থান পেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে। অন্যদিকে গোলাম মোস্তফা স্কুলের মেধা তালিকায় ৩৩ নম্বর হয়েছে। খাদিজা মা-বাবার একমাত্র সন্তান হলেও মোস্তফা পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই। মোস্তফার মা ফরিদা জানান, ছেলে পড়াশোনা করে বড় হয়ে সংসারের অভাব দূর করবে- সেই স্বপ্ন দেখেন তিনি। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বছরের প্রথম দিন বই উৎসবে সিলেট নগরীর উমরশাহ তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী পুরনো পোশাক পরে আসায় নতুন বই পায়নি। ওইদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রোকসানা খানম বলেন, 'নতুন ড্রেস পরে এসে বই নিয়ে যেতে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। তাই পুরনো ড্রেস পরে এলে বই দিচ্ছি না।' তবে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে ওই স্কুলের কিছু শিক্ষার্থীকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ আশপাশের বস্তিতে বসবাস করে; যাদের অভিভাবকদের সিংহভাগ দিনমজুর। গোলাম মোস্তফা ও খাদিজার ছাড়াও এদিন রিদান মাহমুদ ইমন, সুমাইয়াসহ বেশ কয়েকজন নতুন ড্রেস পরে না আসায় নতুন বই না পেয়েই চোখে জল নিয়ে বাড়ি ফেরে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo