• বিশেষ প্রতিবেদন

মা‌নিকগ‌ঞ্জে শীতকালীন সব‌জি চা‌ষে ব‌্যস্ত কৃষ‌কেরা

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১৫:১৯:৪৩

ছবিঃ সিএনআই

মা‌নিকগঞ্জ প্রতিনিধি: সবজি চাষে সুনাম রয়েছে রাজধানীর পাশের জেলা মানিকগঞ্জের। অনুকূল আবহাওয়া আর উত্তম পরিচর্যায় এখানকার সবজির ফলনও হয় ভালো। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় জেলার উৎপাদিত সবজিগুলোর চাহিদাও রয়েছে বেশ। সবমিলে ফুলকপি চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। এতে আগাম জাতের ফুলকপিসহ রবি মৌসুমের আবাদ দিন দিন বাড়ছে।

কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে মানিকগঞ্জের কৃষকরা। সব‌জির দাম ভাল থাকায় খেত থেকেই বিক্রি হচ্ছে এসব সব‌জি। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হচ্ছে। চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সব‌জির বাম্পার ফলনের সম্ববনা দেখছেন কৃষকরা। ফলন ভাল পাওয়ার পাশাপাশি দাম ভাল পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

জেলার বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে শীতকালীন আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, মূলা, করলা, পটল, লাল ও পালং শাক, শসাসহ বিভিন্ন জাতের সবজি। ভোর থেকে কৃষকেরা ফসলের ক্ষেতের পরিচর্য়ায় ব্যস্ত। এদিকে এর মধ্যে বাজারেও উঠতে শুরু করেছে কৃষ‌কের চাষ করা আগাম শীতকালীন সবজি।

মা‌নিকগঞ্জ জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, গত রবি মৌসুমে জেলায় ৯ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করেছিল কৃষকেরা। এ বছর সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৩৮২ হেক্টের জমি। 

স‌রেজ‌মি‌নে উপ‌জেলার ক‌য়েক‌টি ফস‌লের মাঠ ঘু‌রে দেখা গে‌ছে, ভোর থেকে সবজি ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা। কেউ ফুলকপি ক্ষেতে আগাছা কাটছে আবার কেউ করলা ক্ষেতে কীটনাশক দিচ্ছে। এ ছাড়াও যারা সব‌জি চা‌ষে পিছিয়ে পড়েছেন তারা জমি প্রস্তত, বীজ বপণে তোড়জোড় শুরু করেছেন।

কৃষকরা বলছেন, আগাম শীতকালীন সবজি চাষে পোকা মাকড়ের আক্রমণ, বৃষ্টিপাতসহ বিভিন্ন ঝুঁকি থাকে। তারপরও বাজারে ভালো দাম থাকায় লাভ হয় ভাল। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো দাম পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। জেলার চামারখাই গ্রামে কৃষক মজিবর রহমান ব‌লেন, এবার ১৮ বিঘা জমিতে শীতকালীন আগাম ফুলকপি আবাদ ক‌রে‌ছে সে।

আর বাকি ১২ বিঘা জমিতে মধ্যমকালীন ফুলকপির চারা রোপণের জন্য জমিও তৈরি করা ও চারাগুলোর প্রস্তুত করে‌ছে। সর্বমোট ৩০ বিঘা জ‌মি‌তে ফুলক‌পির আবাদ হ‌বে তার। এক সপ্তাহ পর থেকেই আগাম জাতের ফুলকপি ফলন তুলবে সে। এবারে ফুলকপি মৌসুমে ৫০ লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রির টার্গেট তার। আশা করছে অনুকূল আবহাওয়া আর পাইকারি বাজারে ফুলকপির দরদাম ভালো পেলে সব খরচ বাদে এ বছর তার ২৫\৩০ লাখ টাকার মত লাভ হবে।

জেলার ফুকুরহা‌টি আইরমারা গ্রা‌মের কৃষক কালা চান ব‌লেন, এ বছর ৭০ শতাংশ জ‌মি‌তে ফুল ক‌পির চাষ ক‌রে‌ছি। ১০ থে‌কে ১৫ দি‌নের ম‌ধ্যে ক‌পি বাজা‌রে বি‌ক্রি কর‌তে পার‌বো। বৃ‌ষ্টিপা‌তের কার‌নে এ বছর খরচ একটু বে‌শি হ‌য়ে‌ছে। তার‌পরেও সকল খরচ বা‌দে ক‌পি বি‌ক্রি ক‌রে ৮০ থে‌কে ৯০ হাজার টাকা লাভ হ‌বে।

কৃষক আবদুল হালিম বলেন, প্রতিবছরই সবজি আবাদ করি। এবছর ৫ বিঘা জমিতে নানা ধরনের সবজির চাষ করেছি। দুই বিঘা ফুলকপি, এক বিঘায় শসা আর বাকি দুই বিঘায় করলা ও মুলা চাষ করেছি। আগাম ফুলকপি ১০ থেকে ১২ দিন পর বিক্রি করতে পারব। আশা করছি এ বছরও সবজিতে লাভ হবে।

কৃষক বশির আহমেদ বলেন, গতবছর ১৬ বিঘা জমিতে আগাম ফুলকপি চাষ করতে খরচ হয়েছিল ৬-৭ লাখ টাকা। আর বিক্রি হয়েছিল ২৫ লাখ টাকা। তাতে খরচনবাদে বেশি লাভ হয়েছিল। এ জন্য এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করার টার্গেট আছে। ইতিমধ্যে ১২ বিঘা জমিতে আগাম ফুলকপি চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত আমার ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি বলেন, গেল টানা বৃষ্টিতে ফুলকপির চারার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে এবং ছত্রাকের সংক্রমণে পাতাগুলো ডেবে গিয়েছিল। পরে কৃষি অফিসের সহায়তায় এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। আগাম ফুলকপি আবাদ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কারণ আবহাওয়া খারাপ হলেই ফলন ভালো হয় না। আবার বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের বিষয় আছে। তবে আশা করছি এবার সম্পন্ন ফুলকপির ফলন ঘরে তুলতে পারলে ৩৫ লাখ টাকা আয় করতে পারব। 

জেলার হরগজ গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, এ বছর ফুলিকপি, লাউ, লাল শাক ও সিমের আবাদ করেছি ৬ বিঘা জমিতে। গত বছর ফুলকপিতে বেশ লাভ হয়েছিল। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। পাইকারি বাজারের লালশাক, লাউ ও সিম বিক্রি করেছি ৪০ হাজার টাকার মত। এ বছরও জিনিসপত্রে দাম অনেক বেশি, আশা করছি বাজারদর ভালো থাকলে আগাম সবজি চাষে বেশ লাভ হবে।

মা‌নিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (খামারবাড়ি) উপ পরিচালক ড. বরীআহ নূর আহমেদ বলেন, গতবছর মানিকগঞ্জে ৯ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে নানা জাতের সবজি আবাদ করেছিল কৃষকেরা। তবে এ বছর আবাদি জমি পরিমাণ ১০ হেক্টর কমে ৯ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা আগাম জাতের সবজি আবাদ শুরু করেছে। কিছু সবজি স্থানীয় বাজারসহ পাইকারি বাজারেও বিক্রি শুরু হয়েছে।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo