• বিশেষ প্রতিবেদন

জাতীয় ফুল শাপলার আদলে ধানক্ষেত, নজর কাড়ছে মানুষের

  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • ০৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১৭:০৭:১৪

ছবিঃ সিএনআই

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে ধানক্ষেতে জাতীয় পতাকার পর সবুজ-বেগুনি ধানের চারা লাগিয়ে শাপলা ফুল ফুটিয়ে তাক লাগিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন বাকরের হাট এলাকার শিক্ষক আবু জাফর সাদিক। ধানের ক্ষেতে তোলা হয়েছে জাতীয় ফুল শাপলার রূপ। এলাকাবাসী ও পথচারীরা প্রতিদিন ধান গাছ দিয়ে তৈরি শাপলা ফুল দেখার জন্য আসছেন। আবু জাফর পেশায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হলেও কৃষি কাজে নেই পিছিয়ে। আবু জাফর ওই এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক এর ছেলে। নিজের ফসলের মাঠে সবুজ ও বেগুনি ধানের চারা দিয়ে তৈরি করেছেন জাতীয় ফুল শপলার প্রতিকৃতি। উপজেলার পৌরসভার বাকরের হাট এলাকার পূর্ব নাওডাঙ্গা গ্রামের উলিপুর থেকে বাকরের হাট যাওয়া আসার রাস্তার দক্ষিনে ৪৫ শতাংশ ধানের জমিতে চমৎকারভাবে বেগুনি ধান আর সবুজ ধানের মিশ্রণে জাতীয় ফুল শাপলার এক অনন্য শস্যচিত্রের কর্ম চোখে পড়ে। এর আগেও তিনি ধানক্ষেতে জাতীয় পতাকার আকৃতিতে দুই জাতের ধান রোপণ করে রীতিমতো আলোড়ন তৈরি করেছেন এলাকাজুড়ে। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এই বেগুনি ধানের চাষ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোকজন এখানে আসছেন। দেখছেন ধান ক্ষেত, তুলছেন ছবি, কেউবা আবার বীজ নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তার এ প্রতিভা দেখে সবাই অনেক খুশি। 

উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছেন, সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর বেগুনি রঙের ধানের আবাদ কয়েক বছর যাবত শুরু হয়েছে। এ ধানের নাম ‘পার্পল লিফ রাইস’। এই ধানগাছের পাতা ও বেগুনি। এর চালের রং বেগুনি। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধানের পরিচিতি বেগুনি রঙের ধান বা রঙিন ধান হিসেবে। দিন দিন কৃষকদের কাছে এই ধানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত মাঠজুড়ে সবুজ আর সবুজ। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় সবুজের মাঠে মাঝ খানেক জায়গা জুড়ে বেগুনি রঙ। সবুজ ধানের বেষ্টুনির কাছে গেলে মনে হয় বেগুনি রঙের জায়গাটুকু কোনো আগাছা বা বালাই আক্রান্ত ধান। কিন্তু না, এটি এমন একটি ধানের জাত, যার পাতা ও কান্ডের রং বেগুনি। এমন ভাবে তৈরি করেছেন যা দেখতে অনেকটাই পানির উপরে ভাসমান জাতীয় ফুল শাপলার মতো। ক্ষেতের সৌন্দর্য মন কেড়ে নিয়েছে এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীদের। ক্ষেত দেখতে আসা এলাকাবাসী মাসুদ মিয়া (২৭), আব্দুর রহমান (৫৫), মতিয়ার রহমান (৭২), তোফাজ্জল হক (৫৫) ও ফরিদ মিয়া (৫১) সহ আরও অনেকে বলেন, জমিতে ধানের চারা দিয়ে জাতীয় ফুল শাপলা ফুটিয়ে তুলে এলাকায় আলোরণ সৃষ্টি করেছেন শিক্ষক আবু জাফর। সে শুধু শিক্ষকতাই করেন না। পাশাপাশি কৃষি কাজও করেন। তার এরকম চিন্তা চেতনাকে আমাদেরকে মুগ্ধ করে তুলেছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক লোক শাপলা ফুল দেখতে আসেন। গত বছরও ধানের চারা দিয়ে জাতীয় পতাকা তৈরি করে ছিলেন। দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক লোক আসতেন। যা আমাদের এলাকার জন্য অনেক সুনাম। আমরা এলাকাবাসী তার এ ধরনের চিন্তা চেতনাকে সাধুবাদ জানাই। ধানক্ষেতে জাতীয় ফুল আকৃতির দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে স্কুল পড়ুয়া ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান ও বায়জিদ মিয়া ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলেন, ধানক্ষেতের চারপাশে সবুজ রঙের ধান আর মাঝখানে বেগুনি রঙের ধান রোপন করায় দেশের জাতীয় ফুলের আদলে হয়েছে। যা দেখতে খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে। তাই জমির কাছে গিয়ে একটি সেলফি তুলেছেন বলে জানান। আরও বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি এরকম কৃষিকাজ করা প্রয়োজন। পথচারী ও দর্শনার্থী আল বাশার বলেন, আমাদের জাতীয় ফুলের মতো দেখতে ধান ক্ষেতটি। যদিও জাতীয় ফুলের মতো কালার হয়নি। তারপরও অনেকটাই জাতীয় ফুলের মতো দেখতে খুবই ভালো লাগছে। ধানক্ষেতে এত সুন্দর শাপলা ফুল ফুটিয়ে উঠবে ভাবতেই অবাক লাগে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, আমার ব্লকে শিক্ষক আবু জাফর দুই ধরনের ধানের চারা দিয়ে জমিতে শাপলা ফুল ফুটিয়ে তুলেছেন। যা দেখতে অনেক সুন্দর। এছাড়া লাল ধানের মধ্যে অনেক পুষ্টি গুন রয়েছে। তাছাড়া ওই শিক্ষকের জমিতে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, ধান ক্ষেতের মধ্যে বেগুনি ধান দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার আদলে চাষ করেছেন যা মুগ্ধকর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি এই বেগুনি ধান পুষ্টিগুণ বেশি। তাই দিন দিন বেগুনি ধান চাষাবাদ হচ্ছে। যেসব চাষি বেগুনি ধানের আবাদ করেছেন তাদের সঙ্গে কৃষি বিভাগ নিয়মিত তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo