রংপুর ব্যুরোঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন চলাকালে রংপুরে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের শরীরে মিলেছে শর্টগানের গুলির চিহ্ন।এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তার। মৃত্যুর আড়াই মাস পর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
এদিকে আইনজীবী বলেন,‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রমাণ করে এটি ছিল হত্যাকাণ্ড।এছাড়া এ ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন আবু সাঈদের সহপাঠী ও শিক্ষকরা।শিক্ষকরা বলছেন আবু সাঈদের মুত্যুর ঘটনাটি আন্তজাতিক আদালতে বিচারের দাবি করছেন।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শর্টগানের গুলির আঘাতে আবু সাঈদের শরীরে অসংখ্য ছিদ্র তৈরি হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় আবু সাঈদের। এছাড়া তার মাথার মধ্যভাগ থেকে পশ্চাৎ ভাগ পর্যন্ত আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবী রোকনুজ্জামান বলেন,‘মাথার আঘাতের চিহ্ন সুস্পষ্ট। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় শর্টগানের গুলির ক্ষত। সবকিছু মিলে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রমাণ করে, এটি হত্যাকাণ্ড। ফলে এ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কেউ ছাড়া পাবে না।
এদিকে আবু সাঈদের সহপাঠীরা এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। তারা বলছেন,এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও দায়ী।আমাদের চাওয়া, সুষ্টু বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য এএসআই মো. আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। পরে তাদের রংপুর জেলা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি হেডকোর্টার্স আবু বক্কর সিদ্দিক ও পিবিআই পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন। দুটি মামলা এখনো তদন্ত করছে পিবিআই।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শওকত আলী জানান,আবু সাঈদ হত্যা মামলা আন্তজাতিক আদালতে বিচার কাজ করা হয়।যে ছেলে তার বুক পেতে দিয়ে জীবন দিলে তার বিচার সঠিক ভাবে হবে না এটা কখনো হতে দেওয়া যাবে না। এ ঘটনার সাথে জড়িত দোষিদের আইনের কাঠগড়ায় দাড় করাতে হবে।
তিনি বলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোঃ আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়িতদের (শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী) চিহ্নিতকরণ ও শাস্তির ধরণ নির্ধারণের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটিতে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ মিজানুর রহমান আহবায়ক, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আমির শরীফ সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোঃ ফেরদৌস রহমান সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন দমাতে খুব কাছে থেকে নিরস্ত্র আবু সাঈদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ।এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গত ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় একটি মামলা করে।পরবর্তীতে ১৮ আগস্ট ১০ পুলিশ সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী।
মন্তব্য ( ০)