![](../admin/upload/post/2024/06/bdc8be80bf.jpg)
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ: সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট হিট স্ট্রেসের প্রভাব কমানোর পাশাপাশি আমলকীর নির্যাস বা পাউডার খাদ্য ও পানির সাথে ব্যবহার করলে উচ্চ তাপমাত্রাতেও ব্রয়লার মুরগির খাবার গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ফেলোশিপের অর্থায়নে বাকৃবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান (বিএমবি) বিভাগের প্রভাষক মোঃ কামরুল হাসান কাজল ওই গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষণাটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. চয়ন গোস্বামী ও পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বাপন দে।
মোঃ কামরুল হাসান কাজল বলেন,ব্রয়লারে হিট স্ট্রেস কমানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন- সম্পূর্ণ খামারে এয়ার কন্ডিশন বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা অথবা কিছু সিনথেটিক ড্রাগস ব্যবহার করা। এসব পদ্ধতি আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের জন্য মোটেও লাভজনক নয়। তাই খামারিদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই সমাধান হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে হিট স্ট্রেসের প্রভাব কমানোর উপায় বের করা। এক্ষেত্রে আমলকী অত্যন্ত কার্যকরী।
ব্রয়লারে আমলকীর বিভিন্ন উপকারী দিক সম্পর্কে পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বাপন দে বলেন, ব্রয়লারের খাদ্যের সাথে আমলকীর নির্যাস বা পাউডার মিশিয়ে দিলে খাবার গ্রহণে কোন সমস্যা দেখা যায় না। কেননা আমলকীর পাউডার খাবারের স্বাদে কোন পরিবর্তন আনে না। তাছাড়া আমলকীর এই পাউডার ব্রয়লারে ক্ষুধাবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। তাই ব্রয়লার খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
আমলকীকে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক বাপন দে বলেন, আমলকী উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। অ্যান্টিবায়োটিকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকলেও আমলকীর পাউডার প্রাকৃতিক হওয়ায় কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এতে ফাইটোকেমিক্যাল থাকায় তীব্র গরমেও ব্রয়লারের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সহায়তা করে।
অধ্যাপক বাপন আরো বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে আমলকী ব্যবহারে মুরগির পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমে যায় এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়।
আমলকীর মাধ্যমে উচ্চ তাপমাত্রায় ব্রয়লারের বিরূপ প্রভাব কমানোর পদ্ধতি সম্পর্কে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. চয়ন গোস্বামী বলেন, দ্রুত বিপাকীয় হার, বৃদ্ধি ও ঘর্মগ্রন্থি না থাকায় ব্রয়লার হিট স্ট্রেসের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল। উচ্চ তাপমাত্রায় মুরগির দেহে প্রচুর পরিমাণ ফ্রি রেডিক্যাল ও রিয়েক্টিভ অক্সিজেন স্পিসিস (আরওএস) তৈরি হয় যা শরীলে আমিষ, লিপিড, ডিএনএ ও শক্তি উৎপাদন হ্রাস করে। কিন্তু আমলকী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ফ্রি রেডিক্যাল ও আরওএস এর ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে দেয় যা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
খামারিদের ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে অত্যন্ত সহজ উপায়ে আমলকীর পাউডার বানানো হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক চয়ন। তিনি বলেন, প্রথমে সংগৃহীত আমলকী পরিষ্কার করে হালকা ছায়াযুক্ত রোদে শুকানো হয়েছে। এরপর বীজগুলো ফেলে দিয়ে বাকি অংশ পুনরায় হালকা ছায়াযুক্ত রোদে শুকিয়ে পাউডার তৈরি করা হয়েছে।
ব্রয়লার মুরগিতে আমলকী পাউডার ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে অধ্যাপক চয়ন বলেন, এক কেজি আমলকী হতে ১৫০ থেকে ১৯০ গ্রাম পর্যন্ত পাউডার পাওয়া যায়। আমরা গবেষণায় ০ দশমিক ৫ শতাংশ ও এক শতাংশ ডোজ দুইটি ব্যবহার করেছি। তাই এক কেজি খাবারের সাথে ৫ অথবা ১০ গ্রাম পাউডার মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অসংখ্য উদ্ভিদ থাকলেও কেনো আমলকী ব্যবহার করা হলো প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক চয়ন বলেন, অন্যান্য উৎসের তুলনায় আমলকীতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকীতে ৫০০ থেকে ৭০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আমলকির উৎপাদন প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড ও দেশীয় প্রজাতির আমলকী পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমলকীর মতো বিভিন্ন ওষুধি গাছ লাগানোর প্রকল্পও হাতে নিয়েছে।
উচ্চ তাপমাত্রায় আমলকীর পাউডার ব্যবহারের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধি ও তাপমাত্রা জনিত মৃত্যু হ্রাস পেয়েছে। তবে ভবিষ্যতে ব্রয়লারে আমলকীর ব্যবহার নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক চয়ন বলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্রয়লারের কোন অঙ্গে আমলকী কেমন প্রভাব ফেলছে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে আমলকীর তুলনামূলক গবেষণা করে দেখতে হবে। ব্রয়লারে হিট স্ট্রেসের প্রভাব কমাতে আমলকীর ফাইটোকেমিক্যালগুলোর মধ্যে কোনটি সক্রিয় উপাদান হিসেবে কাজ করছে তা বের করতে হবে। এই তিনটি বিষয়ে ভালোভাবে গবেষণা করলে পোল্ট্রি খাতে আমলকী অভূতপূর্ব অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
মন্তব্য ( ০)