দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ সনাতনী ধর্মীয় সামাজিক রীতিনীতি মেনে মহা ধুমধামে দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুইদিন ব্যাপি বট পাকুড়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। গতকাল ১৬ জানুয়ারী মঙ্গলবার অধিবাসরে গাঁয়ে হলুদ শেষে আজ বুধবার ৪ পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে বিয়ের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা।মানব সন্তানের বিয়ের আদলে সারা হয়েছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। তবে গাছের বিয়ে বলে ধুমধাম আপ্যায়নে কোন কমতি রাখেননি আয়োজকরা। ঢাক ঢোল কাসরের সাথে সাহাইয়ের সুর এবং মুহুমুহু উলু সাথে শংঙ্খ ধ্বনিতে মঙ্গলবার শুরু হয়ে গায়ে হলুদ পর্ব। হলুদ বাটা, সুখ সাগর থেকে ঘটি ভরে জল আনা মন্দিরে পূজা অর্চনা সারেন নারীরা।
আনুষ্ঠানিকতার নানান পর্ব সেরে আজ বুধবার ভোর থেকে মানব সন্তানের আদলে ( অশ্বশ্থাদির বটেশ্বরী- পাটকুড় প্রতিষ্ঠা) বট-পাকুড় গাছের বিয়ের আসর বসানো হয়েছিল দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্রিতে দুর্গা মন্দির চত্তরে। পাকুড় বৃক্ষের (পাঁকড়েশ্বর) পিতা মাতা সাজেন দিলিপ ঘোষ ও দিপ্তী ঘোষ দম্পতি আর কনে বটবৃক্ষের ( বটেশ্বরী) মুন্না সাহা এবং পূর্নিমা সাহা দম্পতি। অতিথির মাঝে বিলি করা হয় আমন্ত্রণপত্র। দর্শক হিসেবে অংশ নেন অন্যান্য ধর্মের নানা বয়সি নারী পুরুষ। অন্যতম আয়োজক মহাদেব ঘোষ জানান, নিরামিশ খাবারে আপ্যায়িত করা হয়েছে কয়েকশত অতিথিকে।
অনুষ্ঠানে সনাতনী রীতিনীতির কোন কমতি করেনি আয়োজকরা। ছাপানো হাজার খানেক আমন্ত্রণপত্র বিলি বন্টন, তরন, সুদৃশ্য মঞ্চ তৈরি আলোর ঝলকানি সাজসজ্জার ছাড়াও বাহারি পোষাকে মড়ানো হয় বর পাকুড় বৃক্ষ এবং কনে বট বৃক্ষকে। মঙ্গলবার অধিবাসরে হলুদ কাপড়ে সারা হয় গাঁয়ে হলুদ অনুষ্ঠান। আজ বুধবার বিয়েতে বর বধুকে সাজানো হয়েছিল রেশমি শাড়ী ধুতির সাথে টাপড় পরিয়ে।
সাথে নানান পদের ফুল ফল এবং তাল খেজুর নারকেল কাঁচা বাঁশ তৈরি যজ্ঞকুন্ড ছাদনতোলা। নাচের তালে আনন্দ উল্লাস হৈচৈ বিয়ের অনুষ্ঠান মাতিয়ে তুলেন ভক্ত অনুরাগিরা। পুরোহিত বিজয় কৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, মানব কল্যাণকর গাছপালার প্রতি ভালবাসা থেকে ভক্ত অনুরাগিদের দান দক্ষিনায় ওই বিয়ের আয়োজন স্হানীয় বাসিন্দাদের। ধর্মীয় মতে দেবতা বন্সপতি লক্ষ্মি এবং বিষ্ণুর অবস্হান বটবৃক্ষে বলে তার পূজা করেন অনুসারিরা।
এছাড়াও অমঙ্গল দুর করার পাশাপাশি বৃক্ষ নিধনে নিরুৎসাহিত করতে ওই আয়োজন বলে জানান আয়োকরা। জীবিত কালে সুফল এবং পরলৌকিক শান্তি লাভ ঘটবে বলে বিশ্বাস করেন পুরোহিতরা। স্কুল শিক্ষক তরুন ঘোষ জানান, লোকমুখে প্রচলিত গাছের মোড়ক ঠেকাতে সম্রাট আকবরের শাসনামলে প্রথম বারের মত হিন্দু পুরোহিতদের দিয়ে বট পাকুড়ের বিয়ের সূচনা করা হয়েছিলো।
এতে বন্দ হয়েছিল গাছের মোড়ক। বর পাকুড় বৃক্ষের পিতারূপে দিলিপ ঘোষ জানান, ৮ মাস বয়সি পাকুড় বৃক্ষে গা ঘেষে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া বয়সে কিছুটা কম বয়সি বট বৃক্ষের বিয়ের আয়োজনে খুশি হয়েছেন তারা। দিনাজপুরে বটপাকুড়ের বিয়ের ওই আয়োজন প্রথম নয়। এর আগেও ঘটা করে অনুষ্ঠান করেছেন ভক্ত অনুরাগিরা। জমজ (যুগল) ভাবে বট পাকুড় গাছ বেড়ে উঠলে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ের আয়োজন করে থাকেন সনাতন ধর্মালম্বীদের অনেকেই।
মন্তব্য ( ০)