গাজীপুর প্রতিনিধি: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাধারণত ছাত্রী হলে সবুজ জামা এবং সাদা পায়জামা, ছাত্র হলে সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু প্যান্ট পরে স্কুলে যায়। কিন্তু গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রায়েদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গোলাপি রঙের পোশাক স্কুলের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের অকৃষ্ট করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস। বিক রয়েছে। কাপাসিয়ার ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই রঙিন পোশাক নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন রঙিন পোশাকে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। গত ১১ নভেম্বর জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরিবর্তনের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। শুরুতে ৮টি বিদ্যালয়ের পোশাক পরিবর্তন করা হলেও পর্যায়ক্রমে উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এই পোশাক বাধ্যতামূলক করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা অফিস। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাপাসিয়া উপজেলায় ১৭৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে এত দিন ছাত্রীদের জন্য সবুজ জামা এবং সাদা পায়জামা, ছাত্রদের জন্য সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু প্যান্ট নির্ধারিত ছিল।
গ্রামের শিক্ষার্থীরা এই রঙের জামা খুব একটা পছন্দ করতো না। অনেকে ড্রেস কোড অমান্য করে স্কুলে যেত। অন্যদিকে উপজেলার কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোর ড্রেস কোড বৈচিত্রময় এবং রঙিন। ফলে নতুন শিক্ষার্থীরা কিন্ডার গার্টেনের প্রতি আকৃষ্ট হতো। ইত্যাদি কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রঙিন পোশাকের পরিকল্পনা করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। পরে বিষয়টি অনুমোদন করেন সিমিন হোসেন রিমি। নতুন পোশাক হিসেবে ছেলেদের জন্য গোলাপী চেক শার্ট, খয়েরি রঙের প্যান্ট, সঙ্গে একই রঙের টাই এবং মেয়েদের জন্য গোলাপী ও সাদা চেক জামার সঙ্গে খয়েরি রঙের টাই ও সাদা পায়জামা নির্ধারণ করা হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলার রায়েদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়েদ পূর্বপাড়া, বেলাশী, বাগেরহাট, খিরাটি, গাগটিয়া, কুশদি ও হরিমঞ্জুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেসে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরেজমিনে রায়েদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের মাঠে গোলাপী রঙের পোশাকে খেলাধুলা করছে শিক্ষার্থীরা। তারা এমন রঙিন পোশাকে আনন্দিত। বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামিয়া ইসলাম কনা বলেন, ‘নতুন স্কুল ড্রেস খুব ভালো লাগছে!’সামিয়ার মতো আনন্দিত একই শ্রেণির আদিবা আক্তার। ‘আমার মতো সবাই নতুন ধরনের স্কুল ড্রেস পড়ে স্কুলে আসছে।
সবাই এতে খুশি’ বলেন আদিবা। রায়েদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল্লাহ জানান, অনেক শিক্ষার্থী আগে স্কুলে অনুপস্থিত থাকতো। কিন্তু নতুন পোশাক পরে এখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই স্কুলে আসছে। শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে ক্লাস করছে। কাপাসিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমিতা ইসলাম বলেন, আমি কাপাসিয়ার আগে কালিয়াকৈর উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছি। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল পোশাকগুলো পরিবর্তন করার। কিন্তু তখন হয়ে ওঠেনি। শুরুতে ৮টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পোশাক পরিবর্তন করেছি। পর্যায়ক্রমে সবগুলোতে করা হবে।
আশাকরি ২০২৪ সালের শুরুতেই উপজেলার সবগুলো বিদ্যালয়ে এই পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। রমিতা ইসলাম আরো বলেন, শিশুরা রং পছন্দ করে। রঙিন জিনিসপত্রের দিকে সবসময় শিশুদের আগ্রহ থাকে। তাই আমরা চিন্তা করেছি শিশুদের পোশাকটি আগের চেয়ে একটু আকর্ষণীয় হলে তাদের ভালো লাগবে এবং তারা পড়াশোনায় আরো বেশি মনোযোগী হবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা ঘোষণা দিয়েছি জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পোশাক রঙিন ও আকর্ষণীয় করার।
নতুন পোশাক শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তৈরি করে নেবে। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, স্কুলে নতুন আকর্ষণীয় পোশাকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আমরা কাউকে চাপ সৃষ্টি করছি না। কারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সব শ্রেণী পেশার মানুষের ছেলেমেয়রা লেখাপড়া করে। অভিভাবকেরা সাধ্যমত সময়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলের পোশাক তৈরি করে নেবেন।
মন্তব্য ( ০)