• উদ্যোক্তা খবর

শেরপুরে ফোনেই মিলছে করোনা রোগীদের বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা

  • উদ্যোক্তা খবর
  • ০৫ আগস্ট, ২০২১ ১১:৩৯:৩৬

ছবিঃ সিএনআই

শেরপুর প্রতিনিধিঃ  শেরপুরে দিন দিন করোনা পরিস্থিতি অবনতির দিকে ধাবিত হওয়ায় প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিভাগ যখন হিমসিম খাচ্ছে, ঠিক তখন স্থানীয় উদ্যমী যুবকদের গড়া ৩ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান করোনা রোগীদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। ফোন দিলেও পাওয়া যাচ্ছে ওই জরুরি সেবা। এতে ভুক্তভোগী পরিবারে ফিরে আসছে স্বস্তি। ফলে ইতোমধ্যে ওই কর্মসূচি জেলায় বেশ প্রশংসিত হচ্ছে।

জানা যায়, শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় সর্বমোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৪৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬৭ জন। আর এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৮ জন। বর্তমানে জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রাšত রোগী রয়েছেন ৭৪০ জন। এর মধ্যে শেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১০২ জন। বাকিরা বাসায় আইসোলেশনে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু এরপরও শহরের বাসাবাড়িসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বাড়ি বাড়ি বিরাজ করছে সর্দি- জ্বরসহ করোনা উপসর্গ।

তাদের কিছু অংশ পরীক্ষার জন্য বা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলেও অনেকেই আবার হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতেই সাধারণ চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে দিন দিন সংক্রমণও বাড়ছে। আর ওই অবস্থায় বাসায় করোনা উপসর্গে আক্রান্ত হওয়া বা করোনা রোগীদের বিভিন্ন সময়ই জরুরি অক্সিজেনের প্রয়োজন হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে তা সামাল দেওয়া অনেকটাই কঠিন ছিল। আর সে পরিস্থিতি সামাল দিতে বা বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা নিশ্চিত করতে হাত বাড়ায় শেরপুর ইমার্জেন্সি অক্সিজেন টিম, ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস শেরপুর ও জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জরুরি অক্সিজেন সেবা নামে স্থানীয় ৩টি সংগঠন। ওই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা ২৪ ঘন্টা বাড়িতে বাড়িতে জরুরি ওই অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করছে। ওইসব সংগঠনের কর্মীরা ঈদুল আজহার দিনেও রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করেছেন।

সংগঠনগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ শ্বাসকষ্টসহ করোনা রোগীদের মধ্যে যারা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন তাদের জরুরি মুহূর্তে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিতে তাদের নিজ নিজ সংগঠনের নির্ধারিত হট লাইন নাম্বার রয়েছে। সেগুলোতে ২৪ ঘন্টা ফোন দিয়ে রোগীর বর্তমান অবস্থার বিবরণ ও বাসার ঠিকানা দিলে সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী বাসায় গিয়ে অক্সিমিটার দিয়ে পালস মেপে দেখেন। পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজন হলে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়ে আসা হচ্ছে রোগীর বাসায়। এ উদ্যোগটির সাথে যুক্ত হয়েছেন বেশ কিছু চিকিৎসকও। তারা স্বেচ্ছাসেবকদের সবসময় পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।

শেরপুর ইমার্জেন্সি অক্সিজেন ব্যাংকের সমন্বয়ক সাংবাদিক এস এম জুবায়ের দ্বীপ জানান, গত ১৩ জুলাই আমরা প্রাথমিকভাবে ২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। আমাদের সংগঠনকে পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন ১ লক্ষ টাকা, ব্যবসায়ী আলহাজ্ব দুলাল উদ্দিন দেড় লক্ষ টাকা এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সোহাগ বেশ কিছু অক্সিমিটার দিয়েছেন। এখন আমরা ১৩টি সিলিন্ডার, ৮০টি পালস অক্সিমিটার, ও ২টা অক্সিজেন কনসেনট্রেটর দিয়ে সেবা দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ৪৭ জন শ্বাসকষ্ট ও করোনা আক্রান্ত রোগীকে সেবা দিয়েছি। ঈদুল আজহার দিনও আমরা ৭ জন রোগীকে সার্ভিস দিয়েছি।

ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস শেরপুরের সমন্বয়ক আল আমিন রাজু বলেন, আমরা গত ১১ জুলাই থেকে শেরপুরে ২৪ ঘন্টা ফ্রি অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ১১ জন ভলান্টিয়ার দিনরাত কাজ করছেন। আমাদের সংগ্রহে ১১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ৬টি অক্সিমিটার রয়েছে। যেগুলো দিয়ে আমরা এ পর্যন্ত ৩৪ জন রোগীকে জরুরি সেবা দিয়েছি। আর জেলা যুব রেড ক্রিসেন্টের যুব প্রধান ইউসূফ আলী রবিন জানান, জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগেও ২৪ ঘন্টা ইমার্জেন্সী সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে যুব টিম। এ বিষয়ে শেরপুর ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান বলেন, কিছু উদ্যমী তরুণ ও যুবকদের নেওয়া এ উদ্যোগটি অত্যন্ত সাহসী ও সময়োপযোগী। এরকম সাহসী উদ্যোগ হাতে নেওয়ায় তাদের স্বাগত ও ধন্যবাদ জানাই। আমরা সবসময় তাদের পাশে রয়েছি। একই কথা জানান নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ সদস্য সচিব, সিনিয়র সাংবাদিক হাকিম
বাবুল।

স্বেচ্ছাসেবীদের অক্সিজেন সেবা প্রসঙ্গে শেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. মোবারক হোসেন বলেন, করোনার এই মহামারীকালে স্বেচ্ছাসেবী বেশ কিছু সংগঠন জরুরি অক্সিজেন সেবা দিচ্ছে। এ সেবা বাসায় আইসোলেশনে থাকা করোনা রোগীদের জন্য বেশ কাজে দিচ্ছে। আমরা স্বেচ্ছাসেবীদের পরামর্শ দিচ্ছি কোন রোগীকে কতটুকু অক্সিজেন দিতে হবে আর কোন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। যা রোগীদের চিকিৎসায় সহায়ক হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে জেলা বিএমএ’র সভাপতি ডা. এমএ বারেক তোতা বলেন, কোভিড আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের সবসময় বাসায় বসে অক্সিজেন নেওয়া নিরাপদ নয়। কারণ তাদের অক্সিজেনের পাশাপাশি অন্যান্য কিছু চিকিৎসারও প্রয়োজন হয়। তবে গুরুতর রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পূর্ব প্রস্তুতির সময় অক্সিজেন দেওয়া যেতে পারে।

এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, তাদের ওই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। জেলা প্রশাসন সবসময় বিনামূল্যে অক্সিজেন সার্ভিস প্রদানকারীদের পাশে রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের পোশাক পরিবর্তন ও রাতে আলাদা থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তাদের আরও কিছু প্রয়োজন হলে সেগুলোরও ব্যবস্থা করা হবে। 

মন্তব্য ( ০)





  • company_logo