• সমগ্র বাংলা

নীলফামারীতে সার সংকটে বিপাকে কৃষক

  • সমগ্র বাংলা

ছবিঃ সিএনআই

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারীর কৃষকদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তীব্র সার সংকটের। সামনে বোরো মৌসুম, কিন্তু স্বস্তি নেই কৃষকের। জেলার জলঢাকা, ডোমার, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সারসংকটের খবর পাওয়া গিয়েছে। অনেক কৃষক সরকার বরাদ্দকৃত সার না পেয়ে খোলাবাজার থেকে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে দেশে সারের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কৃষকদের অভিযোগ, সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ী ও ডিলাররা সব ধরনের সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নীলফামারী জেলার ছয়টি উপজেলায় বর্তমানে বিএডিসির ১৩০ জন এবং বিসিআইসির ৭৪ জন অনুমোদিত সার পরিবেশক রয়েছেন। গত নভেম্বরে জেলায় ইউরিয়া সারের মোট চাহিদা ছিল ৮ হাজার ৬২ মেট্রিক টন, তবে বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ৩ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন। একই সময়ে টিএসপি সারের ১ হাজার ৯৭৬ মেট্রিক টনের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ এসেছে ১ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন। আর ড্যাপ সারের ৫ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টনের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে ৪ হাজার ২৩ মেট্রিক টন।

জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে বিসিআইসি অনুমোদিত সার পরিবেশক মেসার্স ময়েজ উদ্দিনের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সার সংগ্রহের জন্য কৃষকদের দীর্ঘ লাইন। এ সময় ওই ইউনিয়নের সিতারপাঠ গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, “জমিতে চাষের জন্যি তিন বস্তা সারের প্রয়োজন। সার নিতে আইসা মাত্র অর্ধেক বস্তা সার পাইলাম। ঠিকমতো সার না পাইলে চাষবাষ ক্যামনে করবো।“ 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারের মজুত না পেয়ে খোলাবাজার থেকে বেশি দামে সার কিনছেন কৃষকরা। সরকার ইউরিয়া সারের দাম নির্ধারন করেছে বস্তাপ্রতি ১৩৫০ টাকায় কিন্তু খোলাবাজারে একই সার বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা ১৫০০-১৬০০ টাকায়। একই অবস্থা টিএসপি ও ড্যাপ সারের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে। দোকানে টিএসপি সার চাইলে বস্তা প্রতি দাম চাওয়া হচ্ছে ১৬০০-১৭০০ টাকা। অথচ সরকার এই সারের দাম নির্ধারণ করেছে ১৩৫০টাকা। অর্থাৎ নির্ধারিত দাম থেকেও ৩০০-৪০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে । তাছাড়া একই পণ্যের দাম একেক জায়গায় একেক রকম  হওয়ায় বিভ্রান্তিতে পড়ছেন তারা। 

কৃষকরা কেমন দামে সার কিনছেন জানতে চাইলে জলঢাকার একজন কৃষক আব্দুল গফুর বলেন, “একে তো সার পাই না, খোলা বাজারত সার কিনির গেইলে প্রতি বস্তায় বেশি দাম চায় চারশ/পাঁচশ টাকা । এত দাম দিয়া আবাদ করা তো সম্ভব না। হামা আবাদ ক্যামন করি করমো।“

এ বিষয়ে সার ব্যবসায়ীরা বলেন, কৃষি বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে মিলে একটি সিন্ডিকেট এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। এতে আসল দোষীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে, আর ডিলার ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের ওপরই দোষ আসছে। 

সার ডিলার জামিদুল ইসলাম বলেন, “এখানে সিন্ডিকেট কিংবা অন্য ধরনের অনিয়ম থাকতে পারে। সাপ্লাই চেইনের তদারকি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা জরুরি। প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইন কিংবা ভোক্তা অধিকার আইন ব্যবহার করে সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে, যাতে কৃষকের হাতে সার পৌঁছায় সঠিক সময়ে এবং ন্যায্য দামে। শুধু সরবরাহ নিশ্চিত করলেই হবে না, দামের বিষয়টিও কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখতে হবে।“

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) নীলফামারীর জেলা সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, “চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় কৃষকদের প্রয়োজন অনুযায়ী সার সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।“ তবে বর্তমানে ইউরিয়া সারের কোনো সংকট নেই বলে দাবি করেন তিনি।

মন্তব্য (০)





  • company_logo