• জাতীয়

‎সিডরের ১৮ বছর: শুকায়নি ক্ষত, কাটেনি আতঙ্ক

  • জাতীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৮তম বার্ষিকী। ২০০৭ সালের এই দিনে উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানা এই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বহু এলাকা, কেড়ে নেয় হাজারো প্রাণ। সিডরের ১৮ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু বাগেরহাটের শরণখোলা–মোরেলগঞ্জের মানুষের চোখে আজও সেই রাতের আতঙ্ক একই রকম তাজা। ‘ঘূর্ণিঝড়’ শব্দটি শুনলেই তারা এখনো কেঁপে ওঠে। তার ওপর নতুন করে যোগ হয়েছে বেরিবাঁধ ধস, নদী ভাঙন আর প্রতিদিনের বেঁচে থাকার লড়াই। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটাই আকুতি—‘বাঁধ টেকসই না হলে আমরা কোথায় গিয়ে বাঁচব?

‎২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর। আধা ঘণ্টার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকা। বরগুনা জেলাতে প্রাণ হারায় ১ হাজার ৩৪৫ জন। ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে যায় জমির ফসল, গবাদি পশু।

‎আর বাগেরহাটে কেড়ে নেয় ৯০৮ জনের প্রাণ। শরণখোলা, মোরেলগঞ্জে তছনছ হয়ে যায় দেড় লাখেরও বেশি ঘরবাড়ি, রাস্তা, বাঁধ ও ফসল। সেই সময় থেকে উপকূলবাসীর একমাত্র দাবি একটি শক্তিশালী, টেকসই বেরিবাঁধ। ১৮ বছর পর সেই দাবি পূরণ হলেও এখন আবার সেই বাঁধই ভাঙনের মুখে।

‎ভুক্তভোগীরা জানান, ১৮ বছর পরও এই এলাকার বেড়িবাঁধগুলো নড়বড়েই রয়ে গেছে। মেরামতের নামে শুধু কোটি কোটি টাকাই খরচ হয়েছে। অনেক এলাকায় নির্মাণ করা হয়নি আশ্রয়কেন্দ্র। বরগুনা জেলার ১২ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ৬৭৩ টি সাইক্লোন শেল্টার।

‎ঝড়ের আভাস পেলেই নির্ঘুম রাত কাটে পটুয়াখালীবাসীর। তাদের দাবি, পর্যাপ্ত বেড়িবাঁধ এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমছে না।

‎শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ সাউথখালীর মো. দেলোয়ার হোসেন সেদিনের কথা বলতে গিয়েও থমকে যান। কথার ফাঁকে চোখ ভিজে ওঠে তার। তিনি বলেন, ‘সিডরের আগে সরকার কোনো সংকেত দেয়নি। আমরা ভাবছিলাম কিছু হবে না। তখন আমার ছেলে ছিল পাঁচ বছরের, মেয়ে চার মাসের। হঠাৎ এমন স্রোত এল—বাড়ির ভেতরেই পানি ঢুকে সব উলটপালট। পানির বেগে প্রথমে ছেলেটাকে নিয়ে গেল। তারপর মেয়েটাকেও মায়ের কোলে থেকে ছিনিয়ে নিলো। আমরা কত চেষ্টা করেছি, কিছুই করতে পারলাম না। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, ঘরবাড়ি কিছুই রইল না। সে দিনটা আজও ভুলতে পারিনি।

‎তিনি বলেন, রাতে ঘুমাই, আবার লাফ দিয়ে উঠে যাই—ওই দিনের কথা মনে পড়ে। মনে হয় আবার পানি আসবে। মোটামুটি একটু স্বাভাবিক হচ্ছিলাম, এর মাঝে গত ২৩ সালের ঘূর্ণিঝড় রেমাল আবার সবকিছু শেষ করে দেয়। এখন তারা বেরিবাঁধের ওপরে ছোট্ট একটা ঘর তুলে বাস করছেন। কিন্তু সেই বাঁধের অবস্থাও ভয়ংকর। বাঁধে বড় বড় ফাটল। সিমেন্ট ব্লক পড়ে গেছে নদীতে। দেলোয়ার বলেন, ‘আমরা চাই নদীকে ঠিকভাবে শাসন করা হোক। তাহলে পানির চাপ কমবে, ভাঙনও কমবে। আর যদি খাবার পানির ব্যবস্থা করে দেয় সরকার—তাহলে এখানে মানুষ থাকা সম্ভব।

‎সাউথখালী গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন, সিডরের রাতে আমার ঘরের টিন উড়ে গেছিল। আমরা গাছ ধরে বেঁচেছিলাম। এরপর রেমাল এসে আবার সব ভাসিয়ে দেয়। এত বছর ধরে যে ভাঙন দেখি, মনে হয় নদীটা আমাদের পিছু নিয়েছে। বাঁধটা ঠিকমতো থাকলে এত কষ্ট হতো না। রাতে শুতে গেলেই ভয় লাগে, আবার যেন পানি এসে সব নিয়ে না যায়।

‎বগি গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন, বাঁধের ফাটল দিনে দিনেই বড় হচ্ছে। আমরা নিজেরাই বালুর বস্তা ফেলে আটকানোর চেষ্টা করি। সরকার যদি আগে থেকেই নজর দিতো, এখন এই পরিস্থিতি হতো না। ঘূর্ণিঝড় এলেই মনে হয়—বাঁচব তো?

‎সাউথখালী গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন, শিশুরা স্কুলে মন বসাতে পারে না। ঝড়ের শব্দ বা আকাশ কালো হলেই তারা ভয় পায়। অভিভাবকরা অনেকেই বলেন, “বাঁধ ভাঙলে প্রথমেই আমাদের স্কুলটাই ডুবে যাবে।” তাই একটা টেকসই বেরিবাঁধ শুধু ঘরবাড়ি নয়, শিক্ষার ভবিষ্যতও বাঁচাবে।

‎১৯৮৫ থেকে ২০২৫ চার দশক ধরে উপকূলবাসীর জীবনে ঘূর্ণিঝড় মানেই আতঙ্ক। কিন্তু ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডর যে ক্ষত রেখে গেছে, তা ১৮ বছরেও শুকায়নি। ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। গাছ, ঘরবাড়ি, রাস্তা সব ভেসে যায় মুহূর্তে। সেই ভয়ংকর স্মৃতি এখনো মানুষের মনে পাথরের মতো চাপা হয়ে আছে। এর ওপর আবার বেরিবাঁধ ভাঙনের নতুন সমস্যা।

‎শরণখোলার বগী, গাবতলা, দক্ষিণখালী, আর মোরেলগঞ্জের আমতলা ও ফাসিয়াতলা এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে—বাঁধের লম্বা ফাটল, কোথাও ধস, কোথাও সরে গিয়ে নদীতে পড়েছে ব্লক। যে বাঁধ মানুষের জীবন বাঁচানোর কথা, সেটাই এখন আতঙ্কের আরেক নাম।

‎পরিবেশবিদরা বলছেন, উপকূলীয় এলাকায় সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় অল্প জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল আমিন এই মন্তব্য করেন।

‎বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বিষয়টা একটু খোলাসা করে বললেন। তার ভাষায়, শরণখোলার বেড়িবাঁধগুলো হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে নরম হয়ে ভেঙে পড়েছে, আর নদীভাঙন তো আছেই, এক জায়গায় নয়, বহু স্থানে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামতের জন্য ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। একটি প্যাকেজের কাজ মাঠে নেমেছে, আর বাকিগুলো ধাপে ধাপে শুরু হবে।

‎বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম সিডরে নিহত ব্যক্তিদের গণকবরগুলো সংরক্ষণের পাশাপাশি আরও আশ্রয়কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ নির্মাণে পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন।

মন্তব্য (০)





image

নির্বাচন ঘিরে মাঠে থাকবে ৯ দিনের বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী:...

নিউজ ডেস্ক : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গী...

image

নির্বাচিত সরকার ভোলার গ্যাস সমস্যার সমাধান করবে: শিল্প উপ...

নিউজ ডেস্কঃ শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদ...

image

‎বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সমর্থন ইউরোপীয় ইউনিয়নের

নিউজ ডেস্কঃ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশে চলমান গণতান্...

image

উন্নয়ন শুধু সড়ক আর বড় সেতু নয়, বড় মেগা প্রজেক্ট কেন্দ্রিক...

নিউজ ডেস্কঃ আগামী নির্বাচনের জন্য প্রতিদিন কাজ করছেন জানিয়ে ...

image

আ.লীগ ফেসবুকভিত্তিক প্রতিবাদী দলে পরিণত হয়েছে, মাঠে সাংগ...

নিউজ ডেস্কঃ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ব...

  • company_logo