• জাতীয়

‎শতবর্ষী রামমালা গ্রন্থাগারের দুষ্প্রাপ্য পুথিসমূহের ডিজিটাল সংরক্ষণ করা হবে

  • জাতীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্কঃ বাংলার শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অমূল্য ভাণ্ডার কুমিল্লার রামমালা গ্রন্থাগার। শতাধিক বছরের ইতিহাস নিয়ে এটি কেবল কুমিল্লা নয়, পুরো উপমহাদেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গবেষণার জন্য অনন্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এ গ্রন্থাগারের অমূল্য সংগ্রহকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রক্ষণাবেক্ষণ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

‎সম্প্রতি গ্রন্থাগারটি পরিদর্শনে এসে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘রামমালা গ্রন্থাগারের দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি ও বইপত্র নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। যদি এখনই ডিজিটাল সংরক্ষণ শুরু না করা হয়, তবে এই অমূল্য ইতিহাস হারিয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

‎তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত স্ক্যানিং ও ডিজিটাইজেশন শুরু করার সুপারিশ করব। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আলাদা ভবনে সংরক্ষণের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।’

‎ঐতিহাসিক ঈশ্বর পাঠশালা প্রাঙ্গণে ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রন্থাগার ১১৩ বছর ধরে কুমিল্লা অঞ্চলের শিক্ষা, গবেষণা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তৎকালীন শিক্ষানুরাগী, দানশীল, সমাজ জ্ঞানী এবং সাহিত্যপ্রেমীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান এখনও জ্ঞানচর্চার অন্যতম নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র।

‎রামমালা গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয় ১৯১২ সালে। সেসময় খ্যাতিমান দানবীর মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য তাঁর মাতা রামমালা দেবীর নামে শাকতলায় নিজ বাড়ির বৈঠকখানায় গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯১৪ সালে তাঁর পিতার নামে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় ঈশ্বর পাঠশালা এবং ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেবালয়। পরে ১৯৫০ সালে শিক্ষাবোর্ডের সামনে মহেশাঙ্গনে রামমালা গ্রন্থাগারটি স্থানান্তর করা হয়। ১৯৫৩ সালে নির্মিত হয় বর্তমান সুদৃশ্য ভবনটি।

‎বর্তমানে রামমালা গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার বই এবং ৮ হাজারের বেশি পুথি ও পাণ্ডুলিপি। যার মধ্যে সংস্কৃত ভাষার পাণ্ডুলিপি রয়েছে ৬ হাজারেরও বেশি। বাংলা, সংস্কৃত, ইংরেজি ও উর্দু ভাষার পুথি ছাড়াও আছে কয়েকশ বছরের পুরোনো তালপাতা, কলাপাতা, তুলট, কাগজ ও কাঠে লেখা পাণ্ডুলিপি, বিরল সাময়িকী, সংবাদপত্র, প্রবাসী ও ভারতবর্ষ মাসিকের পুরোনো কপি।

‎পাণ্ডুলিপিগুলোতে দর্শন, বেদ উপনিষদ, সংস্কৃত শাস্ত্র, সাহিত্য, লোক জীবন, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতিষ, নৃতত্ত্ব, সমাজ-সংস্কৃতি এবং আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।

‎রামমালা গ্রন্থাগার বর্তমানে মহেশ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ১৯১২ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে ২৭ জন দানশীল ব্যক্তি এ গ্রন্থাগারে পুথি দান করেছেন।

‎যা আঞ্চলিক জ্ঞান ঐতিহ্যের এক অনন্য উদাহরণ। গ্রন্থাগারের সঙ্গে থাকা ক্ষুদ্র জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে প্রাচীন মুদ্রা, মৃৎশিল্প, ভাস্কর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও আঞ্চলিকভাবে ব্যবহার্য ঐতিহাসিক তৈজসপত্র।

‎বিশিষ্টজনদের মতে, শতবর্ষের এ জ্ঞান ঐতিহ্য শুধু একটি বইঘর নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, সমাজ এবং শিক্ষার এক অমূল্য কেন্দ্র। ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে রামমালা গ্রন্থাগার উপমহাদেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও গবেষণার অন্যতম অগ্রণী কেন্দ্র হিসেবে স্থায়ী স্থান করে নেবে।

‎ঐতিহ্য কুমিল্লার সভাপতি ও সাহিত্যকর্মী জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বাসসকে বলেন, শতবর্ষী রামমালা গ্রন্থাগারকে আধুনিক জ্ঞান কেন্দ্রে রূপান্তর করতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি সমন্বয় এবং নিয়মিত সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা অপরিহার্য। ডিজিটাল তথ্য, ট্যাগিং এবং দর্শনার্থী বান্ধব ডিসপ্লে সিস্টেম তৈরি করা হলে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটক এবং গবেষকরা সুবিধা পাবেন। এটি এক আন্তর্জাতিক মানের হেরিটেজ নলেজ সেন্টার হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবে। 

‎আবৃত্তি সংগঠক কাজী মাহতাব সুমন বলেন, রামমালার সংগ্রহ উন্মুক্ত হলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির গবেষণায় নতুন আলো জ্বলবে। এটি শুধু কুমিল্লার নয়, দেশের জ্ঞান ঐতিহ্যের জন্যও মাইলফলক হবে। এই উদ্যোগ কেবল সংরক্ষণ নয়, জ্ঞানচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করবে।

‎কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবির বাসসকে বলেন, ‘রামমালা গ্রন্থাগার কুমিল্লার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের প্রাথমিক উৎস ভাণ্ডার। ডিজিটালাইজেশন হলে দেশ-বিদেশের গবেষকদের জন্য নতুন দরজা খুলবে। এটি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি গবেষণার ক্ষেত্রেও এক অমূল্য কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এ ধরনের বিরল সংগ্রহ এখন আন্তর্জাতিক গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

‎গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক কমল চক্রবর্তী জানান, এই গ্রন্থাগারে প্রায় ২৫ হাজার বই ও সাড়ে আট হাজারেরও বেশি পুথি ও পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে। যা এই উপমহাদেশে একটি অন্যতম প্রাচীন সংগ্রহশালা হিসেবে বিবেচিত। এ গ্রন্থাগারটি দীর্ঘদিন ধরে বৈজ্ঞানিক রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার না হওয়ায় অনেক বিরল দলিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। আর্দ্রতা, পোকামাকড়, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং অভিজ্ঞ রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমরা চাই, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই অমূল্য জ্ঞান ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হোক।

মন্তব্য (০)





image

‎বিলুপ্ত সংসদের ৩১টি গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর

নিউজ ডেস্কঃ বিলুপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩১টি গাড়ি জনপ্র...

image

‎সৌদি আরবে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণে কাজ করছে সরকার: ড. নে...

নিউজ ডেস্কঃ দক্ষ কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে সৌদি আরবের 'ভিশন-...

image

রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় গুলি করে এক ব্যক্তিকে হত্যা

নিউজ ডেস্কঃ রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় মামুন শিকদার (৩৯) নাম...

image

রোহিঙ্গাদের জন্যে আবারও চাল সহায়তা দক্ষিণ কোরিয়ার

নিউজ ডেস্কঃ দক্ষিণ কোরিয়া রোহিঙ্গাদের নতুন করে চাল সহায়তা দি...

image

হাইকোর্টে স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া ২১ বিচারপতির শপথ গ্রহণ

নিউজ ডেস্কঃ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী নিয়ো...

  • company_logo