• সমগ্র বাংলা

নওগাঁয় ভুয়া চার পুলিশ সদস্য ও গণঅধিকার নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় দুইজন গ্রেফতার

  • সমগ্র বাংলা

ছবিঃ সিএনআই

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁয় পুলিশ পরিচয়ে আসামি গ্রেফতার করতে যাওয়ার সময় এক নারীসহ ভুয়া চার পুলিশ সদস্য এবং গণ অধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় ভুয়া পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে দুইটি ডিএমপি ও ডিবি পুলিশে পোশাক, দুইটি হ্যান্ডকাপ, দুইটি ডেমো শর্টগান ও একটি ডেমো পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যলায়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার এসব তথ্য জানান।

এর আগে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভূয়া পুলিশ পরিচয়দানকারীদের শহরের জলিল চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া একইদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গণ অধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া উত্তরপাড়া এলাকা থেকে ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ভূয়া পুলিশ সদস্য পরিচয়ে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ঢাকার উত্তর ভাটারা এলাকার আবুল বাসার শরিফের স্ত্রী সাবরিনা (২৯), নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ পূর্বাচল এলাকার হাজী আহম্মেদের ছেলে সাইফুল ইসলাম জিন্নাত (৪৫), নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ কুলিয়াদি এলাকার গিয়াসউদ্দিনের ছেলে দ্বীন ইসলাম (৩৮) এবং ঢাকার রমনা থানার বড় মগবাজার এলাকার শুকুর শেখের ছেলে ফুল মিয়া (৪২)।  

গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নওগাঁ শহরের মাষ্টারপাড়া এলাকার মৃত নূর ইসলামের ছেলে আরিফ (২৯) এবং শহরের মাদার মোল্লা বলিরঘাট এলাকার এমদাদুল হকের ছেলে ফরহাদ হোসেন ওরফে শোভন (২৯)।

ভূয়া পুলিশ পরিচয়দানকারীদের গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জলিল চত্বর চেকপোস্টে বগুড়া থেকে রাজশাহী অভিমূখী একটি মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি করলে মাইক্রোবাসে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি ডেমো পিস্তল, দুইটি শর্টগান, দুইটি হ্যান্ডকাফ এবং ডিএমপি এবং ডিবি পুলিশের পোশাক পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা মান্দা থানার গোবিন্দপুর এলাকায় শুটিংয়ের জন্য যাচ্ছেন বলে পুলিশকে জানায়। কিন্তু তারা কোথায় থাকবেন, কী শুটিং করবেন এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেন না। পরবর্তীতে তাদের মোবাইল তল্লাশি করলে একটি জিডির কপি পাওয়া যায়। পুলিশ আবারও তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তখন তারা বলে তাদের কর্মচারী নওগাঁর মান্দা থানার গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ এবং ডকুমেন্টস আত্মসাৎ করে পালিয়ে এসেছেন। সোহেল রানাসহ তার বাবা-মা এর নামে তারা ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেছেন। সেই মামলার তদন্ত করার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই মামালায় সোহেল রানা এবং তার পিতামাতাকে পুলিশের পোশাক এবং শর্টগান নিয়ে অপহরণ করার উদ্দেশ্যে তার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে পুলিশ পরিচয়ে কোন অপকর্ম ও চাঁদাবাজি করছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের চারজনের নামে নওগাঁ সদর থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, নওগাঁ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে লাইভস্টক ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরত এক নারী স্টাফের কাছে গিয়ে দুই যুবক নিজেদেরকে গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে তারা ওই নারী স্টাফকে আওয়ামী-সমর্থক তকমা দিয়ে তার কাছে চাঁদা দাবি করেন। ওই নারী স্টাফ তার চাচাতো ভাইকে চাঁদা দাবির বিষয়টি জানায়। তার চাচাতো ভাই তখন গণ অধিকার পরিষদের পরিচয় দেওয়া নেতার মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবির বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চায়। তখন তারা সামনাসামনি দেখা করতে বলে। সামনাসামনি দেখা করলে গণঅধিকার পরিষদের পরিচয় দেওয়া ওই দুই নেতা জানায় ২০২২ সালে লিটন ব্রিজের নিচে চায়ের দোকানে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার আরিফের বাবাকে মারধরের ঘটনায় সে থানায় একটি মামলা দায়ের করবে। তাকে চাঁদা না দিলে সে মামলায় আসামি হিসেবে ওই নারী স্টাফের নাম সংযুক্ত করবে এবং তার চাকরির ক্ষতি করবে মর্মে তার কাছ থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার ওই টাকা দিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঠিকাদারির লাইসেন্স করবেন বলেও তাদেরকে জানায়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, তাদের মধ্যে আলোচনার এক পর্যায়ে তাদেরকে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। গতকাল চাঁদার ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য চন্ডিপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া উত্তরপাড়া এলাকায় গেলে ওই নারী স্টাফের চাচাতো ভাই তাদেরকে ১০ হাজার টাকা দেন। চাঁদার বাকি টাকা না পাওয়ায় তাদের মাঝে কথা কাটাকাটির শুরু হয়। বিষয়টি জনাতে পেরে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের সামনে ওই দুই যুবক চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করে। পুলিশ তখন তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ওই নারী স্টাফ তাদের নামে থানায় চাঁদাবাজির মামালা দায়ের করলে তাদেরকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা হোসেন, নওগাঁ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকীসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য (০)





  • company_logo