
নওগাঁ প্রতিনিধি : এক সময় দেশজুড়ে সুনাম ছিলো নওগাঁর ভলিবল দলের। ১৯৯৪-৯৫-৯৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় যুব ভলিবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো নওগাঁ ভলিবল দল। এরপর থেকে নানা কারণে ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ভলিবলের মাঠ থেকে হারিয়ে যায় নওগাঁর ভলিবল দল। আবার নতুন করে এই ভলিবলের খেলাকে নওগাঁর বুকে ফিরে আনার লক্ষ্যে শুরু হয়েছে জুলাই স্মৃতি ভলিবল টুর্ণামেন্ট। এমন টুর্ণামেন্ট অব্যাহত থাকলে বর্তমান প্রজন্ম ভলিবল খেলার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং আগামীর জন্য নওগাঁর তৃণমূল থেকে মেধাবী ভলিবল খেলোয়ার উঠে আসবে এমনটিই আশা করছেন আয়োজকরা।
সূতে জানা নব্বই দশক জুড়ে দেশব্যাপী নওগাঁর ভলিবল দলের সুনাম ছিলো। নব্বইদশকের শেষের দিকে এসে নানা অজানা কারণে ভলিবলের মাঠ থেকে হারিয়ে যায় নওগাঁর ভলিবল দল। এক সময়ের মাঠ কাঁপানো নওগাঁর ভলিবল খেলোয়াররা জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করতে বাধ্য হোন। নওগাঁর হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলাকে নতুন করে মাঠে ফিরিয়ে আনতে এবং যুব সমাজকে খেলামুখি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। ইতিমধ্যেই তিনি প্রথমবারের মতো জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট সম্পন্ন করে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় হারিয়ে যাওয়া এক সময়ের নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী ভলিবল খেলাকে নতুন করে মাঠে গড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গত পহেলা আগস্ট এই টুর্ণামেন্ট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে তা স্থগিত করা হয়। বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শহরের ঐতিহ্যবাহী নওযোয়ান মাঠে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে শুরু হয়েছে এই ভলিবল টুর্ণামেন্ট।
প্রধান অতিথি হিসেবে টুর্ণামেন্টের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। এসময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইবনুল আবেদীনসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সকল সদস্যবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও খেলাপ্রেমী দর্শকরা উপস্থিত ছিলেন। টুর্নামেন্টে ৫টি উপজেলা, দুইটি স্থানীয় ক্লাব ও ১টি বিজিবি দল অংশ গ্রহণ করছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর টুর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী খেলায় মান্দা উপজেলা ভলিবল দল ২-০ সেটে রাণীনগর উপজেলা ভলিবল দলকে হারিয়ে বিজয়ী হয়।
এসময় মাঠে খেলা দেখতে আসা দর্শক এমদাদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম টুটুলসহ অন্যরা জানান বহুবছর পর নওগাঁর মাঠে ভলিবল খেলা দেখে খুবই ভালো লাগছে। নওগাঁর মাঠ থেকে হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যবাহী খেলাকে নিয়মিত করে বর্তমান ও নতুন প্রজন্মকে এই ভলিবল খেলার প্রতি আগ্রহী করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এবং এমন আয়োজনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আয়োজকদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন দর্শকরা।
খেলতে আসা খেলোয়াররা জানান শীতের সময় বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন এলাকায় শখের বসে এই খেলাটি হয়ে থাকে। কিন্তু এক সময় এই খেলা নওগাঁর মুখকে উজ্জ্বল করেছিলো। কিন্তু পরবর্তি সময়ে নানা কারণে ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মাঠ থেকে হারিয়ে যায় এই খেলা। যেহেতু আবার নতুন করে এই খেলাকে মাঠে গড়ানো হয়েছে এমন ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত রাখা হয় আয়োজকদের কাছে এমনটিই দাবী তাদের।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে সুস্থ্য-সবল যুব সমাজের কোন বিকল্প নেই। দীর্ঘদিন পুষ্ঠপোষকতার অভাবে নওগাঁর ক্রীড়াঙ্গন ঝিমিয়ে পড়েছিলো। যুবকরা খেলা ছেড়ে মাদক ও মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। আগের মতো আর যুবক ও কিশোরদের খোলা মাঠে খেলাধুলায় মেতে উঠতে দেখা যায় না। নওগাঁর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোকে পুনরায় মাঠে ফেরানো এবং নওগাঁর হারিয়ে যাওয়া ক্রীড়াঙ্গনকে উজ্জীবিত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীর বাংলাদেশের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণের জন্য নওগাঁর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মেধাবী খেলোয়ারদের খুজে বের আনতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বহুবছর পর প্রথমবারের মতো জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপের আয়োজনের মাধ্যমে অনেকগুলো মেধাবী ফুটবল খেলোয়ারকে বের করে আনা হয়েছে। তেমনি ভাবে মেধাবী ভলিবল খেলোয়ারদের খুজে বের করে আনতে বহুবছর পর ভলিবল টুর্ণামেন্ট শুরু করা হয়েছে। নওগাঁর ক্রীড়াঙ্গনকে চাঙ্গা করে তুলতে ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগতায় নওগাঁর নেতৃত্ব প্রদানকারীদের বের করে আনতে আগামীতেও এই ধরণের আয়োজন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এই প্রধান কর্মকর্তা।
মন্তব্য (০)