• আন্তর্জাতিক

অস্ত্র ছাড়ার প্রশ্নে হিজবুল্লাহ মহাসচিবের ভাষণ কৌশলগত ‘সতর্কবার্তা’

  • আন্তর্জাতিক

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক : লেবাননে ‘আরবাঈন দিবসে’ দেওয়া হিজবুল্লাহ মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেমের সাম্প্রতিক ভাষণকে দেশটির রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা অঙ্গনে এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। অস্ত্র সমর্পণের জন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এটি ছিল প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে মেহর নিউজ।

ভাষণে নাঈম কাসেম বলেন, আগ্রাসন চলমান থাকাকালে প্রতিরোধ কখনো অস্ত্র সমর্পণ করবে না। প্রয়োজনে আমরা কারবালার যুদ্ধ লড়ব এবং আমরা নিশ্চিতভাবে জয়ী হব। হয় লেবানন ঐক্যবদ্ধভাবে টিকে থাকবে, নয়তো পরিস্থিতি এমন এক অস্থিরতার দিকে যাবে যার দায়ভার কেবল আপনাদেরকেই বহন করতে হবে।

তার এই বক্তব্য শুধু আবেগপ্রবণ স্লোগান নয়, বরং এক কৌশলগত সতর্কবার্তা। তিনি স্পষ্ট করে দেন—অস্ত্র ছাড়ার প্রশ্ন কেবল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। প্রতিরক্ষার বিকল্প পরিকল্পনা ছাড়া প্রতিরোধকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা মানে লেবাননের দুয়ার শত্রুর সামনে খুলে দেওয়া।

সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘জাতীয় অংশীদারিত্বের বিপরীতে পদক্ষেপ’

নাঈম কাসেম অভিযোগ করেন, সরকার মন্ত্রিসভার ঘোষণাপত্র ও প্রেসিডেন্টের শপথনামায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে। সেসব নথিতে জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল প্রণয়নের ওপর জোর দেওয়া হলেও সরকার হঠাৎ প্রতিরোধকে নিরস্ত্র করার দিকে ঝুঁকেছে। তার মতে, এটি সংস্কার নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ভারসাম্যকে বিপর্যস্ত করার উদ্যোগ।

তিনি সতর্ক করেন, এ সিদ্ধান্ত লেবাননকে গৃহকলহের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তবে তিনি যুদ্ধের হুমকি নয়, বরং ‘ফিতনার আশঙ্কা’র কথা বলেছেন—যার দায়ভার সরকারের ওপর বর্তাবে।

সেনাবাহিনীর সামনে দ্বিধা

সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সেনাবাহিনী বাধ্য হলেও প্রতিরোধবিরোধী পদক্ষেপ সেনাদের ভেতরেই বিভাজন ও সংকট ডেকে আনতে পারে। লেবাননের সাম্প্রদায়িক ভারসাম্যের কারণে এমন পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর জাতীয় বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে এবং দেশকে পূর্ণমাত্রার সংঘাতে ঠেলে দিতে পারে।

বিদেশি প্রভাব

হিজবুল্লাহর ভাষ্যমতে, এ প্রক্রিয়ায় বিদেশি হাত স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু আরব রাষ্ট্র রাজনৈতিক আবহ তৈরি করছে, আর ইসরাইল প্রকাশ্যে সরকারকে সমর্থন জানাচ্ছে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ইসরাইল কখনো তার সামরিক পরাজয় মেনে নেয়নি এবং প্রতিরোধকে দুর্বল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

হিজবুল্লাহর বার্তা

এই প্রেক্ষাপটে হিজবুল্লাহ দুটি বার্তা দিতে চেয়েছে— প্রতিরোধ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অস্ত্র রক্ষায় অটল, কোনো আপস নেই। আরেকটি হল, তারা অভ্যন্তরীণ সংঘাত এড়াতে চায় এবং সরকারের জন্য এখনো সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে।

নাঈম কাসেম জোর দিয়ে বলেন, প্রতিরোধ রাষ্ট্রের বিকল্প নয়, বরং রাষ্ট্রের সহযোগী ও অংশীদার। অস্ত্র অপসারণ মানে শুধু প্রতিরক্ষা দুর্বল করা নয়, বরং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকেই খালি করে দেওয়া।

কী হতে পারে সামনে?

তাইফ চুক্তি (১৯৮৯) সইয়ের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার চাপ দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সেই চাপ বেড়েছে। মাস শেষে সেনাবাহিনীকে পরিকল্পনা পেশ করতে হবে, আর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা আবার বৈরুত সফরে যাবেন।

নাঈম কাসেমের ভাষণে মূলত দুইটি পথের ইঙ্গিত রয়েছে—গৃহযুদ্ধ কিংবা জাতীয় সংলাপ। বলপ্রয়োগে নিরস্ত্রীকরণ হলে গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি প্রবল। আর সংলাপে ফিরলে লেবানন নতুন সংকট এড়াতে পারে। তার ‘কারবালা যুদ্ধ’ প্রসঙ্গ হুমকি নয়, বরং প্রতিরোধের আত্মত্যাগ ও দৃঢ়তার রূপক।

 

মন্তব্য (০)





image

পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক শর্তসাপেক্ষে সম্ভব, জানাল রাশিয়া

নিউজ ডেস্ক : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ...

image

দুর্ভিক্ষের পর তৃষ্ণা: গাজায় এবার পানিকে ‘অস্ত্র’ বানাল ই...

নিউজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনিদের দুর্ভিক্ষের কিনারায় ঠেলে দেওয়ার পর এবার গাজার...

image

অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধে ভারতের সংসদে ঐতিহাসিক বিল পাস

নিউজ ডেস্ক : ভারতের সংসদ অনলাইন জুয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে একটি গুরু...

image

জাপানে স্মার্টফোন ব্যবহারে দৈনিক সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার প্রস...

নিউজ ডেস্ক : অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝ...

image

সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন শাহবাজ, ট্রাম্পের স...

নিউজ ডেস্ক : আগামী সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন পাকিস্তানের প্র...

  • company_logo