
নজরুল ইসলাম রাজু, রংপুর ব্যুরোঃ রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে সৃষ্ট একটি গর্ত থেকে পুঁতে রাখা অবস্থায় দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।নিখোঁজের একদিন পর বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে পাইকান ইউনিয়নের একটি নির্জন স্থানে এ মর্মান্তিক ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।একই সঙ্গে হত্যার রহস্য উদঘাটনে চলছে নিবিড় তদন্ত।
পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বৃহস্পতিবার (৭আগস্ট)সকালে পাইকান এলাকার নুর মোহাম্মদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।শিশুদের মরদেহ উদ্ধার এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে এলাকার মানুষজন ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ ও শোকাহত।তারা দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
নিহত শিশু দু’জন হলো-জাকিরুল ইসলামের ছেলে মারুফ মিয়া (৬) এবং আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুর রহমান (৭)। তারা দুজনেই গঙ্গাচড়া উপজেলার নগরবন্দ বড়াইবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়,গত মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল থেকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় খেলার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় মারুফ ও রহমান। দিনের শেষ পর্যন্ত তারা আর ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে চারদিকে খোঁজখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু কোথাও তাদের খোঁজ না পেয়ে বিষয়টি স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়। পরদিন বুধবার দুপুরে বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে একটি বালুর গর্তে প্রথমে মারুফের মরদেহ দেখতে পান এলাকাবাসী। শিশুটির গলায় রশি প্যাঁচানো ছিল, যা দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় গঙ্গাচড়া মডেল থানার পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। পরে দীর্ঘ উদ্ধারকাজ শেষে একই গর্ত থেকে আব্দুর রহমানের মরদেহও উদ্ধার করা হয়। মরদেহ দুটি মাটিচাপা অবস্থায় পাওয়া যায়, যা থেকে পুলিশের ধারণা-দুজনকে হত্যা করে পরিকল্পিতভাবে গর্তে পুঁতে রাখা হয়েছিল।
ঘটনার পর নিহত আব্দুর রহমানের বাবা আব্দুর রশিদ বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুরো পাইকান এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিশু দুটির করুণ মৃত্যুর খবরে এলাকার প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি মুখে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন-কে বা কারা এমন নির্মম কাজ করলো? কেন দুই নিষ্পাপ শিশুকে এমন ভয়ানকভাবে হত্যা করা হলো?
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে যে গর্ত সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের জন্য বিপদের কারণ ছিল। এখন তা ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ডের স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বালু উত্তোলনের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের আরও কঠোর হতে হবে।
এদিকে নিহত দুই শিশুর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার বিচার দেখে যেতে চান শিশুদুটির স্বজনরা।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “এটি একটি নৃশংস ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। হত্যার পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল তা উদঘাটনে তদন্ত চলছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।”
মন্তব্য (০)